সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৬:১০ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে পদ্মা নদীর ইজারা বহির্ভূত এলাকা থেকে বালু সংগ্রহ, মজুদ ও বালু পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া নগরীর তালাইমারী এলাকায় পদ্মা নদীর প্রবাহ বন্ধ করে রাস্তা নির্মাণেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে প্রশাসন।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে রাজশাহী নগরীর তালাইমারি এলাকায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পরিচালিত একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত এই আদেশ জারি করেন।
এই নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণসহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা আদালত জানিয়েছেন। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালত চলার সময় বালু মজুদকারী ও নদীর বুকে সড়ক নির্মাণকারী কেউ উপস্থিত ছিলেন না।
অভিযোগে জানা গেছে, পদ্মা নদীর তালাইমারী এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের জন্য আবারো নদীর মধ্য দিয়েই রাস্তা নির্মাণের খবর পেয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান পুলিশসহ ঘটনাস্থলে যান। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন তালাইমারী এলাকায় নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ করে বালু পরিবহনের জন্য সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে।
এছাড়া কাজলা মৌজা এলাকা থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু সংগ্রহ করা হচ্ছে। নদী থেকে বালু সংগ্রহ করে তালাইমারী এলাকার সামনে নদী তীরে বালু মজুদ হচ্ছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহামুদুল হাসান জানান, নগরীর তালাইমারী ঘাট এলাকাটি রাজশাহী জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা দেয়া বালুমহাল এলাকা বহির্ভূত। জেলা প্রশাসন শুধুমাত্র ‘দিয়াড়খিদিরপুর’ ও ‘চরশ্যামপুর’ বালুমহাল ইজারা দিয়েছে।
কিন্তু এই দুটি বালুমহালের ইজারাদার ইজারাকৃত এলাকার ৬ কিলোমিটার বাইরের পদ্মার তালাইমারী এলাকা থেকে ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে বালু সংগ্রহ, মজুদ ও একই এলাকা দিয়ে বালু পরিবহনের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
মঙ্গলবার বিকেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পায়। ফলে তালাইমারী এলাকা দিয়ে বালু সংগ্রহ ও পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া বালু বহনের জন্য পদ্মার পানি প্রবাহ বন্ধ করে নদীর বুকে সড়ক নির্মাণেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। কেউ আইন অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে রাজশাহীর অন্য বালুমহালের ইজারাদাররা অভিযোগে বলেছেন, মেসার্স রজব আলী চলতি বছর রাজশাহীর ‘দিয়াড়খিদিরপুর’ ও ‘চরশ্যামপুর’ সরকারি বালুমহাল ইজারা নিয়েছেন। কিন্তু তিনি ইজারাকৃত বালুমহালের ৬ কিলোমিটার বাইরের এলাকা তালাইমারী ঘাট দিয়ে বালু উত্তোলনের চেষ্টা করছেন।
এর আগে গত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের দিকে সেখানে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন ও পদ্মার বুকে রাস্তা নির্মাণ কাজ করা হয়। তবে এই বিষয়ে অভিযোগ হলে ইজারা বহির্ভূত তালাইমারী ঘাট এলাকা দিয়ে সাময়িকভাবে বালু উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধ রাখা হয়।
এদিকে মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, নদীতে পানি কমে যাওয়ায় রাজশাহী নগরের তালাইমারী ঘাট থেকে খানিকটা দূরে পদ্মা নদীতে কয়েকটি চর জেগেছে। ওই চরের দক্ষিণে নদীর মূল ধারা প্রবাহিত। ওই চরে ড্রেজিং করে বালু মজুদ করা হচ্ছে। সেখান থেকে সরাসরি ট্রাকে করে বালু আনতেই নদী ভরাট করে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। নদীর বুকে রাস্তা তৈরি করতে সোমবার গভীর রাতে নদীর বাম তীর থেকে ইট ও কংক্রিটের বর্জ্য ফেলাসহ রাস্তা তৈরির কাজ চলছিল।
অন্যদিকে ইজারা বহির্ভূত এলাকা থেকে বালু সংগ্রহ, মজুদ ও পরিবহণের বিষয়ে মেসার্স রজব আলী জানান, হাইকোর্টে রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে ইজারাকৃত এলাকা থেকে বালু তুলে যে কোনো এলাকা দিয়ে পরিবহনের আদেশ দিয়েছে আদালত। সেই আদেশ বলে পদ্মার তালাইমারী এলাকা দিয়ে বালু পরিবহনের উদ্যোগ নিয়েছেন। আর বালু বহনের জন্য সড়ক করছেন। তিনি আইনবহির্ভূত কোনো কাজ করেননি।