শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:০৫ am
নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সীমানা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। কিন্তু তাতে বাগড়া দেন আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন। কারণ, সীমানা বাড়লে আয়েনের নির্বাচনী এলাকার অন্তত দুটি পৌরসভা সিটি করপোরেশনে ঢুকে পড়ত। এতে কর্তৃত্ব খর্ব হওয়ার আশঙ্কা ছিল তার। ফলে আয়েনের বিরোধিতার মুখে সে প্রক্রিয়া থমকে যায়। এ নিয়ে মেয়র লিটনের সঙ্গে টানাপোড়েন তৈরি হয় এমপি আয়েনের। তবে টানাপোড়েন একপাশে রেখে নিজের নির্বাচনী এলাকায় সভা-সমাবেশ করে লিটনের পক্ষে ভোট চাইছেন তিনি, যদিও তার এলাকা পড়েছে সিটি করপোরেশনের বাইরে।
শুধু সংসদ আয়েন উদ্দিন নন, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের অনেক ‘বিদ্রোহী’ নেতা মাঠে নেমেছেন লিটনের হয়ে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলছেন, জাতীয় নেতা শহীদ কামারুজ্জামানের ছেলে হিসেবে খায়রুজ্জামান লিটনকে স্নেহ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সঙ্গে লিটনদের পরিবারের সম্পর্ক বহু আগে থেকেই। কিন্তু এ সম্পর্ক মানতে পারেন না অনেকেই। এ কারণে তারা লিটনবিরোধী তৎপরতা চালান। এমন কি দলীয় এমপিদের অনেকেই লিটনকে মানতে চান না।
এর বাইরেও ১৪ দলের কোটায় নৌকা প্রতীক নিয়ে এমপি হওয়া রাজশাহী সদর আসনের এমপি ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশাও লিটনের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন। সভা-সমাবেশে লিটনের বিষোদগার করছেন। কিন্তু শেষমেশ তিনিও ভিড়েছেন লিটনের পাশে।
কয়েক মাস ‘অবাঞ্ছিত’ থাকার পর লিটন না ডাকলেও নৌকার পক্ষে মাঠে নেমেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার। ভোট চাইছেন লিটনের জন্য। সম্প্রতি আপত্তিকর ভিডিও ফাঁস হওয়ার পর বেকায়দায় পড়া ডাবলুকে নির্বাচনসংক্রান্ত কোনো কমিটি বা নীতি-নির্ধারণী ফোরামেও রাখা হয়নি। বরং তাকে দল থেকে বিদায় করতে মহানগর আওয়ামী লীগ নানা কর্মসূচি পালন করেছে। এরপর ডাবলু একঘরে হয়ে পড়েন। তবে বুধবার বিকালে হঠাৎ তিনি মেয়র লিটনের পক্ষে মাঠে নামেন। এ সময় সঙ্গে ছিলেন তার কিছু অনুসারী।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ভিডিও ফাঁস ইস্যুতে নিজের পদ হারানোর ঝুঁকিতে আছেন ডাবলু সরকার। এ অবস্থায় নিজের পদ রক্ষার জন্য কেন্দ্রের মন জোগাতেই লিটনের জন্য মাঠে নামলেন তিনি। আর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও মনোনয়ন পাওয়ার আশায় মাঠে নামলেন ফজলে হোসেন বাদশা। একই আশায় একই পথে হাঁটলেন আয়েন উদ্দিনও। গত বুধবার পবার নওহাটায় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে
সিটি নির্বাচন নিয়ে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আয়েন উদ্দিন। সভায় তিনি বলেন, ‘আসন্ন সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে জয়যুক্ত করার লক্ষ্যে বিশেষ করে পবার নেতাদের বিভিন্ন মহল্লায় নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ও আলোচনায় অংশ নিতে হবে। কারণ পবার বেশিরভাগ জনগণের আত্মীয়-স্বজন করপোরেশনের ভোটার। লিটনকে আবারও মেয়র নির্বাচিত করতে হবে।’
এদিকে সিটি নির্বাচনে আবার লিটন মনোনয়ন পাওয়ার পর নিজে থেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন বাদশা। নির্বাচন নিয়ে গত ২ মে রাজশাহী ১৪ দলের সভায় অংশ নিয়ে লিটনের পাশাপাশি বসেন বাদশা। এখন আগের দুই বছরে লিটনকে নিয়ে বাদশার করা সমালোচনাগুলোকে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ বলছেন ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা।
এতদিন ধরে লিটনের বিরোধিতা করা আসা নেতা ও এমপিদের ভোল পাল্টানোর বিষয়ে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জমান বলেন, ‘নিজেদের কর্মফলের কারণে গর্তে পড়ার ভয়ে তারা এখন পথ খুঁজছেন। দলের হাইকমান্ডের নজরে পড়তে কায়দা করে সিটি ভোটের মাঠে নেমেছেন তারা। এমপি আয়েন তো সিটির বাইরের লোক। অথচ তিনি নিজ এলাকায় লিটন ভাইয়ের প্রচারণা করে বেড়াচ্ছেন। এটি হাস্যকর। অতিভক্তি নীতিতে নেমেছেন আয়েন।’
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে ফজলে হোসেন বাদশা ও আয়েন উদ্দিনকে ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু তারা ফোন ধরেননি। তবে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগ নেতা ডাবলু সরকার। তিনি বলেন, ‘আমাকে কেউ না চাইলেও আমি নৌকার পক্ষে আছি। নৌকাকে বিজয়ী করতে কাজ শুরু করেছি।’
আয়েন উদ্দিন ও ডাবলু সরকারের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সতর্ক রয়েছে বলে জানিয়েছেন মহানগরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু। তিনি বলেন, ‘এতদিন তারা খায়রুজ্জামান লিটনের বিরোধিতা করে এলেন। এখন কেন তার জন্য মাঠে নামলেন, সেটা একটু চিন্তার বিষয়। এ জন্য আমরা তাদের ব্যাপারে সতর্ক আছি। তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আরও কিছুদিন পর্যবেক্ষণের পর তাদের ব্যাপারে মন্তব্য করা যাবে।’ সূত্র : আমাদের সময়