বৃহস্পতিবর, ২১ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৮:০৪ pm
ডেস্ক রির্পোট :
ঘূর্ণিঝড় মোখা আগামীকাল রোববার দুপুর নাগাদ বাংলাদেশের কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত যে গতিতে ঘূর্ণিঝড় মোখা এগোচ্ছে, তাতে রোববার দুপুর নাগাদ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল ও মিয়ানমারের উত্তর-উপকূল দিয়ে এটি অতিক্রম করতে পারে।
উপকূলে আঘাত হানার ৪-৬ ঘণ্টার মধ্যে মোখা শক্তি হারাবে। শুক্রবার বিকেলে ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ে বিশেষ ব্রিফিংয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের এ পরিচালক এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার কেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুদ্ধ। এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে, মোখার প্রভাবে দেশের সব উপকূলীয় এলাকা ১০ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের সম্মুখীন হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ।
শুক্রবার সকালে ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখা কক্সবাজার ও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ওপর দিয়ে আঘাত হানলেও বাংলাদেশের সব উপকূলীয় এলাকা জলোচ্ছ্বাসের সম্মুখীন হবে। ঘূর্ণিঝড়টি যাত্রাপথ ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ভৌগলিক অবস্থান ও আকৃতির কারণে এমনটি হবে। পোস্টে আরও বলা হয়, কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ১০ থেকে ১২ ফুট। বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে ৮ থেকে ১২ ফুট ও খুলনা বিভাগের জেলাগুলোতে ৭ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে এলাকা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় মোখা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সুপার সাইক্লোন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে, মোখা উপকূলে আঘাতের সময় বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ১৭৫ কিলোমিটার। মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, মোখার প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় শনিবার সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাস শুরু হতে পারে। তখন থেকে ওইসব এলাকায় এর প্রভাব শুরু হবে। বৃষ্টিপাতের সঙ্গে বইবে দমকা বাতাস। পরদিন রোববার উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তিনি আরও বলেন, মোখার গতি কমেছে। এটি আগে ঘণ্টায় ১৫ থেকে ১৬ কিলোমিটার বেগে এগোচ্ছিল।
কিন্তু এখন তা কমে, গড়ে আট থেকে দশ কিলোমিটার বেগে এগোচ্ছে। বর্তমানে এর গতি ঘণ্টায় ৯ কিলোমিটার। এ গতিবেগ থাকলে রোববার দুপুর নাগাদ দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল দিয়ে ও মিয়ানমারের উত্তর উপকূল দিয়ে মোখার অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে কক্সবাজার জেলা পুরোটাই এ মোখার আওতায় থাকবে। এখন পর্যন্ত ‘মোখা’ সুপার সাইক্লোন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে ‘মোখা’ সিডরের মতো আই ফরমেশন বা চোখাকৃতির দিকে এগোচ্ছে। উপকূলের দিকে এগিয়ে আসার গতি ঘণ্টায় আট থেকে দশ কিলোমিটারের মধ্যে। ঝুঁকিতে আছে চট্টগ্রাম বিভাগ।
এছাড়া রয়েছে সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও হাতিয়া। এদিকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার কেন্দ্রে বাতাসে সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠে যাচ্ছে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত, যা আরো বাড়বে। তাই সকল সমুদ্রবন্দরে দুই নম্বর সংকেত নামিয়ে তোলা হয়েছে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেতের মানে হচ্ছে বন্দর ঘূর্ণিঝড় কবলিত। তবে ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার মতো তেমন বিপজ্জনক সময় এখনো আসেনি। আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানিয়েছেন, মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় (১৩.৯ক্ক উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮.২ক্কপূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। এটি শুক্রবার দুপুর ১২ টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০০৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৬৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩০ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
এটি আরো উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩০ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৫০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাঁচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুদ্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ০২ (দুই) নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারী সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ০৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিদ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। ভারতের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মোখা গতিমুখ পরিবর্তন করে উত্তর-পূর্ব দিকে এগোচ্ছে।
রোববার দুপুরের দিকে এটি কক্সবাজার ও মিয়ানমারের কিয়াকপিউ বন্দরের মাঝ দিয়ে উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এ সময় ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠে যেতে পারে ১৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। ঘূর্ণিঝড় মোখা নামটি ইয়েমেনের দেওয়া। কফির জন্য বিখ্যাত স্থানীয় একটি বন্দরের নাম মোখা। কালক্রমে সেখানকার কফির নামকরণও করা হয়েছে মোখা। ইংরেজিতে শব্দটি গড়পযধ লেখা হলেও এর উচ্চারণ হচ্ছে গড়শযধ। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপ (বংপধঢ়) আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়ার ঘূর্ণিঝড়গুলোর নাম ঠিক করে।
এ ক্ষেত্রে এসকাপ সদস্যভূক্ত ১৩টি দেশের দেওয়ার নামের তালিকা থেকে পর্যাক্রমে এক একটি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়। বর্তমানে যে তালিকা রয়েছে সেখানে ১৬৯টি ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া আছে। এর মধ্যে মোখা নামটি ১৩ নম্বর। অর্থাৎ ওই তালিকা থেকে পরবর্তী ১৫৬ ঝড়ের নাম ঠিক করা হবে। সূত্র : এফএনএস