শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:৪৪ am
সাইদ সাজু : রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে হামলা ও মারপিটের ঘটনায় আহত ৪ জনের মধ্যে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের নাম আলতাব হোসেন (৫৮)। তিনি অবসরপ্রাপ্ত প্রাপ্ত সেনাবাহিনীর সদস্য ও গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাট পৌর এলাকার দূর্গাপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তারের পুত্র।
শনিবার (৬ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
রোববার বিকালে মৃতের লাশ ময়না তদন্ত শেষে নিজ বাড়িতে আনার পর সেখানে হৃদয় বিদাড়ক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে রাতে নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
এঘটনায় মৃত আলতাফ হোসেনের ভাতিজা ইসাহাক আলীর পুত্র হাসান আলীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাট পৌর এলাকার দূর্গাপুর গ্রামের মৃত সাত্তার আলীর পুত্র আলতাব হোসেন ও ইসাহাক আলীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিলো।
গত বুধবার সকালে কাঁকনহাট পৌর সভার মেয়র উভয় পক্ষকে নিয়ে পৌর কার্যালয়ে নিষ্পত্তির চেষ্টা করে ব্যার্থ হন।
পরে সবাই বাড়িতে চলে আসার পর দুপুরে ইসাহাক আলী তার পুত্র কন্যা স্ত্রীসহ ভাড়াটিয়াদের নিয়ে হাসুয়া ও লোহার রড়সহ দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আলতাব হোসেনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে আলতাব হোসেনকে হাসুয়া নিয়ে কুপাতে থাকে।
এসময় তাকে বাচানোর জন্য আলতাবে ২ পুত্র ও ১ ভাগ্নে এগিয়ে আসলে তাদেরকেও লোহার রড় ও হাসুয়া দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে আহত করা হয়। এসময় গ্রামবাসী এগিয়ে আসলে হামলা কারীরা পালিয়ে যায়।
এসময় গুরুতর রক্তাক্ত জখম অবস্থায় অবস্থায় ৪ জনকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এঘটনায় ওইদিনই নিহতের ছেলে সজীব হোসেন (২২) বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ২ জনের বিরুদ্ধে গোদাগাড়ী মডেল থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন।
গোদাগাড়ি থানায় দায়ের করা অভিযোগটি শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) মামলা হিসে্বে রেকর্ড করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন গোদাগাড়ি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন, মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে এসহাক আলী (৬০), তার স্ত্রী শাহানাজ বেগম (৫০), মেয়ে ইশরাত জাহান (৩০), আবুল হাসনাত (৩৫), আব্দুল হালিম (৩০)সহ অজ্ঞাত আরও ২ জন।
আহত অন্যরা হলেন, আলতাফ হোসেনের ছেলে আতিকুর হোসেন (৩২), আরেক ছেলে সজীব হোসেন (২২), ফজলুর রহমানের ছেলে সোহেল পারভেজ (২৮)সহ মোট ৪ জন। বর্তমানে দুই জন রামেকের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মামলার বাদী আলতাফ হোসেনের ছেলে সজীব হোসেন বলেন, তার বড় চাচা অন্যায়ভাবে তাদের জমি ভোগদখল করে আছে।
তিনি বলেন পৌরসভায় সেই জমির রায় আমাদের পক্ষে আসায় রাস্তায় বাবার উপর হামলা চালানো হয়। সেখান থেকে পালিয়ে বাড়িতে আসলে তারা বাড়িতে এসে তারা হামলা।
তিনি আরো বলেন, মামলার ১ নম্বর আসামি হাসান আলী আমার বাবার মাথায় এলোপাথারিভাবে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়েছে ।
তিনি বলেন বাবার মাথায় ৫০ টার বেশি সেলায় পড়েছিলো। দুই দিন আইসিইউতে মৃত্যু শয্যায় ছিলো। এরপর শনিবার বিকেলে মারা গেছে। আমরা আসামিদের ফাঁসি চাই।
এ বিষয়ে কাঁকনহাট পৌরসভার প্যানেল মেয়র আল মামুন বলেন, জমি নিয়ে তাদের ভাইদের বিরোধ দীর্ঘ দিনের।
কিন্তু তারা উভয়পক্ষই কেউ নিজেদের পক্ষে কোন কাগজপত্র দাখিল করতে পারে নি। একারণে কোন রায়ও দেয়া সম্ভব হয় নি। তবে দুই পক্ষই তার কাছে বিভিন্ন সময় সমাধানের জন্য এসেছেন।
এ বিষয়ে গোদাগাড়ি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল থেকে কিছু দেশীয় অস্ত্র জব্দ করা হয়েছিলো। এরপর আলতাফ হোসেনের ছেলে একটি মামলা দায়ের করেন।
তিনি বলেন মামলার পরপরই প্রধান আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। অন্য আসামিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তা/অ