শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:৪১ pm
ডেস্ক রির্পোট :
রেকর্ড তাপমাত্রায় পোড়ার অভিজ্ঞতা থেকে ঢাকা যখন ধাতস্ত হতে চাইছে, তখন উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রথম চিফ হিট অফিসার হিসেবে দায়িত্ব নিলেন বুশরা আফরিন।
কানাডায় গোবাল ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে লেখাপড়া করা বুশরা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের কন্যা। বাংলাদেশে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা শক্তি ফাউন্ডেশনে একজন নির্বাহী হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তার।
কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে ক্রমশ চরম রূপ নিতে থাকা আবহাওয়ায় কংক্রিটের নগরী ঢাকার মানুষকে তীব্র তাপ থেকে কীভাবে রক্ষা করবেন তিনি?
বিভিন্ন মিডিয়াকে বুশরা বললেন, চিফ হিট অফিসার হিসেবে শুরুতে তিনি মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করবেন।
“আমরা হিট মেসেজিং নিয়ে কাজ করব, সচেতন করব। কারণ সচেতনতা প্রতিরোধের প্রথম ধাপ। বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী নারী এবং যারা শারীরিকভাবে অসুস্থ মানুষ, তারা যেন নিরাপদে থাকে। এগুলো আমাদের এখানে মানুষ জানে না।”
চিফ হিট অফিসার কেমন পদ :
ঢাকার তাপমাত্রা কমানোর চেষ্টায় যৌথভাবে কাজ করার লক্ষ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অ্যাড্রিয়েন আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেজিলিয়েন্স সেন্টারের (আর্শট-রক) সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
ওই চুক্তির আওতায় দুই বছরে ঢাকায় ২ লাখ গাছ লাগানোর ঘোষণা দিয়েছেন উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।
বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এক অনুষ্ঠানে উত্তর সিটি এবং আর্শট-রক ফাউন্ডেশনের মধ্যে ওই চুক্তি হয়। সেখানেই বুশরা আফরিনকে উত্তর সিটির চিফ হিট অফিসার করার ঘোষণা আসে।
আর্শট-রক বিশ্বের বিভিন্ন শহরে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় তাদের কাজের অংশ হিসেবে চিফ হিট অফিসার নিয়োগ করে। তাদের প্রথম চিফ হিট অফিসার নিয়োগ পায় ২০২১ সালে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি, লস অ্যাঞ্জেলেস, চিলির সান্টিয়াগো, সিয়েরা লিওনের সান্টিয়াগো, গ্রিসের এথেন্স, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরে চিফ হিট অফিসার রয়েছে। সবশেষ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব পেলেন বুশরা আফরিন, যিনি এশিয়ার কোনো শহরের প্রথম চিফ হিট অফিসার।
তীব্র তাপপ্রবাহের ফলে সৃষ্ট সঙ্কট মোকাবেলা এবং নগরে ‘হিট আইল্যান্ডে’র প্রভাব কমানোর জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া এবং সেগুলোর বাস্তবায়ন করেন চিফ হিট অফিসার। কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংস্থা, ব্যক্তি, নাগরিক সমাজ, দাতাসংস্থাসহ সব পক্ষকে সম্পৃক্ত এবং সমন্বয় করার দায়িত্ব তার।
চিফ হিট অফিসারের আওতায় যেসব কাজ হবে, সেগুলোর অর্থায়ন করবে আর্শট-রক। এছাড়া চিফ হিট অফিসারের বেতনসহ সব খরচ তারাই দেবে।
কী করবেন বুশরা?
এ বছর এপ্রিল মাসে ২৬ দিন ছিল তাপপ্রবাহময়। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এপ্রিল মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬৬ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে এবার।
১৬ এপ্রিল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠে ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা গত ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
আর ১৭ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল ঈশ্বরদীতে, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
বুশরা আফরিন বলেন, আর্শক-রকের সঙ্গে কাজ করার মূল কারণ, এ সংস্থা বহু বছর ধরে নগরে তীব্র তাপপ্রবাহ নিয়ে কাজ করছে। সৃষ্ট সমস্যাগুলোর বৈজ্ঞানিক এবং কারিগরি সমাধান খুঁজে বের করে তার বাস্তবায়নে জোর দেয় তারা।
“তীব্র তাপপ্রবাহের মত একটা অদৃশ্য ঝুঁকির বিষয়ে মানুষকে জানাতে হয়। বিশ্বের অনেক দেশ মানুষকে এ বিষয়ে আগে থেকেই সাবধান করে। তাপপ্রবাহের মধ্যে বাইরে গেলে কী করতে হবে সে পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে বাংলাদেশে এটা নেই।”
চিফ হিট অফিসার হিসেবে শুরুতে সে কাজটিই করতে চান জানিয়ে তিনি বলেন, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে সৃষ্ট দুর্ভোগের প্রধান শিকার সাধারণ মানুষ। সেজন্য নীতি নির্ধারণী পর্যায়েও তাদের সম্পৃক্ত করা হবে।
“যারা তীব্র তাপপ্রবাহের শিকার কিন্তু নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে নেই তাদের কথা শুনতে হবে। বিশেষ করে নারীরা সবচেয়ে বেশি শিকার, তারা যেন এটা নিয়ে কথা বলে। তাদের কোথায় কোথায় সমস্যা হচ্ছে, নাগরিকরা কী চাচ্ছেনৃ।”
বুশরা জানান, চিফ হিট অফিসাররা সান্টিয়াগোতে কুলিং পেভমেন্ট, কুল রুফ, ফ্রিটাউনে ভবনের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছেন, কিছু শহর বনায়নসহ নানা উপায়ের প্রয়োগ করছেন।
এ ধরনের সমাধানগুলো খুঁজে বের করে বাংলাদেশের উপযোগী পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ করার পরিকল্পনার কথা তিনি জানালেন।
“আমাদের এখানে জায়গা কম, তাই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে মিনিয়েচার ফরেস্ট কীভাবে করা যায় সেটা চিন্তা করব। তীব্র তাপপ্রবাহের সমস্যা সমাধানে অনেক ধরনের সমাধান রয়েছে। সেগুলো আমাদের খুঁজে বের করে স্থানীয় বিষয়গুলোকে সামনে রেখে প্রয়োগ করতে হবে। কী করব, কীভাবে করব সেজন্য টাস্কফোর্স গঠন করা হবে।”
ঢাকার একটি স্কুলে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত লেখাপড়া করে কানাডায় উচ্চ মাধ্যমিক পড়েছেন বুশরা। পরে কুইন্স ইউনিভার্সিটিতে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন গোবাল ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে। এছাড়া ঘানার ইনস্টিটিউট অব লোকাল গভার্নমেন্টেও তিনি পড়ালেখা করেছেন।
ঢাকার তাপমাত্রা কমাতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রকৃতি নির্ভর সমাধানে জোর দিচ্ছেন উত্তর সিটির চিফ হিট অফিসার।
তিনি বলেন, “ডিএনসিসি এরইমধ্যে নেচার বেইজড সল্যুশন নিয়ে কিছু কাজ করছে। আমি নিশ্চিত, আরও অনেক সমাধান আছে। সেগুলো বের করতে হবে। নেচার বেইজড সল্যুশন সবদিক থেকে ভালো। তবে নেচার বেইজড, নাকি টেকনিক্যাল বেইজড সল্যুশনকে প্রাধান্য দেওয়া হবে সেটা আমরা ঠিক করব।”
তিনি জানান, নগরের তীব্র তাপপ্রবাহে সৃষ্ট সংকট মোকাবেলায় নেওয়া কর্মসূচি বাস্তবায়নের অর্থের জোগান দেবে আর্শট-রক। এতে উত্তর সিটিরও একটি অংশগ্রহণ থাকবে। সূত্র : নতুন সময়