শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:১৬ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক :
কখনো সাংবাদিক, কখনো পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার নিকট আত্নীয় আবার কখনো সরকারি দলীয় কোন প্রভাবশালী নেতার কাছের ছোট ভাই, এভাবেই গুলশান বনানীতে তিনি গড়ে তোলেছেন প্রতারণার সিন্ডিকেট। তার প্রতারণার খপ্পরে পড়ে ইতোমধ্যে লাখ লাখ টাকা খুইয়েছেন কিছু ব্যবসায়ী। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি কর্মকর্তাকে পত্রিকায় খবর প্রকাশের হুমকি দিয়েও হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক লাখ টাকা। অভিজাত এলাকা হিসেবে খ্যাত গুলশান বনানীর এই প্রতারকের নাম আবু জাফর। থাকেন রাজধানীর বাড্ডা এলাকাতে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বিশেষ কৌশলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলার পর প্রশাসনসহ বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে কৌশলে টাকা হাতিয়ে নিয়ে সটকে পড়ে। এভাবে পুরো গুলশান বনানী প্রতারণা করে বেড়াচ্ছেন তিনি। অতিসম্প্রতি গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারের নাম ভাঙ্গিয়ে লাখ টাকা হাতিয়েও নিয়েছেন।
গুলশান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিএম ফরমান আলী বলেন, কোন ভুক্তভোগী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়াও পুলিশ কর্মকর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতারণার বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গুলশান বনানী কেন্দ্রিক গড়ে উঠা স্পা সেন্টারগুলোতে প্রয়শ যাতায়াত এ প্রতারকের। নির্দিষ্ট ব্যবসায়ীকে টার্গেট করে ফাঁদ পাতে প্রতারণার। সেখানে ব্যবসায়ীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন কর্মকর্তার নাম বলে হুমকি দেয়। ব্যবসা বন্ধ হবার ভয়ে অনেকে টাকাও দেয়। ভুক্তভোগীরা জানায়, কখনো সে নিউজ ২৪, চ্যানেল ২৪ এর সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেয়। আবার কখনো পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কোন কর্মকর্তার নিকট আত্নীয় বলে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক করে। এরপর তাকে নির্ভয়ে ব্যবসা চালানোর আশ্বাস দিয়ে হাতিয়ে নেয় টাকা। পরবর্তীতে পুলিশ বা অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান পরিচালনা করলে সেই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে ম্যানেজের নাম করেও টাকা নেয়। এরপর কৌশলে সটকে পড়ে। এভাবে স্পা, রেস্ট হাউজ ও গেষ্ট হাউজে নিয়মিত প্রতারণা করে আসছেন। আবার কোন কোন ব্যবসায়ী টাকা দিতে না চাইলে তাকে একের পর এক হুমকি দিতে থাকে।
ভুক্তভোগীরা জানান, স্পা ব্যবসা নিয়ে সমাজে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে এ জায়গা থেকে তার বিরুদ্ধে কোন প্রকার আইনগত ব্যবস্থা নেননি। তবে তার বেপরোয়া আচরণের কারণে তার বিরুদ্ধে পুলিশ কমিশনার এবং গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনারের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে যাচ্ছেন অনেকে।
গুলশানের স্পা সেন্টারের মালিক ভুক্তভোগী এক নারী ব্যবসায়ী বলেন, ডিসি সাহেবের নাম করে তার নিকট থেকে ১ লাখ টাকা নিয়েছেন। পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন তিনি সেই টাকা নিজেই মেরে দিয়েছেন। এই টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে তাকে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, সম্প্রতি তার ব্যবসার এক সমস্যার সমাধানের কথা বলে কয়েক দফায় আরো কয়েক লাখ টাকা নিয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করবেন বলেও জানান।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবু জাফর পেশায় কোন সাংবাদিক নয়। প্রতারণাই তার মূল পেশা। যেখানে যার নাম ভাঙ্গানো বা পরিচয় দেয়া প্রয়োজন সেখানে সেটা ব্যবহার করে। সম্প্রতি গুলশানে এক স্পা সেন্টারে অভিযান পরিচালনার সময় এক তরুণী আত্নহত্যা করেন। এ ঘটনাকে পূঁজি করে এক সরকারি কর্মকর্তার নিকট থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ কোন ভিকটিম অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সার্বিক বিষয়ে গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার আব্দুল আহাদ বলেন, আমি তার ব্যাপারে খোঁজ নেয়ার জন্য গুলশান, বনানী এবং বাড্ডা থানার কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিচ্ছি। আর তার দ্বারা প্রতারিতদের অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
এসব ব্যাপারে আবু জাফরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি কারও পরিচয় দেন না। তিনি ফেস দেখিয়েই খান। তার বিরুদ্ধে এ সকল অভিযোগের কেউ প্রমানও দিতে পারবে না বলে তিনি দাবি করেন। রা/অ