রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:৩৬ am
নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহীতে এবার দেড় হাজার কোটি টাকার আম বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। একইসঙ্গে প্রতি বছরের মতো এবারও আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (৪ মে) থেকে আম পাড়া ও বাজারজাত শুরু হচ্ছে। গুটি আম আগে পাকায় পাড়ার সময় এগিয়ে আনা হয়েছে।
বুধবার (০৩ মে) জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আম সংগ্রহ, পরিবহন, বিপণন ও বাজারজাত পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত সভায় বাজারজাতকরণের বিষয়ে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এ সময় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বাজারে নিরাপদ, বিষমুক্ত ও পরিপক্ব আম নিশ্চিত করতে ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ প্রকাশ করা হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সালেহ মো. আশরাফুল আলম ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আনিসুল ইসলাম।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (৪ মে) থেকে গুটি আম বাজারজাত করা যাবে। গোপালভোগ ১৫ মে, লক্ষণভোগ বা লখনা ও রানি পছন্দ ২০ মে, হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাত ২৫ মে, ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে ফজলি, ১০ জুন আম্রপালি এবং ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা ও বারি আম-৪, ১০ জুলাই থেকে গৌড়মতি এবং ২০ আগস্ট ইলামতি আম বাজারজাত শুরু হবে। পাশাপাশি কাটিমন ও বারি আম-১১ সারা বছরই বাজারজাত করা যাবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, গত বছর এক হাজার কোটি টাকার আম বিক্রি হয়। এবার দেড় হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। গত বছর ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল। এ বছর ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ২ লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন হবে। এর মধ্যে ৩০০ মেট্রিক টন বিদেশে রফতানি হবে।
এবার রাজশাহীতে আমের ভালো ফলন হয়েছে উল্লেখ করে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, গত বছর আমের মণ তিন হাজার ২০০ থেকে চার হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। এবারও ভালো দাম পাবেন চাষিরা। ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। দুই লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন হবে। এসব আমের বাজার হবে দেড় হাজার কোটি টাকার।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, বাজারে পরিপক্ব ও নিরাপদ আম নিশ্চিত করতে প্রতি বছরই তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এবারও সংশ্লিষ্ট সবার মতামতের ভিত্তিতে তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে যদি কোনও মালিকের আম পেকে যায়, তাহলে তিনি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে আম নামিয়ে বাজারজাত করতে পারবেন।
এদিকে, বাঘার গুটি আম বাড়তি গরমের কারণে আগেই পেকেছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান। তিনি বলেন, বিশেষ করে বাঘা উপজেলার আড়পাড়া, বলিহার ও পাকুড়িয়া এলাকার আম পাকতে শুরু করেছে।
শফিউল্লাহ সুলতান আরও বলেন, চলতি মৌসুমে বাঘার আমের প্রথম চালান বুধবার রাতে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে ইতালি যাবে। এগুলো স্থানীয় জাতের আম। প্রথম চালানে ৩০০ কেজি পাঠানো হয়েছে।
আম বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান সাদিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক শফিকুল ইসলাম ছানা বলেন, বুধবার গুটি আমের প্রথম চালান ঢাকায় গেছে। বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে ইতালি যাবে। এই জাতের আম আগে পাকে। খেতে সুস্বাদু হওয়ায় স্থানীয় বাজারে চাহিদা বেশ। তবু আমরা রফতানি করছি। ১০০ টাকা কেজি দরে রফতানির জন্য বিক্রি করেছি। তবে স্থানীয় বাজারে দাম আরও বেশি হবে।
আম-৩ :
এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় এবারও থাকছে না আম পাড়ার ক্যালেন্ডার। চাষি, উদ্যোক্তা ও রফতানিকারকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। ফলে বিভিন্ন জাতের আম পাকলেই বাজারজাত করতে পারবেন চাষিরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন বলেন, চাষি, উদ্যোক্তা ও কৃষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবারও আম ক্যালেন্ডার করা হয়নি। তবে সবগুলো উপজেলায় বাজারজাত ও পরিবহনে কোনও ধরনের অনিয়ম হলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। পরিবহনের সুবিধায় অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে সড়ক ফাঁকা রাখা হবে। ট্রাক ভাড়া বেশি নিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, এ বছর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল সেল করা হবে। এতে চাষি ও উদ্যোক্তারা তাদের সমস্যা ও অভিযোগ জানাতে পারবেন। যারা অনলাইনে আমের ব্যবসা করেন, তারা কোনও সমস্যায় পড়লে আমরা সহযোগিতা করবো। কুরিয়ার সার্ভিসগুলোকে মনিটরিং করা হবে। অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চাষিদের স্বার্থে সব ধরনের পদক্ষেপ নেবো আমরা। রা/অ