রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:১৪ am
আর কে রতন, বিশেষ প্রতিবেদক :
পশ্চিম বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা সদরের চড়কতলা গ্রামে প্রচীনকাল হতে ৫ দিনব্যাপী চড়ক পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। যুগের পর যুগ সেই ধারাবাহিকতা আজো ধারন করে চলেছে এখন হিন্দু সম্প্রদায়ের ভক্তবৃন্দরা।
চড়কতলা গ্রামের পূজা আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ কুমার জানান, চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে প্রতি বারের ন্যায় এ বছেরও ২০ চৈত্র মন্দিরে ঘটস্থাপন পূজার মাধ্যমে সংক্রান্তি উৎসবের মূলপর্ব আরম্ভ হয়েছে। ২৪ চৈত্র পর্যন্ত ঘটস্থাপন পূজা অনুষ্ঠিত হবে। ২৫ চৈত্র (রবিবার) ফুলভাঙ্গান পূজা, ২৬ চৈত্র (সোমবার) নাগরাকাটা পূজা, ২৭ চৈত্র (মঙ্গলবার) কালী পূজা ও ভড়ন খেলা, ২৮ চৈত্র (বুধবার) শ্মশান খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৯ চৈত্র (বৃহস্প্রতিবার) সকাল থেকে পর্যায়ক্রমে পাঁচটি মন্দিরে পূজা করা হয়েছে। এবং সন্ধ্যায় প্রত্যেকটি মন্দিরে পাঁঠা বলি দেওয়া হয়। ৩০ চৈত্র (শুক্রবার) হয়েছে চড়ক পূজা ও মেলা। এই দিন বিকালে লম্বা গাছের খুঁটিতে বাঁশ বেঁধে দড়ি ঝুলিয়ে চড়ক গাছ তৈরি করে মানুষের পিঠে বড়শি ফুটিয়ে চড়ক ঘুরানো হয়েছে।
আদমদীঘি উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মিহির সরকার বলেন, চৈত্র মাসের শেষ দিনকেই চৈত্রসংক্রান্তি বলা হয়ে থাকে। বাংলা সনের শেষ মাসের শেষ দিন হওয়ায় ওই দিনটিকে চৈত্রসংক্রান্তির দিন বলা হয়। তিনি আরো বলেন, এক সময় এ উপজেলায় চৈত্রসংক্রান্তির দিনটি উৎসবের আমেজে পালন করা হতো। তবে কালের বিবর্তনে সেগুলো হারিয়ে গেছে। এখন সংক্রান্তির দুটি উৎসবকে পালন করা হয়। তার একটি চৈত্রসংক্রান্তি ও অপরটি পৌষসংক্রান্তি।’
চড়কতলা গ্রামের সাবেক জমিদার পুত্র সত্যেন নিয়োগী জানান, চড়কতলায় প্রায় আড়াই বিঘা জমি আমার দান করা। সেখানে পাশাপাশি নির্মিত কালী মন্দির, শিব মন্দির, শীতলা মন্দির, বৃক্ষশ্বরী মন্দির এবং মহলদার মন্দির প্রাঙ্গণজুড়ে প্রায় ৭০০ বছর পূর্বে থেকে চড়ক পূজা উপলক্ষে মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
এপূজার অপর নাম নীল পূজা, মহাদেব পূজা, গম্ভীরা পূজা বা শিবের গাজন পূজা। শিব- পুরাণ এবং ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে চৈত্র শিব আরাধনা প্রসঙ্গে নৃত্যগীতাদি ও ধর্মীয় নাটক উৎসবের উল্লেখ রয়েছে। তিনি আরো জানান, চিত্রা-নক্ষত্রের নামনুসারে আদিগ্রন্থ পুরানে বর্ণিত রয়েছে-২৭টি নক্ষত্র আছে যা রাজা/প্রজাপতির দক্ষের সুন্দরী কন্যার নামানুসারে নামকরন করা হয়। একদিন মহা ধুমধামে চন্দ্রদেবের সংগে বিয়ে হলো দক্ষের ২৭ কন্যার। দক্ষের এক কন্যা চিত্রার নামনুসারে চিত্রানক্ষত্র এবং চিত্রানক্ষত্র থেকে চৈত্র মাসের নামকরন করা হয়। চৈত্র মাসের অন্যতম প্রধান উৎসব চড়ক।
চড়ক পূজায় তান্ত্রিক মন্ত্র পরিচালনাকারি চড়কতলা গ্রামের সন্যাসী মদন বিশ্বাস জানান, চৈত্র সংকান্তি ঘটস্থাপন পূজা করে পূজার কার্যক্রম শুরু করার পর ফুলভাংগান পূজা, নাগরাকাটা পূজা, কালী পূজা ও ভড়ন খেলা, শ্বশ্মান খেলা, বৃক্ষস্বরী পূজা, মহালদার পূজা, শিতলা পূজা, শিব পূজা সহ পূজা অর্চনা অনুষ্ঠিত হয়। ৩০ চৈত্র সংকান্তি শুক্রবার সকালে চড়ক গাছে পূজা করা হয় এবং বিকেল ৪ টার সময় লম্বা গাছের খুটিতে বাঁশ বেধে দড়ি ঝুলিয়ে চড়ক গাছ তৈরী করে মানুষের পিঠে বড়শি ফুটিয়ে চড়ক ঘুরানো হবে।
ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা ও মেলাকে ঘিরে আদমদীঘির চড়কতলা গ্রামসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে উৎসমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। জামাই-মেয়েসহ আতীস্বজনের ব্যাপক সমাগম ঘটে। রা/অ