সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:২৮ pm
এম এম মামুন, নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহীর ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। টানা তাপদাহে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। চৈত্রের তীব্র গরমের দাপটে রোজাদারদের জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছে। তাপদাহে শুধু জনজীবন নয়, ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে প্রাণীকুলও।
বেলা ১২ টার পর থেকে গরমের তীব্রতায় রাস্তা-ঘাটে মানুষজন ও যানবাহন চলাচল কমে আসছে। এতে করে প্রভাব পড়ছে ঈদের কেনাকাটায়। বাইরে বের হলেই চোখেমুখে যেন আগুনের আঁচ লাগছে। বৃষ্টি নেই,বাতাস নেই। তার ওপর ঠিকমত থাকছে না বিদ্যুৎ। রোদ, গরম আর লোডশেডিংয়ে হাঁপিয়ে উঠেছেন রাজশাহীর মানুষ।
গত কয়েক দিন থেকে থার্মোমিটারে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সাধারণত ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। আর তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি ওপরে উঠলে বলা হয় মাঝারি। এছাড়া ৪০ ডিগ্রি বা তার ওপরে উঠলেই তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
সোমবার (১০ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় পর রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়ায়।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক আবদুস সালাম বলেন, রোববার বিকেল ৩টায় রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দমমিক ১ ডিগ্রী সেলসিয়ায়। যা শনিবার ছিল ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এর আগের দিন শুক্রবার এখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
তিনি বলেন, রাজশাহী অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বইছে। রোববার রাজশাহীতে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। রাজশাহী অঞ্চলে মৃদু তাপপ্রবাহ আরও কয়েক দিন থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।
আবদুস সালাম আরও বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। এর পর টানা পাঁচ দিন ধরে তাপমাত্রা বাড়ছে। শুক্রবার ৩৭ দশমিক ৫ ও শনিবার ৩৮ ডিগ্রী এবং রোববার ৩৮ দশমিক ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
রাজশাহী শহরের অটোচালক ইনসান আলী বলেন, প্রচণ্ড গরমে লোকজন বাইরে বের হচ্ছেন না। যে কারণে আমাদের ভাড়াও হচ্ছে না। সারাদিন গাড়ি চালিয়ে ২/৩শ টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। এদিকে অটো চালাতে গিয়ে হাত-পা গরম হয়ে যাচ্ছে।
মোহনপুর উপজেলার জামতলা আদিবাসিপাড়ার ভারতী রানী নামের এক নারী দিন মজুর বলেন, আমরা প্রায় ১০/১২ নারী প্রতিদিন মানুষের কৃষি খেতে দিন মজুরীর কাজ করে থাকি। কিন্তু কয়েকদিন ধরে একটানা তাপদাহের কারণে ঠিকমত কাজ করতে পাচ্ছিনা। ফলে কাজ শেষ হওয়ার আগেই ফিরে আসতে হচ্ছে।
মোহনপুর উপজেলার কেশরহাটের কাপড় ব্যবসায়ী জিয়াউল রহমান জিয়া বলেন, গরমের কারণে বর্তমানে বেচাকিনা কম হচ্ছে।
তাপদাহের প্রভাব পড়ছে রাজশাহী শহরসহ উপজেলা পর্ষায়ে। দিনের বেলায় হাট বাজার রাস্তা-ঘাটে মানুষের উপস্থিতি রয়েছে কম দেখা যাচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া মানুষ ঘরের থেকে বাইরে বের হচ্ছেন না।
এদিকে গত কয়েক দিনের তাপদাহ প্রবাহের কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
রাজশাহী নিউ মার্কেটের কাপড়ের একজন দোকানি বলেন, তীব্র গরমের কারণে সকালে একটু বেচাকিনা হলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে ক্রেতা শূন্য হয়ে যাচ্ছে মার্কেট গুলো। সন্ধার পর শুরু হচ্ছে বেচাকিনা।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক আবদুস সালাম বলেন, চলতি মৌসুমে বৃষ্টি পাতের পরিমাণ খুবই কম। তাই গরমের তীব্রতা বেড়েছে। চলতি বছর মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিপাত হয়েছে গত ১১ মার্চ। ওই দিন মাত্র ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এরপর সর্বশেষ গত ৩ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৪ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তাই তাপপ্রবাহ দীর্ঘমেয়াদী রূপ নিয়েছে। তবে মার্চ-এপ্রিলেই সাধারণত তীব্র তাপপ্রবাহের মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। তাই বৃষ্টি না হলে এই তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। রা/অ