মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০১:৩০ am
নিজস্ব প্রতিবেদক, তানোর :
রাজশাহীর তানোরে এক পিতা গুম হবার ৪১ বছর পর চারজন আপন বড়ভাইয়ের বিরুদ্ধে সবশেষ ছোটভাই তানোর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুনজুর রহমান (৫০) বাদি হয়ে রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। চলতি ২০২৩ সালের (২২ মার্চ) বুধবার এ অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। তাঁর বাড়ি অত্র ওয়ার্ডের জিওল মহল্লায়।
অভিযুক্ত ভাইয়েরা হলেন- একই মহল্লার বাসিন্দা মোজাহার আলী (৫২), আনসার আলী (৫৫), ইনছান আলী চৈত্যা (৫৬) ও মুনতাজ আলী (৫৪)। সকলের পিতা মেহেরুল্লা ওরফে মেহুর মন্ডল।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিগত ১৯৮১ সালের ৩ জুলাই রাত ১০ ঘটিকার সময় পিতা মেহেরুল্লা ওরফে মেহুর মন্ডলের সঙ্গে কাউন্সিলর মুনজুর রহমান তাদের শয়ন কক্ষে শুয়ে ছিলেন। ওই সময় কাউন্সিলর মুনজুর রহমানের বয়স ছিল প্রায় ১০ বছর। এঅবস্থায় তাদের বাড়ির কাজের লোক ভাতরন্ড মহল্লার বাসিন্দা মৃত দাউদ আলীর পুত্র কেতাব আলী বলে মহিষের ক্ষুরারোগ হয়েছে। কেতাবের এমন কথায় বাড়ির দরজা খুলে পিতা মেহুর ও পুত্র মুনজুর রহমান মহিষের গোয়াল ঘরে যান। সেখানে ওঁতপেতে থাকা ৮/১০ জন পরিচিত ব্যক্তির মধ্যে সহোদর উপরোক্ত ৪ ভাই মিলে পিতা মেহুরকে মারধর অবস্থায় ধরে নিয়ে যায়।
এব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিবেশিরা জানান, বেশ কয়েকজন মিলে মেহুরকে গোয়ালঘরে ধরে রাতভর নির্যাতন করে। নির্যাতনে মারা গেলে ভোরে বাড়ির পার্শ্বে গোবরসার পালায় তার লাশ পুঁতে রাখা হয়। এ ঘটনার পর গ্রামে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। দুয়েকদিন গেলে সেখানে মানুষ পঁচা গন্ধ বের হয়। তখন কোন একরাতে লাশ সেখান থেকে তুলে বস্তায় ভরে নৌকায় নিয়ে বিলকুমারী বিল (বর্তমান শিবদনী)’র বহলা নামক স্থানে ফেলে দেয়া হয়। এমনই লোমহর্ষক ঘটনা জানান প্রতিবেশিরা।
কাউন্সিলর মুনজুর রহমান অভিযোগে বলেন, গোয়ালঘরে তার পিতাকে মারধর অবস্থায় বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার করেন তিনি। এসময় তারা হুমকি দিয়ে বলে ‘মুখ বন্ধ রাখ, নতুবা তোকেও মেরে ফেলে পুঁতে দেব’। তাদের এমন হুমকির ভয়ে ভীতস্থ হন। এহেন সময় পূর্ব পরিচিতি জিওল মহল্লার বাসিন্দা আজাহার শাহ্’র পুত্র তসলিম শাহ্ অনুন্নয় বিনয় করে ছাড়িয়ে নেয়। এরপর তার পিতাকে তুলে নিয়ে গুম করা হয়।
কাউন্সিলর আরও জানান, তিনি প্রাণের ভয়ে এযাবৎ পর্যন্ত পিতা গুম হবার ব্যাপারে কাউকে বলেননি। কিন্তু বর্তমানে তার পিতার বিপুল পরিমান সম্পত্তি বিভাগ বন্টনের জন্য ভাইদের বলা হলে পিতার ন্যায় পরিণতি হবে বলে হুমকি দেয়া হয়। এতে নিরুপাই হয়ে জীবনের নিরাপত্তা ও গুম হওয়া পিতাকে উদ্ধার ছাড়াও তাদের সম্পত্তি সুষম বন্টনের জন্য তিনি পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
তবে এব্যাপারে অভিযুক্ত ইনছান আলী চৈত্যা বলেন, পিতা গুম হবার ব্যাপারে সেই সময়ে ভাই মোজাহার আলী বাদি হয়ে থানায় মামলা করেছিলো। ওই মামলা খারিজ হয়ে গেছে। এখন নতুন করে তার কাউন্সিলর ভাইয়ের অভিযোগ ব্যাপারে শুনেছেন, দেখা যাক কি হয় বলে এড়িয়ে গেছেন তিনি।
এবিষয়ে রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এবি এম মাসুদ হোসেন বলেছেন, দৈনিক অসংখ্য অভিযোগ আসে। কিন্তু এহেন অভিযোগ সম্পর্কে তিনি অবগত নন। যদি এমন অভিযোগ হয়ে থাকে আমরা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব বলে জানান তিনি। রা/অ