শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৮:৩২ am
বছর ঘুরে আবার আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে রহমত-বরকত-মাগফিরাতের মাস মাহে রমজান। আলহামদুলিল্লাহ। প্রিয় পাঠক! সময় খুব দ্রুত বয়ে চলে। প্রথমেই সতর্ক করতে চাই রাসুল (সা.)-এর সেই বাণী শুনিয়ে। তিনি বলেছেন, ‘জাহান্নাম তার জন্য অবধারিত, যে রমজান পেয়েও নিজেকে শুধরে নেয়নি।’ (ইবনে কাসির, কিতাবুস সিয়াম)।
আমরা যদি সঠিকভাবে সিয়ামব্রত পালন করতে পারি, আশা করি এই এক মাসের সাধনা শেষে সিয়ামের ফুল ফুটবে আমাদের আত্মার জমিনে। বন্দেগির খুশবু ছড়াবে জীবন ও সমাজে। সেই সুরই ফুটেছে কুরআনের এ আয়াতে-‘ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানু কুতিবা আলাইকুমুসসিয়ামু কামা কুতিবা আলাল্লাজিনা মিন কাবলিকুম লা আল্লাকুম তাত্তাকুন। ওহে তোমরা যারা নিজেদের বিশ্বাসী মনে করো, তোমাদের জন্য সিয়ামব্রত আবশ্যক করে দেওয়া হয়েছে। তোমাদের আগে যারা মুমিন ছিল, তাদের ওপরও আমি সিয়ামব্রত ফরজ করেছি। আশা করা যায়, সিয়ামব্রত তোমাদের ভেতর জগতকে তাকওয়ার জন্য প্রস্তুত করবে।’ (সুরা বাকারাহ, আয়াত ১৮৩)।
মুত্তাকি হওয়ার জন্য, আলোকিত মানুষ হওয়ার জন্য আত্মায় তাকওয়ার বীজ লাগাতে হয়। আজ এই প্রথম রোজার সেহরি খাওয়ার মাধ্যমে আমরা আত্মায় তাকওয়ার বীজ বপন করেছি। পুরো মাস খোদার প্রেমে ডুবে থেকে এ তাকওয়া বীজের পরিচর্যা করতে হবে এবং রমজান চলে গেলে, আহা! একদিন তো চলেই যাবে, তখনো খুব যত্নের সঙ্গে এ তাকওয়া-চারার পরিচর্যা করে যেতে হবে। এভাবেই আস্তে আস্তে আমরা সফল জীবন, মুত্তাকি জীবনের সন্ধান পাব। সন্ধান পাব ‘ইয়া আইয়্যাতুহান্নাফসুল মুতমাইন্না-হে প্রশান্তিময় আত্মা’র জগতের।
আরবি তাকওয়া শব্দের অর্থ ভয়। যার মনে সব সময় আল্লাহতায়ালার ভয় কাজ করে, সে কখনো অন্যায়-অনিয়ম, মিথ্যা-দুর্নীতির সঙ্গে মিশে যেতে পারে না। এমন বান্দাকেই কুরআনে মোত্তাকি বলা হয়েছে। হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আত্তাকওয়া হা হুনা। তাকওয়া থাকে এখানে। এই বলে তিনি বুকের বাঁ দিকে ইশারা করলেন।’ (মিশকাত)।
তাকওয়া থাকে মনে। অন্তরে। হৃদয়ের গভীরে। সেখানে লালন করতে হয় তাকওয়া। আফসোস! আমাদের তাকওয়া এখন পোশাকে-দাড়িতে-মেসওয়াকে এসে গেছে। তাই আমরাও মেকি মোত্তাকি, মেকি মুসলমান হয়ে পড়েছি। হে পাঠক, সিয়াম এসেছে আমাদের সত্যিকারের মুমিন, খাঁটি মোত্তাকি বানাতে। ইবাদতের মধ্যে সিয়ামই এমন একটি ইবাদত, যা পালন করতে বাহ্যিক কোনো সুরতের প্রয়োজন হয় না। এই যে, আপনি একান্তভাবে রোজা রাখছেন, শুধু আল্লাহর জন্য। আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানার-দেখার সুযোগ রইল না; ঠিকই এ কারণেই আল্লাহ বলেছেন, ‘আদম সন্তানের সব আমলের প্রতিদান দশ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। রোজার কথা ভিন্ন। রোজার প্রতিদান কত বাড়াব কী দেব সেটা শুধু আমিই জানি। আসসাওমু লি ওয়া আনা আজযি বিহি। বান্দা রোজা রাখে শুধু আমার জন্যই। কেননা, অন্য কোনো উদ্দেশ্যে রোজা রাখার সুযোগ নেই। রোজা আমার জন্য। আমি নিজ হাতে এর প্রতিদান দেব।’ আরেকটি অনুবাদ হতে পারে এ রকম-‘রোজা আমার জন্য, আমিই রোজার পুরস্কার।’ (বুখারি)।
তাকওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার মাস রমজান। অনেকেই মনে করে, রোজা রাখলেই মানুষ মোত্তাকি হয়ে যাবে। আসলে তা নয়। রোজা মানুষকে মোত্তাকি হওয়ার জন্য প্রস্তুত করে মাত্র। রোজা হলো তাকওয়ার প্রশিক্ষণ। যে যত ভালো প্রশিক্ষণ নেবে, সে তত বেশি মোত্তাকি হওয়ার সুযোগ পাবে। আনুষ্ঠানিক রোজা তো মাত্র এক মাস, কিন্তু মুমিন থেকে মোত্তাকি হওয়ার সাধনা বারো মাস। এক জীবনে সাধনা করেই আমাদের পৌঁছতে হবে ‘প্রশান্ত আত্মার প্রশান্তিময় জগতে’। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের কবুল করুন। আপনি আমাদের তওফিক দিন। লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি। সূত্র : যুগান্তর।