রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:৫০ am
এম এম মামুন :
রাজশাহীর মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতা ও অব্যস্থাপনার কারণে ৬ শিক্ষার্থী দশম শ্রেণীতে ক্লাশ করতে পারছেন না। বিষয়টি নিয়ে চলছে সমালোচনা। প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় পরিচালনার নিয়মকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে তার মনগড়া সিদ্ধান্তের কারণে প্রায় ৩ মাস ধরে দশম শ্রেণীতে ক্লাশ করতে পারছেন না ৬ শিক্ষার্থী।
প্রধান শিক্ষকের আচরণ বাধ্য হয়ে টিসি নিতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থী পেটানো, প্রাইভেট না পড়লে ফেল করানো, বেশীর ভাগ সময় ক্লাশ না হওয়া, সময়মত প্রধান শিক্ষকের স্কুল না আসা, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে দূর্ব্যবহার, শিক্ষার্থী অসন্তোষ,অভিভাবক সমাবেশ না করাসহ নানা অনিয়মে নিমজ্জিত এই উচ্চ বিদ্যালয়। এক শিক্ষার্থী অভিভাবকের মাধ্যমে জানা যায়, চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র দিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণের জন্য লিখিত আবেদন করে দিনের পর দিন প্রধান শিক্ষকের দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও তিনি শিক্ষার্থীদের গাছের শেকড়ের সাথে তুলনা করে বলেন “শেকড় পঁচে গেছে, মূল ও পঁচে যাবে” বলে মন্তব্য করে অভিভাবকদের অপমান অপদস্ত করে স্কুল হতে বের করে দিয়েছেন।
তার অমানবিক সিদ্ধান্তের কারণে বাধ্য হয়ে নবম শ্রেণীতে ক্লাশ করছেন ৪ শিক্ষার্থী। অসুস্থ হয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার পরেও ৬ শিক্ষার্থীকে ফেল দেখিয়ে নবম শ্রেনী হতে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করেননি প্রধান শিক্ষক সুলতানা শাহিন। দেখার বিষয় কিছু প্রভাবশালী অভিভাবকের সাথে তার সম্পর্ক ভাল হওয়ায় এবং সেই শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা না দিলেও অনেক শিক্ষার্থীকে পাশ দেখিয়ে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক সুলতানা শাহীন।
এমন কথা তিনি অভিভাবকের সামনে নিজ মুখেই স্বীকার করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু’জন শিক্ষক বলেন, করোনা কালীন সময়ে সরকার নির্ধারিত ক্লাশ রুটিন অনুযায়ী ক্লাস পরিচালনার সময় তিনি শিক্ষার্থীদের দয়া অনুগ্রহ করে ক্লাশ করাচ্ছেন ও গত এসএসসি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বলেন, তোরা এই বিদ্যালয়ের ছাত্র না কথাটি বলায় শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমে তালা ঝুলিয়ে দেয়। যা পরবর্তীতে মানববন্ধন পর্যায়ে গড়ায়।
পরবর্তীতে দুই শিক্ষকের অনুরোধে এ্যাসেম্ব্লী রুমে ৬০০ ছাত্রের সামনে ৬ বার ক্ষমা চেয়ে রক্ষা পান প্রধান শিক্ষক সুলতানা শাহিন। অহংকারী, দেমাগি ও বিতর্কিত প্রধান শিক্ষকের কারণে মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ দিন দিন তলানী ঠেকার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মাঝে দিন দিন ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে। যা ভবিষ্যতে স্কুলকে বড় কোন ঘটনায় ফেলতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সাথে তার সম্পর্ক দা কুড়ালের মত। কিছু কিছু শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, বয়সের ভারে তিনি মাঝে মধ্য ভুলভাল বকেন এবং তার ব্যবহার পাগলের মত হয়ে গেছে।
প্রধান শিক্ষক সুলতানা শাহিন এর অমানবিক স্বীদ্ধান্তের বলি শিক্ষার্থীরা হলেন, “ক সেকশনে” জিৎ, “খ সেকশনে” আল মারুফ সূবর্ণ, মাসুম পাভেল হৃদয়, আয়েশা সিদ্দিকা, জাকির হোসেন, সুমাইয়া আকতার নদি। জিৎ ও মারুফ বাদে বাকিরা ভয়ে বাধ্য হয়ে নবম শ্রেণিতে পুন:রায় ক্লাস করছেন বলে জানা গেছে। তাদের দ্রুত দশম শ্রেণিতে উত্তলোন না করা হলে ক্লাশ রুটিন অনুযায়ী পিছিয়ে পড়বে বলে দাবি অভিভাবকদের।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আল-মারুফ সূবর্ণে বাবা সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী শাহিন সাগর বলেন, অসুস্থতার কাগজপত্র দিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে আবেদন করে সাড়া পেয়ে প্রথমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অঞ্চল উপ-পরিচালক ড. শরমিন ফেরদৌস এর দপ্তরে লিখিত আবেদন দেওয়ার পর তিনি প্রধান শিক্ষক সুলতানা শাহিনকে শিক্ষার্থী মারুফকে দশম শ্রেণিতে উত্তোলন করে দিতে নোটিশ দিলেও তিনি তার জেদ বহাল রাখেন। প্রধান শিক্ষক একজন মানুষ হয়ে শিক্ষার্থীকে গাছের শেড়র বাকড়ের সাথে তুলনা করে চরম অন্যায় করছেন। এই বদ মেজাজি ও অহংকারী প্রধান শিক্ষকের বিচার দাবি করছি। পুলিশ সদস্যের ছেলে শিক্ষার্থী জিৎ এর মা জানান, আমার ছেলেকে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্নের জন্য প্রধান শিক্ষকে গত ২ মাস ধরে অনুরোধ করলেও তিনি বিভিন্ন ভাবে আমাকে অপমান করেছেন এবং ভবিষ্যতে যেন স্কুলে আপনার পা না পড়ে বলে ভয় ভীতি ও রক্তচক্ষু দেখিয়ে স্কুল হতে বের করে দিয়েছেন। আমি আমার ছেলের ভবিষ্যতে কথা চিন্তা করে ওই বেহায়া প্রধান শিক্ষকের কাছ টিসি নিয়েছি।
মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুলতানা শাহীন বলেন, আমি আমার সিদ্ধান্ত থেকে নড়বো না। একই বিষয়ে বার বার বিরক্ত করেন কেন? যদি খারাপ লাগে টিসি নিয়ে চলে যান। এবিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দীন বলেন, মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় স্কুল তদন্ত করতে গিয়ে এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন অনেক শিক্ষার্থী স্কুল থেকে টিসি নিয়ে চলে গেছে তাদের কি করবো। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অঞ্চল উপ-পরিচালক স্যারের মতামত চেয়েছি। তিনি কি সিদ্ধান্ত দিবেন সে ভাবে ব্যবস্থা নিব।
এবিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অঞ্চল উপ-পরিচালক ড.শরমিন ফেরদৌস বলেন, শিক্ষার্থীদের দশম শ্রেণিতে উত্তোলনের জন্য অনেক আগেই চিঠি দিয়েছি। তিনি কেন তা শুনছেন না আমি খোঁজ নিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। রা/অ