রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৭:০৭ am
আর কে রতন, বিশেষ প্রতিবেদক :
রাজশাহীর মোহনপুর-তানোর উপজেলার সীমান্ত ঘেঁসে বয়ে চলা একমাত্র শিবনদী। নদীটি বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা নওগাঁ ও রাজশাহী জেলার একটি চিরচেনা নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৭১ কিলোমিটার ও গড়প্রস্থ ৩৭ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক শিবনদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর ১০৬। নদীটির উৎস আত্রাই নদী হতে আর মোহনা বারনই নদী হতে। বিলুপ্তপ্রায় এই নৌপথ দিয়ে এক সময় তানোর, মোহনপুর, মান্দা ও নিয়ামতপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের শহর-বন্দরে বাণিজ্যিক কাজে যাতায়াত করার একমাত্র অবলম্বন ছিলো এই বারনই-শিব নদীর নৌপথ। কালের পরিক্রমায় আজ সেই নদীর ছল ছল যৌবনে পড়েছে ভাটা। বেশি ভাগ অংশ ভরাট এবং দখল করে সেখানে চাষাবাদ হচ্ছে। ফলে নদী হারিয়েছে তার নিজস্ব রুপ।
শিবনদীর ওপর দিয়ে সারি সারি পাল তোলা নৌকা ও লঞ্চসহ বিভিন্ন নৌযান চলাচল করত। সেই সময়ের প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা নৌঘাটগুলো এখন বিপন্ন। পানিশূন্যতায় সবগুলো নৌঘাট বন্ধ ও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। সে দিনের যৌবন ভরা শিবনদীর বুকে দেখা মেলে না আর সারি সারি পালতোলা বড় বড় নৌকা ও লঞ্চ। সময়ের বিবর্তনে শিবনদী হারিয়েছে তার যৌবন। ভরাট হওয়া শিবনদীর বুকে কৃষকরা বোরো ধান চাষ করছে। ফলে বর্তমানে নদীর বুকে সবুজের সমাহার দেখা মিলছে।
মোাহনপুর উপজেলার মেলান্দি গ্রামের মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি শুকুমার হালদার জানান, বর্তমান প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা শিবনদীর বর্তমান চেহারা দেখে ভাবতেই পারবে না যে, এক সময় এই শিবনদীর ওপর দিয়ে পাল তোলা নৌকা ও লঞ্চসহ বিভিন্ন নৌযান চলাচল ছিল। ধীরে ধীরে নদী ভরাট হওয়ার কারনে নৌঘাটগুলো বন্ধ ও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তাই নেই আগের মত নদী পথে মানুষের বিচরণ। তিনি আরো বলেন, নদী ভরাটের ফলে স্থায়ী মৎস্যজীবীরা এখন তাদের নৌকা ভাসিয়ে আগের মত মাছ ধরতে পারে না। যার জন্য মৎস্যজীবীদের বাপ-দাদার আদি পেশা ছেড়ে বাধ্য হয়ে জীবিকার সন্ধানে এ পেশা পরিবর্তন করছে অনেকে।
মোাহনপুর সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান বলেন, এক সময় এই অঞ্চলের মানুষের জেলা শহরে যাতায়াতের একমাত্র উপায় ছিল নৌপথ। সারা বছর পাল তোলা নৌকায় কিংবা লঞ্চে খুব সহজেই শিব নদের ওপর দিয়ে নওহাটা ব্রীজঘাটে পৌঁছানো যেত। কিন্তু নদী ভরাট হওয়ায় পানি সংকটে নৌ যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। নদী সংস্কার করা হলে সেই পূর্বের ন্যায় পরিবেশ ফেরানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী জানানো হয়।
তানোর শিবনদী রক্ষা কমিটির সভাপতি কৃষক জাইদুর ইসলাম বলেন, শিবনদী এক সময় খরস্রোতা নদী ছিল। আমরা নৌকায় যাতায়াত করতাম। শালুক, পদ্মসহ নানা প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ যেমন ছিল তেমন ছিল বিভিন্ন প্রজাতের দেশিয় মাছ। বর্তমানে নদের নাব্য নেই। ফলে পানিও থাকে না। জেগে ওঠা নদের বুকে হচ্ছে বোরো ধানের চাষ। আর আগের দিনের সেই বাটক্যা, নয়না, দাঁড়ি, কাঁটাপাতাশি, গজাড় মাছও এখন দেখা যায় না। শিবনদীটি খনন খুবই প্রয়োজন।
বিলকুমারী সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক রেজাউল ইসলাম বলেন, ৭৬-এর পরে নদটি আর খনন করা হয়নি। তাই দিন দিন নদটি ভরাট হচ্ছে। এখন নদের বুকজুড়ে চাষ হচ্ছে ধান। আমরা নদটি খননের জন্য মানববন্ধনসহ স্থানীয় প্রশাসনকে লিখিত আবেদন সংশ্লিষ্ট বিভাগে করেছিলাম। বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) নদীটি খননের জন্য একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলেন এবং নদীর পাশে একটি ইকো পার্ক নির্মাণের জন্য পরিদর্শক দলও নদী পরিদর্শন করেছিলেন কিন্তু এখনো তার কোন সুফল দেখতে পায়নি কেউ।
এব্যাপারে মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবিহা ফাতেমাতুজ্-জোহরা বলেন, শিবনদীর বুকজুড়ে সবুজের অপরূপ সৌন্দর্য্য দেখে মন ভরে যায়। এই নদীর বুকজুড়ে উৎপাদিত ফসল জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে। আর শিবনদী খননের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রা/অ