বুধবা, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৮:৩৭ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিক্ষোভ মিছিল থেকে শিক্ষার্থীরা সরে যাওয়ার পরও এখন থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে। বর্তমানে ক্যাম্পাসের ভেতর ও রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে হালকা যান চলাচল করলেও বিনোদপুর বাজারের প্রায় সকল দোকান বন্ধ রয়েছে।
সোমবার (১৩ মার্চ) দুপুরে পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র শান্ত ও থমথমে পরিবেশের এ চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, এদিন সকাল থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। কোথাও নেই শিক্ষার্থীদের আনাগোনা, নেই বিক্ষোভ মিছিল বা আন্দোলন। সকালে লাইব্রেরির সামনে কিছু শিক্ষার্থীরা বসলেও পরে তারা আবার উঠে যায়। মহাসড়ক দিয়ে অটোরিকশাসহ ছোট যানবাহনও চলাচল করছে।
বাস-ট্রাকের মতো বড় যানবাহন বিকল্প পথে রাজশাহী বাইপাস সড়ক দিয়ে চলাচল করছে। যান চলাচল যাতে বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য বিনোদপুর, কাজলা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিনোদপুর বাজারের প্রায় সকল দোকান বন্ধ রয়েছে। পুরো ক্যাম্পাস নজরে রাখছেন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা।
এর আগে, রোববার (১২ মার্চ) রাত ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ সংলগ্ন রেললাইনে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছিলো শিক্ষার্থীরা। ফলে রাজশাহী রেল স্টেশনের সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছাড়া বাকি সব জেলার সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিলো প্রায় চার ঘণ্টা। পরে রাত ২টায় আবারও রেল চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এদিকে, রাত ৮টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় সাত দফা দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ জন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে চারজন নারী শিক্ষার্থীও ছিলো। পরে মধ্যারতের দিকে প্রশাসন এসে তাদের সঙ্গে কথা বললে অনশন স্থগিত করেন তারা।
এর আগে, গতকাল দুপুর ১২টায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অগ্নিসংযোগ, ইট ও গাছের গুঁড়ি রেখে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক সড়ক অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে তারা সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে সরে গিয়ে চারুকলা অনুষদসংলগ্ন রেললাইনে অবস্থান নেয়। এ সময় তারা ব্যানার, টায়ার, পাখির অবয়ব (ডামি) পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
এছাড়া, গত শনিবার সন্ধ্যা থেকে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক বন্ধ থাকার ফলে বন্ধ ছিলো যান চলাচল। তবে বিকল্প পথে চালু ছিল যান চলাচল। নাটোরের দিক থেকে আসা যানবাহন শহরে প্রবেশ করতে বুধপাড়া ফ্লাইওভার হয়ে ঢুকছে। আর সাহেব বাজারের দিক থেকে কাটাখালীর দিকে আসা ছোট যানবাহন ফুলতলা বালুরঘাট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বাসগুলো শিরোইল বাসস্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে ভদ্রা মোড় দিয়ে নতুন বাইপাস হয় নাটোরের দিকে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, বাসের ভাড়া নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে গত শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর বাজারে স্থানীয় ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার সূত্রপাত হয়।
সংঘর্ষের একপর্যায়ে স্থানীয়রা মহাসড়ক অবরোধ করেন।
মহাসড়ক থেকে ক্যাম্পাসের মধ্যে ইটপাটকেল ছুঁড়ে তারা। শিক্ষার্থীরাও ক্যাম্পাসের ভিতর থেকে স্থানীয়দের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়ে। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেন। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে অবস্থান নেয়।
স্থানীয় ব্যক্তিদের হামলা-সংঘর্ষ ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শেলে আহত হয়েছেন দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে এখনো ৯০ জন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আছেন এক শিক্ষার্থী। ছয়জন শিক্ষার্থীর চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।
বগুড়া থেকে মোহাম্মাদ নামের একটি বাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছিলেন এক ছাত্র। যাত্রাপথে ভাড়া নিয়ে তার সঙ্গে বাসের সুপারভাইজার ও হেলপারের বাগবিতণ্ডা হয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেটে বাস থেকে কাউন্টারে এসে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা-কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন। পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। রা/অ