রবিবর, ১০ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৬:৪৩ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক :
ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। শুক্রবার (৩ মার্চ) রাত সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ সংলগ্ন রেল গেইট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ছিনতাইকারীরা শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মুঠোফোন ও ম্যানিব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। এঘটনায় বৃহস্পতিবার ৪ সন্দেহভাজনকে আটক করে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলা করেছেন।
ভুক্তভোগী আব্দুল্লাহ আল জাহেদ বাংলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (রামেক) জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, আব্দুল্লাহ আল জাহেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ সংলগ্ন রেলগেইট এলাকা থেকে ক্যাম্পাসের দিকে আসছিলেন। এসময় ৫-৭ জন ছিনতাইকারী তার পথরোধ করে তাদের সঙ্গে থাকা মোবাইল ও মানিব্যাগ দিতে বলেন। কিন্তু ওই শিক্ষার্থী দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে পিছন থেকে একজন ছিনতাইকারী ছুরিকাঘাত করেন।
পরে তার সঙ্গে থাকা মোবাইল ও মানিব্যাগ কেড়ে নিয়ে চলে যান তারা। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী চিৎকার করলেও পাশে থাকা পুলিশ এগিয়ে আসেনি বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগীর সহপাঠীরা। এরপর আহত অবস্থায় আব্দুল্লাহ আল জাহিদ পুলিশ বক্সের সামনে আসেন। তারপর পুলিশ সদস্যরা অ্যাম্বুলেন্স ডেকে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এঘটনায় ওইদিন রাত ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বিশ^বিদ্যালয়ের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেন বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আবদুল্লাহ আল জাহেদ সাহায্যের জন্য চিৎকার করলেও এগিয়ে যাননি পুলিশ। এতে ক্ষোভ জানিয়ে তারা ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহারের দাবি জানান। পরে বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর পুলিশ প্রত্যাহারের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে জাহিদের সহপাঠী ও বাংলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সোহাগ রানা বলেন, এর আগেও ক্যাম্পাসে ছিনতাইয়ের অনেক ঘটনা ঘটেছে। ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের মেরে আহত করা সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। প্রায়ই ক্যাম্পাসে ও বাইরে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু প্রশাসন এগুলো আটকাতে ব্যর্থ। বারবার দাবি জানানোর পরও প্রশাসন ক্যাম্পাসে ছিনতাইরোধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। ক্যাম্পাসে নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা কোনো কাজের না, তারা বসে বসে শুধু লুডু খেলে। তারা থাকা আর না থাকা একই কথা।
এদিকে শনিবার (৪ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিশ^বিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের অবস্থান কর্মসূচি করে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরে সোয়া ১টার দিকে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীদের পক্ষে কয়েকজন প্রতিনিধিসহ ওই বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. শহীদ ইকবাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পক্ষে থানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলা করবে বলে সিদ্ধানÍ নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন। বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মো. শহীদ ইকবাল বলেন, বিভাগের শিক্ষার্থীরা আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসা, প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা সংবলিত একটি লিখিত দাবি জানান। পরে আমি শিক্ষার্থীদের কয়েকজনকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে ওই দাবি নিয়ে আলোচনা করি। আলোচনায় প্রশাসন তা মানতে সম্মত হয়।
নগরী চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাসুদ পারভেজ বলেন, শনিবার সকাল ১০টায় থানার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিশ্¦বিদ্যালয় প্রশাসন থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছে, যা মামলাভুক্ত করা হয়েছে। বিশ^বিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য সুলতান উল ইসলাম বলেন, সাধারণত এসব ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে বাদি হয়ে মামলা করতে হয় কিন্তু শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলা করেছে। রা/অ