শুক্রবার, ২০ েপ্টেম্বর ২০২৪, সময় : ০১:৩০ am

সংবাদ শিরোনাম ::
ঢাবিতে সব ধরনের রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিখোঁজের সাতবছর পর ছেলেকে ফিরে পেলেন উচ্ছ্বসিত মা তানোরে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত রাসিকের সাবেক কাউন্সিলর মনসুরের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন সেই রুবেল আরও ৭ দিনের রিমান্ডে সিলেবাস সংক্ষিতের দাবিতে রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শেষে সমাবেশ পবায় উপজেলা প্রশাসনে ও কাটাখালি পৌরসভায় ভোগান্তি চিত্র নায়িকা পরীমণি পালন করলেন ‘বিবাহ বিচ্ছেদ’ দিন এক দফা দাবিতে রাজশাহীতে নার্সদের মিছিল শেষে মানববন্ধন প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য রহমত : দুধরচকী রাজশাহীতে শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ডলার সংকটে বাংলাদেশকে সার দিচ্ছে না সরবরাহকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনা বাতিল রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বিচারিক ক্ষমতা পেলো সেনাবাহিনী আন্দোলনের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করলেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ বাগমারায় অধ্যক্ষ ও সভাপতির অনিয়মের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টি গুজব : আসিফ মাহমুদ একদিনের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা রাজশাহী আসছেন আজ বাংলাদেশ ও ভারত ভিসা জটিলতায় চার যৌথ সিনেমা একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির শাহরিয়ার কবির আটক
নেতারা বিএনপি ছাড়ছেন কেন? মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া

নেতারা বিএনপি ছাড়ছেন কেন? মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া

যেকোনো প্রকৃত ও জনমুখী রাজনৈতিক দলের যে তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক চরিত্র থাকার প্রয়োজন রয়েছে, তা বিএনপির মধ্যে কতটুকু রয়েছে, তা প্রশ্নের দাবিদার। প্রকৃতপক্ষে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকার একটি খুঁটি হিসেবে বিএনপিকে ব্যবহার করেছিলেন। এই দলের অনেক নেতা-কর্মীদের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবেই একটি সুবিধাবাদী চরিত্র রয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিএনপিকে ব্যবহার করেছিল তাদের স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে। তাই বিএনপি এই দীর্ঘ সময়েও একটি শক্তিশালী কর্মী বাহিনী তৈরি করতে সক্ষম হয়নি।

বিপরীতে দলটিতে সুবিধাবাদীদের জয়জয়কার অবস্থা। এসব কারণেই বিভিন্ন সময়ে ত্যাগী নেতারা বিএনপির রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছেন অথবা বিএনপির রাজনীতি করতে আগ্রহ দেখাননি। আবার অনেক সময় দেখা যায়, বিএনপির এরূপ রাজনৈতিক চরিত্রের কারণেই অনেক নেতা দলের কর্মসূচিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। হয়তো এই নেতারা সামাজিক অবস্থানের কারণে দলত্যাগ করতে পারেন না।

বর্তমান সময়ে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যে ঝিমুনি ভাব লক্ষ করা যায়, এর প্রধান কারণ হলো ত্যাগী নেতাদের এই নিষ্ক্রিয়তা। ত্যাগী নেতাদের উপেক্ষিত হওয়ার পেছনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কিছুটা ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলটির মনোনয়ন-বাণিজ্য প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছিল। আর এ কারণেই ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি হয়েছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তারেক রহমানের মনোনয়ন-বাণিজ্যের কারণে অনেক পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতা বিএনপি ছেড়ে দিয়েছিলেন কিংবা তারা বিএনপির রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছেন। নেতাদের উপেক্ষার ঘটনা বিএনপিতে নতুন কিছু নয়, আগেও এ রকম অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। বিএনপির প্রয়াত নেতা খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে বিএনপির নেতাদের উপেক্ষার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হিসেবে নেয়া যেতে পারে।

সংকটকালীন খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন দলকে গুছিয়ে রাখতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। তাই খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে বিএনপির একজন সংকটকালীন নেতা হিসেবে মনে করা হয়। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার পেছনে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন অসামান্য ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৮২ সালে যখন সামরিক শাসক এরশাদ ক্ষমতার মসনদে আরোহণ করেন, তখন খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ রেখে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু তার এত ত্যাগ ও পরিশ্রমের পরও ১৯৯১ সালের মন্ত্রিসভায় তার স্থান হয়নি। তাকে করা হয়েছিলল সংসদের চিফ হুইপ।

পরবর্তী সময়ে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। তখন ১৯৯১-৯৬ সালে অপশাসনের কারণেই বিএনপি রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। এ পরিস্থিতিতেও খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বিএনপিকে সংসদে গুছিয়ে রেখেছিলেন। ওয়ান ইলেভেন বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগের জন্য একটি চরম সংকটময় সময় ছিল। সংস্কারপন্থিরা দুটি দলকেই বিভক্ত করে ফেলতে চেয়েছিলেন। ওয়ান ইলেভেনের ষড়যন্ত্রের সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত হলো ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’। মাইনাস টু ফর্মুলা হলো বড় দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দেয়া। সেখানে বিএনপি নেতা খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ভূমিকা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এ সময়ে তিনি বলতে গেলে একাই বিএনপিকে বিভক্তির হাত থেকে রক্ষা করেছেন। ফলে নেতৃত্বের প্রতি যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল, তা বিএনপির নেতা-কর্মীদের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল।

বর্তমান সময়ে সদ্য দল থেকে পদত্যাগ করা বিএনপির চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার ঘটনাটিকেও বিএনপির নেতাদের প্রতি উপেক্ষা ও অবহেলার রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা যেতে পারে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি বিএনপির সংসদ সদস্যরা একযোগে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের পর বিএনপি নেতা উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া উপনির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপির সঙ্গে তার সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে। একপর্যায়ে তিনি প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ ত্যাগ করার কথা জানিয়ে ঢাকার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন। পরবর্তী সময়ে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য এবং শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকায় দলের গঠনতন্ত্রের ৫(গ) ধারা মোতাবেক বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য উকিল আবদুস সাত্তারকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যসহ সব পদ থেকে অব্যাহতি প্রদানপূর্বক বহিষ্কার করা হয়েছে।

উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া পরবর্তী সময়ে গণমাধ্যমে বলেছেন, তিনি দলে নিজেকে উপেক্ষিত মনে করছেন বলেই মানসম্মান থাকতেই দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। আবদুস সাত্তারের নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির তরুণ নেত্রী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাকে গুরুত্ব দেয়ার গুঞ্জন রয়েছে। পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে রুমিন ফারহানা এই আসন থেকে বিএনপির নমিনেশন পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। উকিল আবদুস সাত্তারের ঘটনাটি বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, বিএনপিতে এ রকম উপেক্ষা ও অবহেলার রাজনীতি সৃষ্টিলগ্ন থেকেই চলে আসছে। যা ত্যাগী নেতাদের বিএনপি থেকে দূরে সরে যেতে বাধ্য করেছে। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত হলো, বিএনপি অনেকাংশে সুবিধাবাদীদের নিয়ে গড়া একটি দল। সুবিধাবাদীদের অবস্থানই এখানে সবচেয়ে পাকাপোক্ত। যারা সত্যিকারে রাজনীতি করতে চান, তাদের জন্য বিএনপিতে খুব একটা জায়গা আছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন না।

লেখক : ট্রেজারার, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক চেয়ারম্যান, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সূত্র : দৈনিক বাংলা

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.