শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৯:০৫ am
শিরোনামের জন্য দুঃখিত। তবে ফেব্রুয়ারির বইমেলাকে কেন্দ্র করে কতটাকার ফুচকাণ্ডচা-সিগারেট বিক্রি হচ্ছে/হয়েছে তার সঠিক হিসাব প্রকাশ হলে প্রকাশক-লেখকগণ আগামী বছরের বইমেলাতে তাদের পরিকল্পনা ভিন্নভাবে সাজাত! একদিকে বইয়ের উর্ধ্বদাম, অন্যদিকে মানহীনতার প্রতিযোগিতায় কোনটা যে কেনা উচিত আর কোনটা নয়, ভিন্নদিকে লেখকদের বহুলাংশ ফেসবুকে/বিজ্ঞাপনে আমারটি নিন, আমারটি নিন বলে বলে পাঠককে বিরক্ত করা-তাইতো শীত শেষ হওয়ার আগেই গরম নেমেছে! যারা সত্যিকারের পাঠক তারা বইয়ের খোঁজ খবর নিয়ে তবেই মেলায় যায়!
মেলা শেষ হতেই ঠোঙ্গা কারবারীদের উপকরণ জোগাড় হবে এবং ব্যবসা জমজমাট হবে বলে তারা দিনরাত প্রার্থণা করছে এই আশায় যে, এখনো ফেব্রুয়ারি ফুরোয় না কেন! আর একদল যে কোন উদে্দ্েশ্য মেলায় প্রবেশ করে সেকথা সভ্য সমাজে ভাষার মাসে বাংলা ভাষায় কী করে ব্যক্ত করি! ভৌগোলিক দূরত্ব এবং আর্থিক দীনতায় তাবৎ জীবনে মাত্র একবার বইমেলায় প্রবেশের সৌভাগ্য ঘটেছিল। যে বছর জাতির জনকের আমার দেখা নয়াচীন” প্রকাশ পেয়েছিল সেই বছরের ঘটনা এটি। বেকার জীবনের সেই তপ্ত দিনের কোন এক শুক্রবার দুপুরে, সূর্য যখন মধ্যগগণে তখন প্রবেশ করেছিলাম। খান কয়েক বইও খরিদ করেছিলাম তবে ধূলায় ধূসরিত হয়েছিলাম আরও অধিক।
সে সময়ে পাঠক বলতে বোধহয় গোয়েন্দা সংস্থার গুটিকয়েক নিরীহ দর্শক আর আমরা ক’জন বেকার ছিলাম! তবে প্রতিবছর যারা বই মেলায় সশরীরে যায় তাদের চেয়ে কম সংখ্যক বই সংগ্রহে আসে না! পছন্দ এবং সামর্থ্যরে সমন্বয় করে যা কিনি এবং কিনতে উৎসাহ দেই তাতে স্বনামধন্য লেখক এবং মানসম্মত লেখার ঋণ কিছুটা হলেও শোধ করি! প্রকৃত লেখকদের জন্য বর্তমান সময়ে সবচেয়ে সংকটের জায়গাটি হয়েছে স্ব-ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত কিছু মানুষের লেখালেখি এবং সেসব নিয়ে মিডিয়ার লাগামহীন দাপাদাপি! ক্রীড়াবিদ, অভিনেতা কিংবা রাজনীতিবিদ যারা কোনদিন বিশুদ্ধ বাংলায় ফেসবুকেও একটি স্টাটাস পর্যন্ত প্রসব করেননি তারা বই মেলাকে কেন্দ্র করে লেখক বনে যাওয়ায় প্রকৃত লেখকগণ অস্তিত্ব সংকটে ডুবছেন। কেননা সস্তা জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে পাঠকের ফ্লো তারা কেড়ে নিচ্ছেন।
যে কারণে শুধু লেখক নন বরং প্রকাশকরাও ব্যবসা গুটাতে বাধ্য হওয়ার মত সীমাহীন দুর্গতিতে পতিত হচ্ছেন! আবার কিছুকিছু প্রকাশনী তাদের স্টলে ভিড় বাড়াতে তৃতীয় ক্যাটেগোররির লেখকদেরকে টার্গেট করছেন। কিছু মানুষ স্ব স্ব ক্ষেত্রে তুমুল সফল বটে কিন্তু তারা যখন সেটাকে পুঁজি করে অন্যের রুজিতে হাত দেয় তখন সেটার বিহিত কী হবে? জানি না! কথিত কবিদের দাপাদাপিতে বইমেলায় ছুটির দিনে চাপাঁচাপি লাগে। এরা যতোটুকু মাতে তার চেয়ে অধিক তাঁতে! কী সাংঘাতিক-বিচিত্র ভঙ্গীমা। বই মেলা সশরীরে যদি কোনদিন বন্ধ হয়েও যায় তবুও যেন কবিদের মেলা বাংলা একাডেমি অব্যাহত রাখে। কবিরা কবিদের দর্শন ছাড়া বাঁচতে পারবে না। কবিতার কপালে যা হয় হোক!
আচ্ছা পাঠক-সর্বশেষ আপনি কী কবিতা পড়েছেন, কার লেখা থেকে পড়েছেন এবং সেটি কবে পড়েছেন? বাংলাদেশের জীবিত কবিদের মধ্যে এখন উল্লেখযোগ্য কে? এবারের বই মেলায় প্রকাশিত বইয়ের তালিকা বহু দীর্ঘ তাবে পাঠের তালিকা এখনো ১৫/২০শেই আটকে আছে। বই মেলায় বইয়ের আলাপের চেয়ে ভিন্ন আলাপ বেশি হয়। হুমায়ুন আহমেদ/আজাদরা যে ফ্যান বেইজ তৈরি করে গেছেন সে স্রােত কিঞ্চিত বইছে বটে তবে এ হাল বেহালে ঠেকতে কত সময় নেয়-সেটাই শঙ্কার।
পাঠক যে হারে কমছে তাতে বইয়ের প্রকাশ হয়তো কমবে না-তবে শিক্ষিত লেখক আর মানসম্মত রুচিশীল বইয়ের সংখ্যা কমবে বই-বাড়বে না! তবুও ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার, বাঙালি পাঠকদের এবং বাংলা একাডেমীর বই মেলার হয়েই বেঁচে থাকুক। (কলামিস্ট : রাজু আহমেদ) সূত্র : এফএনএস