মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:৫২ am
নিজস্ব প্রতিবেদক, তানোর :
রাজশাহীর তানোরে সম্প্রতি ৭ দিনে গভীর নলকূপের অনন্ত ২৫টির মত ট্রান্সফর্মা চুরি হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। কোনভাবেই বন্ধ হচ্ছে না এসব চুরি। শুধু গভীর নলকূপের ট্রান্সফর্মা চুরি নয়, ডিজেল চালিত সেচ যন্ত্র সেলোমেশিন চুরি হয়েছে একাধারে বেশ কয়েকটি। এতে করে গভীর নলকূপের অপারেটর ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর এক প্রকার আতঙ্কে পড়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার দিবাগত রাতে উপজেলার তালন্দ ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার হাসানের তত্বাবধানে থাকা গভীর নলকূপের ৩টি ট্রান্সফর্মা চুরি হয়। হাসানের বাড়ি লালপুর গ্রামে। ওই গ্রামের পূর্বদিকে ধানী মাঠে রয়েছে গভীর নলকূপ। এঘটনার ১ দিন আগে রোববার রাতে একই ইউপি এলাকার দেউল গ্রামের বাসিন্দা মদনের ৩টি, লিটনের ৩টিসহ মোট ৭টি ট্রান্সফর্মা চুরি হয়। এছাড়াও গত বুধবার দিবাগত রাতে তালন্দ ইউপির মোহর গ্রামের অপারেটর ওয়াহেদের ৩টি ট্রান্সফর্মা চুরি হয়েছে বলে জানান ওই গ্রামের কীটনাশক ব্যবসায়ী মাসুদ রানা।
এদিকে, তানোর পৌর এলাকার চাপড়া মহল্লার অপারেটর আনসারের ৩টি ও তালন্দ ইউপির কালনা গ্রামের অপারেটর আনোয়ারের গভীর নলকূপের ৩টি ফ্রান্সফর্মা চুরি হয়েছে। এবিষয়ে অপারেটর আনোয়ার জানান, গত রোববার দিবাগত রাতে টান্সফর্মাগুলো চুরি হয়েছে। চুরির পর থেকে সেচ দেওয়া বন্ধ রয়েছে। ৩টি টান্সফর্মার জন্য বিএমডিএতে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। তারপর মিলবে টান্সফর্মা। কতদিনে পাওয়া যাবে, সেটারও কোন দিন তারিখ নেই। এতদ্রুত সময়ের মধ্যে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া কষ্টকর।
কৃষকরা জানান, পুরোদমে বোরো মৌসুম। যেন সেচ যন্ত্রের দোম ফেলার সময় নেই। ফলে প্রতিদিন চাষের জমেিত দিতে হচ্ছে সেচ। একটি গভীর নলকূপ এলাকায় প্রায় ১৪০ থেকে ১৮০ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করা হয়। চুরির পর থেকে সেচ চলছে না। আর এসময় সেচ দিতে না পারলে ধানের প্রচুর ক্ষতি হবে। একটি গভীর নলকূপে ৩টি ট্রান্সফর্মা থাকে। এসব ৩টি ট্র্রান্সফর্মার জন্য বিএমডিএ অফিসে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা দেয়া হলে মিলবে ট্রান্সফর্মা। অপারেটররা কতদিনে এতো টাকা জমা দিবে, আর কতদিনে মিলবে ট্রান্সফর্মা এর কোন হিসেব নেই। সময়মত সেচ না হলে আবাদ হবে না। আর এখন ধানগাছের বয়স এক মাস থেকে ৪০-৪৫ দিন হচ্ছে। সেচ না পেলে বোরো আবাদ চরম হুমকিতে পড়বে। দ্রুত সময়ের মধ্যে টান্সফর্মা না পাওয়া গেলে বেকায়দায় পড়তে হবে কৃষকদের।
কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, গভীর নলকূপের ট্রান্সফর্মা চুরির দোহায়ে স্কীমভুক্ত কৃষকদের কাছ থেকে টাকা আদায় শুরু হয়ে গেছে। একারণে সেচ হারও হবে দ্বিগুণ। যাই হোক দ্রুত সময়ের মধ্যে ট্রান্সফর্মা পাওয়া গেলে চাষাবাদ সুষ্ঠুভাবে হবে। তা নাহলে পথে বসতে হবে। সপ্তাহের ব্যবধানে এতো ট্রান্সফর্মা কিভাবে চুরি হয় এটা বড় প্রশ্ন। যারা এসব কাজ করে তাদের যোগসাজশ ছাড়া সম্ভব নয়। কারণ সবার দ্বারা এ কাজ করা অসম্ভব বলে একাধিক কৃষক দাবি করেন।
বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, কয়েকটির বিষয়ে থানায় জিডি করা হয়েছে। ট্রান্সফর্মা পেতে হলে নিয়ম অনুযায়ী টাকা জমা দেওয়ার পর পাওয়া যাবে ট্রান্সফর্মা। তবে, যেহেতু বোরো ধান মাঠে এজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে যদি কোন সুযোগ থাকে তাহলে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।
তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামরুজ্জামান মিয়া জানান, আমার মনে হয় এসব চুরির সাথে অপারেটর ও মেকানিকের যোগসাজশ অবশ্যই আছে। তাছাড়া এতো ট্রান্সফর্মা কিভাবে চুরি হয়। আর অপারেটরের দায়িত্ব এসব হেফাজত করা। কিন্তু তারা হেফাজত করছেন না। কারণ সেচ মৌসুম কিছু হলেই কৃষকের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা যাবে। তদন্ত চলছে অল্প সময়ের মধ্যে সবকিছু বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন ওসি। রা/অ