বৃহস্পতিবর, ১৯ েপ্টেম্বর ২০২৪, সময় : ১১:১৫ pm

সংবাদ শিরোনাম ::
ঢাবিতে সব ধরনের রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিখোঁজের সাতবছর পর ছেলেকে ফিরে পেলেন উচ্ছ্বসিত মা তানোরে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত রাসিকের সাবেক কাউন্সিলর মনসুরের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন সেই রুবেল আরও ৭ দিনের রিমান্ডে সিলেবাস সংক্ষিতের দাবিতে রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শেষে সমাবেশ পবায় উপজেলা প্রশাসনে ও কাটাখালি পৌরসভায় ভোগান্তি চিত্র নায়িকা পরীমণি পালন করলেন ‘বিবাহ বিচ্ছেদ’ দিন এক দফা দাবিতে রাজশাহীতে নার্সদের মিছিল শেষে মানববন্ধন প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য রহমত : দুধরচকী রাজশাহীতে শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ডলার সংকটে বাংলাদেশকে সার দিচ্ছে না সরবরাহকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনা বাতিল রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বিচারিক ক্ষমতা পেলো সেনাবাহিনী আন্দোলনের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করলেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ বাগমারায় অধ্যক্ষ ও সভাপতির অনিয়মের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টি গুজব : আসিফ মাহমুদ একদিনের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা রাজশাহী আসছেন আজ বাংলাদেশ ও ভারত ভিসা জটিলতায় চার যৌথ সিনেমা একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির শাহরিয়ার কবির আটক
বিদেশি ‘মাতব্বরি’ কেন গায়ে লাগছে না সরকারের? রুমিন ফারহানা

বিদেশি ‘মাতব্বরি’ কেন গায়ে লাগছে না সরকারের? রুমিন ফারহানা

বেশিদিন আগের কথা নয়, যখন বিদেশিরা বাংলাদেশ নিয়ে কোনও কথা বললেই এক শ্রেণির বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজ সহ আওয়ামী লীগের হর্তা-কর্তাদের পাল্টা তর্জন-গর্জন শুরু হয়ে যেতো। টক’শোর টেবিলে ঝড় উঠতো জাতীয়তাবাদকে উসকে দিয়ে। ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ আর ২ লাখ মা-বোনের ওপর নির্যাতনের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সম্মান ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলেই তারা মনে করতেন। বিশেষ করে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতার প্রশ্নে কেউ কিছু বললেই সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা কূটনীতিকদের আচরণবিধি সংক্রান্ত ‘ভিয়েনা কনভেনশন’ স্মরণ করিয়ে দিতে কিছুমাত্র দেরি করতেন না।

বিদেশিদের ওপর সরকার এতটাই নাখোশ ছিল যে, খোদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে এমন সব কথা বলেছেন, যা কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত তো বটেই এমনকি ন্যূনতম রাজনৈতিক শালীনতার মধ্যেও পড়ে না। এই বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তিনটি উক্তি যদি দেখি-

১) ‘বিদেশিদের জ্ঞান খুবই সীমিত। বাংলাদেশ সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জ্ঞান রাখে বাঙালিরা। বিদেশিরা আমাদের যখন মাঝেমধ্যে সুপারিশ দেয়, তখন এগুলো খুব ‘আহাম্মকে’র মতো মনে হয়। কারণ, এই দেশ হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম দেশ, যেখানে আমরা ডেমোক্রেসির (গণতন্ত্র) জন্য, মানবাধিকার, মানুষের ডিগনেটির (মর্যাদা) জন্য রক্ত দিয়েছি।’

২) ‘আপনারা বিদেশিদের নিয়ে এত হৈচৈ করবেন না। আপনাদের কারণেই বিদেশিরা পাত্তা পাচ্ছে। আপনারা বিদেশিদের কাভার করা বন্ধ করেন। কাভারেজ যদি বন্ধ করেন তাহলে পরের দিন ওরা (বিদেশিরা) খালি ঘরে বসে হুক্কা খাবে। বুঝছেন? তারা এটা মজা পায়। মনে করে তারা এদেশের রাজা।’

৩) ‘এই দেশের সৃষ্টি হয়েছিল গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য। যখন (সত্তরের নির্বাচনে) আওয়ামী লীগ মেজোরিটি পেলো, তাদের সরকার গঠন করতে দিলো না। তখনই তো আমরা আন্দোলন শুরু করলাম। তারপর জেনোসাইড (গণহত্যা) হওয়ার পর আমরা স্বাধীনতা ঘোষণা করলাম। আমাদের (দেশের) জন্ম হয়েছে ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান জন্য, তুলে ধরার জন্য। এই দেশের প্রত্যেক মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এই প্রিন্সিপালগুলো আছে। তাই আমাদের অন্যরা মাতব্বরি করে এই পরামর্শ দেওয়ার দরকার নেই। উনারা নিজেদের আয়নায় দেখুক।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায় ‘আহাম্মক’, ‘মাতব্বর’ বা ‘হুক্কা খাওয়া’ বিদেশিরা গত কয়েক মাস যাবত ক্রমাগত বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা নিয়ে কথা বলে যাচ্ছেন। এই জানুয়ারিতে প্রথমে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা (বিশেষ সহকারী) এবং হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ঊর্ধ্বতন পরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল আইলিন লাউবাচার। এরপর হলো অতি আলোচিত সফরটি– মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু আসলেন বাংলাদেশে। মার্কিন সরকারের নানা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সফর চলতে থাকে ফেব্রুয়ারিতেও। এই মাসেই গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রমবিষয়ক মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কারা ম্যাকডোনাল্ড এর আসার কথা থাকলেও কোনও এক অজানা কারণে সফরটি স্থগিত হয়। আর সর্বসাম্প্রতিক সময়ে হয়ে গেলো মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কাউন্সিলর ডেরেক শোলে এর সফর। কাছাকাছি সময়ে বাংলাদেশ সফরে আসা প্রত্যেকেরই মূল বক্তব্য ছিল মোটামুটি একই রকম।

মার্কিন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এসব পদধারীগণ সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন গণতন্ত্রের ওপর, সাধারণ মানুষের ভোটাধিকারের ওপর। এছাড়াও তারা বারবার বলেছেন আগামী নির্বাচন যেন যে কোনও মূল্যে অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য হয়। তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণের বিরুদ্ধে তাদের শক্ত অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। এই অঞ্চলে আমেরিকার কৌশলগত পরিকল্পনা ইন্দোপ্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির অংশ হওয়ার চাপ অব্যাহত রেখেছেন সকলেই। মিয়ানমারের নতুন পরিস্থিতিতে আমেরিকা নতুন করে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আগ্রহী হওয়ার প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা সংকটও আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে।

তাদের এই যাওয়া আসার মধ্যেই বাইডেন প্রশাসন দ্বিতীয় দফায় আয়োজন করলো গণতন্ত্র সম্মেলনের। সেখানেও জায়গা পেলো না বাংলাদেশ। এই বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করতেই খেপে গেলেন তিনি। বললেন– ‘তারা যাকে ইচ্ছা দাওয়াত দেবে এবং যাকে ইচ্ছা দেবে না। এটি তাদের বিষয়। অনেক দেশকে তারা দাওয়াত দেয়, যেখানে গণতন্ত্রের নামগন্ধ নাই। আপনাদের মনে রাখা উচিত, বাংলাদেশের গণতন্ত্র দুনিয়ার অন্য যেকোনও দেশের গণতন্ত্রের থেকে ভালো।’

‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র অন্য যে কোনও দেশের গণতন্ত্রের থেকে ভালো’– এমন দাবি করতে হিম্মত লাগে; পররাষ্ট্র মন্ত্রীর হিম্মত আছে সন্দেহ নেই।

বাংলাদেশের দরজায় কড়া নাড়ছে আরেকটি নির্বাচন। সেই নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, যতটা উদ্বিগ্ন, আমাদের উন্নয়ন সহযোগী বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোও তার চাইতে কম উদ্বিগ্ন নয়। কিন্তু মজাটা হলো, তাদের এই উদ্বেগ উৎকণ্ঠাকে এখন আর দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো কিংবা মাতব্বরি মনে হচ্ছে না সরকারের। আর এদেশের নাগরিক সমাজের অধিকাংশ সদস্যের মতামত যেহেতু তৈরি হয় সরকারের মতামতের ওপর ভিত্তি করেই তাই বাইরের দেশগুলোর এই উদ্বেগ উৎকণ্ঠাকেও তারা স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছেন। তবে সরকারের এই মনে না হবার বেশ কিছু কারণ আছে।

১. সরকার জানে, বিগত কয়েকটি নির্বাচন কেমন ছিল। সুতরাং সেই নির্বাচনকে সুষ্ঠু দাবি করে সেটি নিয়ে জোর গলায় কথা বলা ধোপে টিকবে না বলে ক্ষমতাসীনরা অবশেষে নিশ্চিত হয়েছে।

২. দীর্ঘদিন ধরে বিদেশিদের বিরুদ্ধে সরকারের দেখানো ‘জেহাদি জোশ’ কাজ না করে উল্টো তাদেরকে আরও ক্ষিপ্ত করে তুলতে পারে, এটা সরকার আঁচ করতে পেরেছে।

৩) বর্তমান ডলার সংকটে আইএমএফ এবং আরও সব পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত সংস্থার ঋণ না পেলে সরকার দেউলিয়া হয়ে পড়ার বড় আশংকা তৈরি হবে। পশ্চিমাদের ক্ষুব্ধ করলে সেসব ঋণ না পাওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে বড় সংকটে পড়বে সরকার।

৪. মার্কিন স্যাংশনও এক ধরনের আতংক তৈরি করেছে সরকারের ওপর।

মজার ব্যাপার হলো, দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো নিয়ে বিরক্ত হয়ে বাংলাদেশে বিদেশি দূতাবাসগুলোর বিরুদ্ধে বিষোদগার করা আওয়ামী লীগ এখন বিদেশি দূতাবাসে যেতে পেরে কৃতার্থ বোধ করে। কয়েক দিন আগেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন দূতাবাসে এক বৈঠকে আওয়ামী লীগের এক প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়ে বৈঠক শেষ করে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপি কাউকে না জানিয়ে গোপনে দূতাবাসে আসে, আর আওয়ামী লীগ নিমন্ত্রণ পেয়ে এখানে বৈঠক করতে এসেছে।’ লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট। প্রকাশক ও সম্পাদক, ইত্তেহাদ। সূত্র : বাংলাট্রিবিউন

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.