রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:৫৫ am
আর কে রতন, বিশেষ প্রতিবেদক :
রাত পোহালেই পয়লা ফাল্লুন। শীতের রিক্ততা ভুলে প্রকৃতিতে বইছে ফাগুনী হাওয়া। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ভাষায়, ‘ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত’। ষড়ঋতুর পরিক্রমায় প্রকৃতিতে এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত। সেই ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন রাত পোহালেই। কোকিলের মধুর কুহু ডাক, রঙিন ফুলের আগুনে রূপ মনে দোলা দিয়ে যায়। গাছে গাছে ছড়িয়ে রয়েছে আমের মুকুল। অলৌকিক স্পর্শে জেগে উঠেছে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, নাগলিঙ্গমসহ কতশত ফুল। মধুকর ব্যস্ত মধুপানে। সত্যি সত্যি বসন্ত ঋতুরাজ। এই দিনে অসংখ্য রমণী বাসন্তী রঙে নিজেদের রাঙিয়ে রাজপথ, পার্ক, পদ্মার পাড়সহ রাজশাহীজুড়ে মুখর থাকবেন প্রিয় মানুষের সঙ্গে। কারও আজ হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা।
বসন্ত দিনের সকাল থেকেই ফালগুনী রঙে সেজেছে রাজশাহীজুড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ থেকে শহরের ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী কলেজ ছাড়াও ফাগুনের হাওয়ায় নানা উচ্ছাসে ঋতুরাজ বরণে নানা আয়োজন চলছে কয়েক দিন হতে রাজশাহী সদর হতে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের আনাচে কানাচে পর্যন্ত। গাছে গাছে যখন ফুটেছে শিমুল, পলাশ। উঁকি দিচ্ছে আমের মুকুলও। চারপাশে মৌ মৌ গন্ধ। এমন মিষ্টি গন্ধের মধ্যে ঋতুরাজের আগমনে যেন মাতোয়ারা রাজশাহীর তরুণ-তরুণীরা। বাসন্তি রাঙা শাড়ি পরে আর খোঁপায় ফুল গুঁজে তারা নেমেছেন বসন্ত বরণে। বিনোদন কেন্দ্র থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতেও বসন্ত বরণের উৎসব যেন সর্বত্র উচ্ছাসে পরিণত হয়েছে। নাচে আর গানে ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করে নিয়েছে রাজশাহীর বিভিন্ন বিদ্যালয়ের তরুণ-তরুণীরা।
বসন্তের রং লাগে তাদের বাহারি রঙের পোশাকেও। মেয়েদের খোঁপায় শোভা পায় ফুল। সারাদিন গল্পে-গানে-আড্ডায় তারা জমিয়ে রাখে ক্যাম্পাসের আড্ডার স্থানগুলো। ফাগুনের আগমন শুধু শিমুল-পলাশের বনকেই নয়, রাঙিয়েছে রাবির তরুণ শিক্ষার্থীদের মনকেও। অন্য যেকোন দিনের চেয়ে প্রাণোচ্ছ্বল দিন ফাল্গুনের প্রথম সকাল। সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা বাসন্তি সাজে বেড়িয়ে পড়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভিড়। প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে শহরের অনেকেও ঢুকে পড়েন ক্যাম্পাসে। মেয়েদের পরনে বাসন্তি রঙের শাড়ি অথবা সালোয়ার, খোঁপায় শোভা পায় আগুনরঙা ফুল। ছেলেরদের পরনে বাসন্তি রঙের পাঞ্জাবি অথবা ফতুয়া। বসন্ত যেন তরুণ-তরুণীর প্রাণে সঞ্চার করেছে সজীবতা আর উদ্দামতা। শীতের রিক্ততা মুছে প্রাণের স্পন্দনে একটু একটু করে জেগে উঠেছে প্রকৃতি, ঠিক তেমনি করে বসন্তের ফুলে সেজে উঠেছে প্রকৃতি।
রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের সহকারি অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান বলেন, আজ পহেলা ফাল্গুন। বসন্তের প্রথম দিন। শীতের খোলস পাল্টে প্রকৃতি তার রূপ বদলাতে শুরু করেছে। গাছের পাতা ঝরতে শুরু করেছে আরও কয়েকদিন আগে থেকেই। গ্রামাঞ্চলে শোনা যাচ্ছিল কোকিলের ডাক। গাছে গাছে সবুজধ পাতা আর নানা রঙ্গের ফুল। শিমুল বন আর কৃষ্ণচূড়ারা সেজেছে সূর্যের সাথে তাল মিলিয়ে রক্তিম রঙে। কোকিলরা গান ধরেছে ভ্রমরের গুনগুনানির তালে তালে। চারদিকে শোনা যায় ঝড়া পাতার নিক্কন ধ্বনি। বসন্ত বারৈ খুঁজে পায় নিজের নামের স্বার্থকতা।
মোহনপুর সরকারি কলেজের সহকারি অধ্যাপক হাফিজুর রহমান বলেন, এ দিনটি বিশেষ করে তরুণীরা বাসন্তি রঙের শাড়ি আর মাথায় হলুদ ফুল দিয়ে নিজেরদের নুতন করে সাজিয়ে তোলে। আর তরুণরা সাজে হলুদ রঙের পাঞ্জাবিতে। গ্রাম-বাংলায় বিশেষ আয়োজনে চলে পিঠা উৎসব। আর শহরে এটি পায় বিশেষ আনুষ্ঠানিকতা।
অন্যদিকে, ফালগুনের এই দিন অর্থাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারি, ভালোবাসার দিন। বিশ্ব ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালোবাসা দিবস। ঋতুরাজ বসন্তের এই দিনে ভালোবাসা দিবসেও বাঙালি মনের ভালোবাসাও হয় পবিত্র। ফুলে রাঙা আর বাসন্তী মোহে মুগ্ধ।প্রকৃতির পালাবদলে আজ এসেছে বসন্ত, সেই ফাগুনের মাতাল হাওয়ায় কাল উদ্দাম ভেসে যাবে প্রেম পিয়াসী তরুণ-তরুণী, ভালোবাসার রঙে রঙিন হবে হৃদয়। মনের যতো বাসনা, যতো অব্যক্ত কথা ডালাপালা মেলে ছড়িয়ে পড়বে বসন্তের মধুর হাওয়ায়। কপোত-কপোতী পরস্পরকে নিবেদন করবে মনের যতো কথা, জানাবে ভালোবাসা। এ দিবসে ভালোবাসা শুধুই প্রেমিক আর প্রেমিকার জন্য নয়। মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, ভাইবোন, প্রিয় সন্তান এমনকি বন্ধুর জন্যও ভালোবাসার জয়গানে আপ্লুত হতে পারে সবাই। চলবে উপহার দেয়া নেওয়া। রা/অ