রবিবর, ১০ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১১:০৩ am
আর কে রতন, বিশেষ প্রতিবেদক :
দেশের শস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত উত্তরের জেলা রাজশাহী এখন আমের রাজধানী হিসেবেও পরিণত হয়েছে। যেদিকে চোখ যায় গাছে গাছে এখন শুধু দৃশ্যমান সোনালী মুকুলের আভা। মুকুলের ভারে নুয়ে পড়ার উপক্রম প্রতিটি গাছ। মৌমাছিরাও আসতে শুরু করেছে মধু আহরণে। শীতের জড়তা কাটিয়ে কোকিলের সেই সুমধুর কুহুতানে মাতাল করতে আবারও ফিরে আসছে বাংলার বুক মাতাল করতে ঋতুরাজ বসন্ত।
রাজশাহী অঞ্চলে গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে আমের সোনালী মুকুল। প্রায় সব জায়গায় চোখে পড়ছে মুকুলে ছেয়ে যাওয়া সারি সারি আমগাছ। এভাবে ফাগুনের আগেই গাছে গাছে প্রস্ফূটিত আমের মুকুল সর্বত্র ছড়াচ্ছে হাল্কা স্বর্ণালী আভা। আম চাষি ও বাগান মালিকরা বলছেন, মাঘের মাঝামাঝিতে গাছে মুকুল দেখে তারা বুঝছেন, আমের মৌসুম এসে গেছে। বাগানের গাছগুলোর যত্ন নিতে পরিশ্রম শুরু করে দিয়েছেন। ভালো ফলনের আশায় বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত তারা। রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকাজুড়ে এখনো শীতের হাল্কা আমেজ বিরাজ করলেও আগাম জাতের আমগাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে এবার তীব্র শীতের শেষে ঋতুরাজ বসন্ত মানুষের হৃদয়ে দোলা দিচ্ছে। আমগাছের শাখাগুলো ভরা উজ্জ্বল সোনালী মুকুল যেন আকাশের বুকে ডানা মেলে দিয়েছে। মুকুলে ছেয়ে যাওয়া আমগাছগুলো আলাদা শোভা ছড়িয়েছে। সবুজপাতার কিনার ছাপিয়ে ওঠা মুকুলের সোনালী রেণু যেন ফুলশয্যা সাজিয়ে স্বাগত জানাচ্ছে বসন্তের রানীকে।
মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মুকুলে ভরে গেছে বাগানসহ ব্যক্তি উদ্যোগে লাগানো আম গাছগুলোতে। তবে বড় আকারের চেয়ে ছোট ও মাঝারি আকারের গাছে বেশি মুকুল ফুটেছে। সেই মুকুলের ম ম গন্ধে বাগান মালিকদের চোখে ভাসছে সফলতার স্বপ্ন। দেশি আমের পাশাপাশি আম্রুপালি, গোপালভোগ, ল্যাংড়া, ফজলি জাতের আম অন্যতম। ইতোমধ্যে এসব গাছে মুকুল আসা শুরু হয়েছে।
মোহনপুর উপজেলার কামারপাড়া এলাকার বাগান মালিক ইকবাল হোসেন বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর আম বাগানের সারি সারি গাছে গাছে মকুল বেশি এসেছে আর সেই মুকুলে ছেয়ে আছে গাছের ডালপালা। বাতাসে মিশে আসে মুকুলের মৌ মৌ ঘ্রাণ। যে ঘ্রাণ মনকে বিমোহিত করে। পাশাপাশি মধুমাসের আগমনী বার্তা জানাচ্ছে আমের মুকুল। তিনি আরো বলেন, আমের ফলন নির্ভর করছে আবহাওয়ার ওপর। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর আমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন এ চাষি।
চারঘাট উপজেলার ফিরোজ মন্ডল জানান, আম বাগানগুলোতে মুকুল আসায় যেনো মনে হচ্ছে হলুদ আর সবুজের মহামিলন। মুকুলে ছেয়ে আছে গাছের প্রতিটি ডালপালা। চারদিকে ছড়াচ্ছে সেই মুকুলের সুবাসিত পাগল করা ঘ্রাণ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভাল মুকুল ধরেছে এবং এখন পুরোদমে পরিচর্যা চলছে।
নতুন সাজে যেন সেজেছে জেলার ৯ টি উপজেলার ৭২টি ইউনিয়নের বাগানগুলো। আমের মুকুলে ভরপুর আর ঘ্রাণে রাজশাহীর সর্বত্র জানান দিচ্ছে বসন্তের আগমনী বার্তা। শোভা ছড়াচ্ছে নিজস্ব মহিমায়। মুকুলে মুকুলে ভরে গেছে বাগানগুলো প্রায় ৭০ শতাংশ গাছেই এসেছে মুকুল। বাগান মালিক, কৃষি কর্মকর্তা ও আম চাষিরা আশা করছেন, বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে জেলায় আমের বাম্পার ফলন হবে।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২১-২২ মৌসুমে রাজশাহী জেলায় ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছিল। তার আগের বছর ২০২০-২১ মৌসুমে আমের চাষ হয়েছিল ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে। আর ২০১৯-২০ মৌসুমে রাজশাহীতে আমের আবাদ হয়েছিল ১৭ হাজার ৬৮৬ হেক্টর জমিতে।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আম ও লিচু গাছের ধর্ম একবার বেশি ফল ধরবে, একবার কম ফল ধরবে। গত বছর রাজশাহীতে কম আম হয়েছে। যে গাছগুলোতে আম কম হয়েছে বা আসেনি। সেই গাছগুলোতে এ বছর আগাম আমের মুকুল দেখা দিয়েছে। শীত বাড়ার আগেই এই মুকুলগুলো গাছে এসেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গুঁটি আম থেকে শুরু করে ফজলি, বারি-৪ জাতের আমের গাছে মুকুল দেখা গেছে। বেশি কুয়াশা পড়লে মুকুল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এখনও বেশির ভাগ গাছে মুকুল বের হয়নি। তাতে হতাশার কিছু নেই। কারণ শীত কমলেই গাছে গাছে মুকুল ছেয়ে যাবে।’ রা/অ