রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১২:২৪ am
ডেস্ক রির্পোট :
জনগণের কাছ থেকে টাকা লুট করতেই সরকার বিদ্যুতের দাম বারবার বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করতে হলে তা কমিশনের মাধ্যমে যায়, গণশুনানি লাগে। এ গণশুনানিকে উপেক্ষা করে সরকার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করেছিল।
আবার একইভাবে তারা আরও ৫ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করেছে। মাসে মাসে নাকি বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করবে। অর্থাৎ আজকে সরকারের হাতে টাকা নেই। এ দেশের সাধারণ মানুষ থেকে লুট করে টাকা নেওয়ার জন্য বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করছে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করছে, পানির দাম বৃদ্ধি করছে। অথচ সরকার জনগণকে বিদ্যুৎ দিতে পারে না, গ্যাস দিতে পারে না, পানি দিতে পারে না। এ দেশের মানুষের অবস্থা আজকে অত্যন্ত দুর্বিষহ।
মঙ্গলবার দুপুরে গাবতলী বাস টার্মিনালের কাছে ‘নীরব পদযাত্রা’র তৃতীয় দিনের কর্মসূচির শুরুতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মোশাররফ এসব কথা বলেন।
বিদ্যুৎ বিভাগ মঙ্গলবার সকালে এক প্রজ্ঞাপনে পাইকারিতে গড়ে ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ এবং খুচরায় ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য বিদ্যুতের নতুন মূল্যহার নির্ধারণ করেছে।
টাকার অভাবে পণ্য খালাস হচ্ছে না উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতিও একই কারণ। তারা আজকে পণ্য আমদানি করতে পারছে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের স্টিমার এসে বসে আছে। টাকা দিতে পারে না বলে মাল খালাস করতে পারে না। আবার বড় বড় কথা বলে। কারা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রবমূল্য বৃদ্ধি করছে? আওয়ামী লীগের সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা, যারা বিদেশে টাকা পাচার করে। আজকে এ দেশে দুর্ভিক্ষের অবস্থা সৃষ্টি করেছে, অর্থনীতি ধবংস করে দিয়েছে।
দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশের অবনমনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এত লেখালেখি হচ্ছে, বিদেশিরা চাপ দিচ্ছেন, তারপরও গত কয়েক মাসে দেখেন কী পরিমাণ দুর্নীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। সারা পৃথিবীর বুকে দুর্নীতির পরিলেখকে আমরা সর্বনিম্ন ১৩ নম্বরে ছিলাম। সেটা আরও একধাপ কমে দেখা গেল ১২-তে নিচে নেমে এসেছে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক হিসাবেও দেখা যাচ্ছে, দুর্নীতি দমন তো দূরের কথা, দুর্নীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুর্নীতি করে আওয়ামী লীগের সিন্ডিকেট, অতএব তাদের দুর্নীতি দমন করা সম্ভব নয়। সেজন্য দেশের মানুষ এই সরকারের পদত্যাগ চায়, যত দ্রুত বিদায় করতে চায়।
বিএনপির পদযাত্রা সরকারের বিদায়ের অগ্রিম শোভাযাত্রা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের এত নির্যাতনের পরও বিএনপি ঘরে বসে যায়নি, এ দেশের জনগণও বসে যায়নি। বরং সরকারকে বিদায় করার জন্য রাস্তায় নেমেছে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি, রাস্তায় আছি। আওয়ামী লীগ ভয়ে ভীত হয়ে বিএনপির পথযাত্রাকে নানা নামে সমালোচনা করছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা বলতে চাই, এ সরকারের সময় শেষ। আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের বাংলাদেশ। অতএব এ সরকারকে বলব বিদায় নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিন। আমরা কিন্তু বিদায়ের অগ্রিম শোভাযাত্রার এ পদযাত্রা করছি। এটাকে যা-ই মনে করেন না কেন, সরকারের বিদায়ের এটা হচ্ছে বিএনপির শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, বেশি সময় নাই। আমরা দ্রুত এ সরকারকে বিদায় দিতে সমর্থ হব। এজন্য আমাদের মধ্যে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হক।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে দুপুর আড়াইটায় ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে মাজার রোড দিয়ে মিরপুর এক নম্বর হয়ে ১০ নম্বর গোল চত্বর পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার পথে দেড় ঘণ্টার ‘নীরব পদযাত্রা’ করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। রাজধানীর গাবতলী-মিরপুরের ব্যস্ততম সড়কে পদযাত্রার কারণে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। সড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
চারদিনের এ পদযাত্রা কর্মসূচির প্রথম দিন গত শনিবার বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ার থেকে মালিবাগের আবুল হোটেল পর্যন্ত, সোমবার যাত্রাবাড়ী থেকে জুরাইন রেলগেট পর্যন্ত পথযাত্রা করে বিএনপি। বুধবার শেষ দিনে এই কর্মসূচি হবে মুগদা থেকে মালিবাগ পর্যন্ত।
পদযাত্রায় আরও অংশ নেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবদুস সালাম আজাদ, নাজিম উদ্দিন আলম, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, মীর সরাফত আলী সপু, ডা. রফিকুল ইসলাম, সাইফুল আলম নিরব, রিয়াজ উদ্দিন নসু, এসএম জাহাঙ্গীর, মহানগর উত্তরের মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি, এসএ ছিদ্দিক সাজু, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, নায়াবে ইউসুফ, ফরিদা ইয়াসমীন, যুবদলের মামুন হাসান, মোনায়েম মুন্না, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএস জিলানি, রাজিব আহসান, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ। সূত্র : যুগান্তর