মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৮:১৬ am
ইমরান হোসাইন :
মানব সেবার শপথ নিয়েই চিকিৎসকদের চিকিৎসা পেশায় প্রবেশ করতে হয়। চিকিৎসকরা মানুষের জীবন রক্ষায় কাজ করেন। রোগীর পাশে বিশ্বস্ত বন্ধুর মতো দাঁড়াতে হয় চিকিৎসকদের। গ্রামীণ জনপদে উন্নত সেবার এক অনন্য দৃষ্টান্ত রাজশাহীর তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সের চিকিৎসকরা। এরমধ্যে অন্যতম মেডিকেল অফিসার ডা. মিজানুর রহমান।
তানোরের বেশির ভাগ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র কেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির সার্বিক অবকাঠামোর সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি, নিয়ম শৃঙ্খলার উন্নতি ও সেবারমানে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে হাসাপাতালের সেবা নিয়ে এলাকার মানুষ বেশ সন্তোষ্ট।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বার্নাবাস হাসদাক এর দিক নিদের্শনায় মেডিকেল অফিসার ডা. মিজানুর রহমানের দক্ষ চিকিৎসা সেবায় ও ব্যবস্থাপত্রে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়েও রোগীরা এখন আন্তরিকতাপূর্ণ সেবা পাচ্ছেন। তিনি প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত আউটডোরে অসংখ্য মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন। শুধু তাই নয়, সরকারি ছুটির দিনেও উপজেলার প্রত্যান্ত এলাকায় যেমন তালন্দ, মাদারীপুর, কামারগাঁ, কলমা, ডরগাঁডাঙ্গা, সরনজাই ও চাঁন্দুড়িয়া এলাকায় সেবা প্রদান করে আসছেন তিনি। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে নানার বাড়িতে বেড়ে ওঠার সুবাদে ছোটবেলা থেকেই ডাক্তার হবার স্বপ্ন দেখেন। তারই ধারাবাহিকতায় ৩৯ তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) এ মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হন। সেই স্বপ্ন বাস্তবে সত্যি হয়। এঅবস্থায় তিনি গত বছরের ২৭ জানুয়ারী তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পোস্টিং পেয়ে গ্রামের গরীব দুঃখি মানুষের পাশে থেকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। অবশ্য এরআগে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেক হাসপাতালে ছিলেন।
ডা. মিজান বলেন, তিনি ডাক্তার হবার স্বপ্নে তাঁর ইচ্ছা শক্তি ও মনবল নিয়ে লেখাপড়া শুরু হয় গ্রামেই অবস্থিত আকচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ওই বিদ্যালয়ে প্রত্যেক ক্লাশে ফাস্ট বয় ছিলেন তিনি। সেই সুবাদে প্রাথমিক বৃত্তিসহ পঞ্চম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে আকচা উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি লাভ করে ২০০৫ সালে এসএসসিতে জিপিএ-৫ অর্জন করেন।
ডা. মিজানের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে তানোর সরকারি আব্দুল করিম সরকার ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে ৪.৯০ পেয়ে ডাক্তারি পড়ালেখার জন্য প্রিপারেশন নেন। ফলে একই বছর এমবিবিএস মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৪ সালে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ পাশ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএমএম ইউ) ডি অর্থোপেডিক্স হাড়জোড়া ও বাত ব্যথা বিষয়ে অধ্যায়ন করেন। পরে তিনি ৩৯ তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারে মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পার্শ্বে অবস্থিত আমশো মথুরাপুর মহল্লার বাসিন্দা প্রভাষক রাকিবুল সরকার পাপুল বলেন, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও ডা. বার্নাবাস হাসদাক ও মেডিকেল অফিসার মিজানুর রহমান যোগদানের পর থেকে হাসপাতালে রোগীদের খাবার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ নানামুখী সৃজনশীল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। আউট ডোরে দেড় থেকে দুই শতাধিক নিয়মিত রোগী দেখছেন ডা. মিজান। তাছাড়া রাত অবধি টিএইচওকে হাসপাতালে কর্মব্যস্ত সময় পার করতেও দেখা গেছে। আসলে চিকিৎসকদের একটু দরদি স্পর্শ, একটু সহানুভূতি, একটু হাসিমাখা মুখের কথায় জটিল ও কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিকেও আশাবাদী করে তোলে ও রোগযন্ত্রণা ভুলিয়ে দেয় বলে সব ডাক্তারদের চিকিৎসা প্রদানের প্রশংসা করেন পাপুল সরকার।
এবিষয়ে চাঁদপুর মহল্লার বাসিন্দা মিনারুল ইসলাম বলেন, বেশ কয়েক মাস আগে খেলতে গিয়ে মাটিতে পড়ে তার এক সন্তানের পা ভেঙ্গে যায়। বেশ কয়েকজন স্থানীয় ডাক্তারকে দেখানো হয়। কিন্তু ভালো হয়নি। পরে কিছু লোকের পরামর্শে তানোর মেডিকেলের ডাক্তার মিজান সারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা করায়। এমন চিকিৎসায় তার ছেলের পা সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেছে।
৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে চিকিৎসক রয়েছেন ১৪ জন। আর বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ৬ জন। এছাড়াও সেবিকা রয়েছেন ২৫ জনই। এসব ডাক্তার ও নার্সরা রোগীদের নিয়মিত সেবা দিচ্ছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর জরুরী ও বহির্বিভাগে। উপজেলায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক রোগী সেবা নিয়ে থাকেন বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বার্নাবাস হাসদাক।
তিনি আরও বলেন, ‘মুজিব বর্ষে স্বাস্থ্য খাত, এগিয়ে যাবে অনেক ধাপ’। এই স্লোগানের মাধ্যমে একটি পরিকল্পনা করি কীভাবে এই হাসপাতালের পরিবর্তন আনা যায়। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। স্থানীয় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী ও সিভিল সার্জন স্যারের সহযোগিতায় সকল চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সকলের সার্বিক সহযোগিতায় আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি সেবার মান বৃদ্ধিসহ হাসপাতালের উন্নয়ন এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে। রা/অ