রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:০৪ am
এম এম মামুন :
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌরসভার মেয়র শহীদুজ্জামান শহীদের বিরুদ্ধে ৭ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ তুলে ধরে ৫ কাউন্সিলর সংবাদ সম্মেলন করেছেন। আজ বুধবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ করেন তাঁরা। এসময় মেয়রের বিরুদ্ধে টাকা লোপাটের মাধ্যমে অট্টলিকা গড়ে তোলাসহ বিভিন্ন দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরেন কাউন্সিলররা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাবুল আক্তার, ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর একরামুল, ৮নম্বর নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসলাম হোসেন, ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছাবের আলী ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল হাফিজ।
লিখিত অভিযোগে তুলে ধরে কাউন্সিলরা বলেন, রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌরসভার বর্তমান মেয়র শহীদুজ্জামান শহীদ বিগত সাত বছরে প্রায় ৭ কোটি টাকা দূর্নীতি ও অনিয়ম করে আত্মসাত করেছেন। ডিপির অর্থায়নে কেশরহাট পৌরসভায় প্রতি অর্থ বছরে ৭৮-৮৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। সে অর্থ দ্বারা পৌরসভার আর্থ সামাজিক উন্নয়নে টেন্ডারের মাধ্যমে ব্যয় হওয়ার কথা থাকলেও মেয়র বিভিন্ন নাম মাত্র কোটেশন দেখিয়ে ইচ্ছেমত বিল ভাউচার বানিয়ে তা পুরো আত্মসাত করেন, যা সম্পূর্ণ আইনের পরিপন্থি। এনিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রালয়, উপ-পরিচালক স্থানীয় সরকার বিভাগ, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়ক ঘেঁসে এ অঞ্চলের বিখ্যাত আর্থিক লেনদেন সমৃদ্ধ বাজার কেশরহাট। এখান থেকে প্রতি বছর ১ কোটি টাকার উপরে হাটের ইজারা মূল্য আদায়সহ, ভূমি কর, রেজিষ্ট্রি অফিস ও হোল্ডিং ট্যাক্স থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করলেও সে অর্থের সঠিক ব্যবহার হয়নি। বরং ওই অর্থ দ্বারা কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে নামে বে-নামে বিভিন্ন বিল ভাউচার ব্যবহার করে মেয়র নিজের দাম্ভিকতা দেখিয়ে ভোগ বিলাস আর বিপুল সম্পদ গড়েছেন, যা দৃশ্যমান।
রাজশাহীর-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য উন্নয়নের রুপকার আয়েন উদ্দীন যখন পবা মোহনপুরকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। সেখানে গত ২-৩ মাস আগে বিশেষ বরাদ্দ বাবদ ৫০ লক্ষ টাকা পৌরসভার বঞ্চিত, অবহেলিত আপামর জনসাধারনের উন্নয়নে ব্যবহার করার কথা। কিন্তু এই বিলাশী ও আত্ম-অহংকারী মেয়র সমস্ত অর্থ লুটপাট করে তার কার্যালয় পুনরায় সাজ সজ্জা করে ৫০ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছেন।
কেশরহাট উন্নয়নে ও রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য সরকার এনসিডিপি মার্কেট নির্মাণ করেছেন। সেখানে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা ভাড়ার মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য করেন। যার আয় উন্নয়ন খাতে জমা হওয়ার কথা। কিন্তু ওই মার্কেট দীর্ঘদিন যাবৎ মেয়র তার মনোনীত ব্যক্তিকে সাইকেল, মোটরসাইকেল গ্যারেজ ও গোডাউন হিসেবে ভাড়া দিয়ে ব্যাক্তিগত ভাবে অর্থ আয় করেছেন। যার কোনো অর্থ উন্নয়ন খাতে জমা হয় না। অত্র পৌরসভায় বিএমডিএফ এর প্রায় ৬ কোটি টাকা অর্থায়নে পৌর সুপার মার্কেট নির্মাণ হয়। গত ৭ বৎসর অতিবাহিত হলেও দ্বিতল ভবনের প্রায় শতাধিক ঘর কোন রেজুলেশন ও নিয়ম, নীতি ছাড়া বরাদ্দের মাধ্যমে ৩ কোটি টাকা আত্মসাত করেন। পৌরসভার কোষাগারে কোন টাকা জমা না করে সম্পূর্ণ আত্মসাত করেন।
মেয়র বিগত ২০১৬ সালের নির্বাচনে তার নির্বাচনী হলোফনামায় যে পরিমাণ সম্পদ দেখান, সেখানে গত ২০২১ সালের নির্বাচনের শতগুন সম্পদ বেড়ে টাকার পাহাড় গড়েছেন। তার নিজস্ব ব্যবসা বাণিজ্য, জমি-জমা বা পরিবারের কেউ কোন চাকুরী না করেও নিজ গ্রামে ডুপ্লেক্স দুইটি ভবন নির্মাণ করেছেন। তিনি এবং তার আপন ছোট ভাই রোকনুজ্জামান টিটু, যিনি কেশরহাট পৌরসভার লাইসেন্স পরিদর্শক পদে নামমাত্র কর্ম করে দুই সহদর মিলে দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় ৩ কোটি টাকার প্রাসাদ গড়েছেন। যার বিভিন্ন আসবার পত্রে ও কারুকাজে বিপুল অর্থের প্রাচুর্য লক্ষনীয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বাংলাদেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাচ্ছেন। তখন কেশরহাট পৌরসভার মেয়র শহীদুজ্জামান শহিদ বিভিন্ন দুর্নীতি ও অপকর্মের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অর্জনকে চরমভাবে বাধাগ্রস্থ করছেন। আমরা আশাকরি এর সঠিক তদন্ত হলে আরো অধিক অপকর্মের চিত্র প্রমাণসহ বেরিয়ে আসবে।
এবিষয়ে কেশরহাট পৌরসভার মেয়র শহীদুজ্জামান শহীদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে কাউন্সিলরা যেসকল অভিযোগ করেছেন তার কোন ভিত্তি নেই বলে এড়িয়ে গেছেন মেয়র শহিদ। রা/অ