রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:০০ am
এম এম মামুন :
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্নসাধারণ সম্পাদক মো. আয়েন উদ্দিন ও তার আপন ভগ্নিপতি মোহনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আব্দুস সালামের বিচার দাবিতে গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে রাজশাহীর রাস্তায় অবস্থান নিয়েছে সুরঞ্জিত সরকার নামের এক আওয়ামী লীগ নেতা।
আজ বুধবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে এমপি মো.আয়েন উদ্দিন ও তার আপন ভগ্নিপতি রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে নির্যাতনের এমন অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রীর নিকট তাদের বিচার দাবিতে আওয়ামী লীগ ওই নেতা এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
অবস্থান নেওয়া ওই আওয়ামী লীগ নেতা শ্রী সুরঞ্জিত সরকার (৪০) উপজেলার রায়ঘাটি ইউনিয়নের হাটরা গ্রামের শ্রী মন্টু চন্দ্র সরকারের ছেলে। এছাড়া সুরঞ্জিত রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সদস্য ও মোহনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শ্রম বিষয়ক সম্পাদক এবং মোহনপুর উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি।
সুরঞ্জিত তার গলায় ঝুলানো প্ল্যাকার্ড লেখেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট বিচার চাই। রাজশাহী-৩ (পবা- মোহনপুর) আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন ও তার দুলাভাই উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কর্তৃক নির্যাতনের শিকার তিনি। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকার মননোয়ন পেলে বিরোধীতা করে ফেল করানো তাকে। এছাড়াও এমপির ক্যাডার বাহিনী দিয়ে হামলা করে হত্যার চেষ্টা ও অর্ধপঙ্গু বানানো হয়। ২০২১ সালে ইউনিয়ন নির্বাচনে নৌকার মননোয়ন চাইলে হিন্দু জাতি ধর্ম তুলে কটুক্তি ও অশ্লীল ভাষায় গালি গালাজ করা হয়। এই নির্যাতনের বিচারের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি করেন তিনি।
জানতে চাইলে সুরঞ্জিত সরকার বলেন, ২০১৫ সালের ১৪ ফ্রেব্রুয়ারি এমপি আয়েনের ক্যাডার বাহিনী আমাকে অমানবিক ও পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়ে আমাকে অর্ধপঙ্গু করে ফেলেছে। তারপর থেকে ভারতে আমার চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমি একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমি এমপি আয়েন ও তার ভগ্নিপতির হাতে পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার হয়ে এর বিচার দাবিতে অনেকের কাছে গিয়েও এর কোনো প্রতিকার পাইনি। আগামী ২৯ জানুয়ারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীতে আসছেন। কারো কাছে এর বিচার না পেলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই এর বিচার করবেন বলে আশাবাদী তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমার রক্তে মিশে আছে আওয়ামী লীগ। আমার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ২০০১ সালে নওগাঁ সরকারি ডিগ্রী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। তারপর থেকে বর্তমানে আমি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদে রয়েছি। রাজশাহী কলেজ থেকে ২০০৫ সালে গণিতে অনার্স করেছি। ছাত্রলীগ করার কারণে ২০০৫ সালে ২৪ দিন জেল খেটেছি। ১/১১ এর সময় ১৪ মাস ১০ দিন জেল খেটেছি।’
সুরঞ্জিত আরো বলেন, ‘এমপি আয়েন উদ্দিন আমার হিন্দু, জাতি ধর্ম তুলে গালাগালি করেছে। বলেছে, তোরা হিন্দু জাতি, তোদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নাই। ২০১১ সালে রায়ঘাটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলাম। কিন্তু এমপি আয়েনের মদদে সেবার ১৮০ ভোটে হেরে গিয়েছিলাম। ২০১৬ সালে ইউপি নির্বাচনে আমি দলীয় প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছিলাম। কিন্তু বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে আমাকে হারিয়ে দিয়েছে এমপি আয়েন।
এরপর ২০২১ সালের নির্বাচনে দুঃখের বিষয় এমপি আয়েনের কারজাতিতে আমাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়নি। ইউপি নির্বাচনে ৯টি কেন্দ্রের ৬টিতেই আমি বেশি ভোট পেয়েছিলাম। কিন্তু ঝামেলা পাকিয়ে বাকি তিনটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করে আমাকে হারিয়ে দেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বী জন্যই আমাকে দিনের পর দিন এভাবে এমপি আয়েনের নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছি। আমি নৌকার মনোনয়ন চাওয়ায় আমার হিন্দু জাতি, ধর্ম তুলে এমপি আমাকে গালাগালি করেছে। আমি এর বিচারের জন্যই রাজপথে দাঁড়িয়েছি। আমি তার সুষ্ঠ বিচার চাই।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন বলেন, হিন্দুদের পুকুর দখল করাকে কেন্দ্র করে তাকে (সুরঞ্জিত) হিন্দুরাই মেরেছে। ওই সময় সুরঞ্জিতকে মারধরের পর হিন্দুদেরকেই আসামি করে সে মামলা করেছিলেন। তাকে মারধরের ঘটনায় আমি তার চিকিৎসার জন্য টাকা দিয়েছি। সেই টাকা দিয়ে সে ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করিয়েছে। অথচ সে এখন সেটি আমার ওপর চাপানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া সে একজন মানসিক রোগী। আমার বিরুদ্ধে সে এসব মিথ্যা ছড়াচ্ছে। এগুলো সব ভন্ডামি ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। রা/অ