মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:১৪ am
নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহীতে চাঁদা না দেওয়ায় এবং চুরির প্রতিবাদ করায় জাইদুল ইসলাম জাহিদ নামের এক আইনজীবীকে কুপিয়েছে চাঁদাবাজরা। রোববার রাতে মহানগরীর ডিঙ্গাডোবা ঘোষমহাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত আইনজীবীকে চাঁদাবাজদের নিয়ন্ত্রণ থেকে পুলিশ উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করেছে।
আহত আইনজীবী জাহিদের স্ত্রী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার মহাদেবপুর তিলাহারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফিয়া খানম জানিয়েছেন, তার স্বামীর শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন। এ ঘটনায় চিহ্নিত চাঁদাবাজ মহানগরীর উপকণ্ঠ আলীগঞ্জ মধ্যপাড়া এলাকার মৃত দুখুর ছেলে ফরহাদকে ধাওয়া দিয়ে আটক করেছেন প্রতিবেশীরা।
প্রধান শিক্ষক আফিয়া খানম জানান, ডিঙ্গাডোবা ঘোষমহাল এলাকায় তাদের বাসার দ্বিতীয় তলার নির্মাণ কাজ চলছে। নির্মাণ কাজ শুরু হলে একই এলাকার চিহ্নিত চাঁদাবাজ লোকমানের ছেলে রিকু, গোলাম হোসেনের ছেলে রকি, শামসুল হকের ছেলে আনোয়ার, নজরুলের ছেলে নাজমুল তার স্বামী জাহিদের কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে।
চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় আনোয়ারের নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা গত বুধবার রাতে বাড়ির সীমানা প্রাচীর টপকে ছাদে উঠে। এরপর সেখানে থাকা প্রায় একটন রড চুরি করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার আইনজীবী জাহিদ অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মহানগরীর রাজপাড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এরপর শনিবার রাত ৮টার দিকে আবারো আনোয়ারের নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা ছাদে উঠে রড চুরি শুরু করে। এ সময় বিষয়টি বুঝতে পেরে আইনজীবী জাহিদ চোর চোর বলে চিৎকার শুরু করেন। দুর্বৃত্তরা এ সময় ছাদ থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে প্রতিবেশীরা তাদের ধাওয়া করেন। প্রতিবেশীদের ধাওয়ায় ফরহাদ নামে একজন ধরা পড়ে।
আফিয়া খানম আরও জানান, এ ঘটনার আধাঘণ্টা পর আনোয়ারের নেতৃত্বে রিকু, রকি এবং নাজমুলসহ ১০-১৫ জন সন্ত্রাসী তাদের বাড়ির সামনে আসে। এ সময় সন্ত্রাসীরা আইনজীবী জাহিদের উপর ছুরি, চাকু, হাঁসুয়া, লাঠি এবং লোহার রড নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাকে বেধড়ক পেটানো হয়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে এ সময় সন্ত্রাসীরা কোপায় জাহিদকে।
ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জাহিদের মাথায় গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এ সময় ৯৯৯ নাম্বারে কল দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে জাহিদকে উদ্ধার করে। তার মাথায় ১০টি সেলাই দিতে হয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ডিঙ্গাডোবা ঘোষমহাল, পার্শ্ববর্তী দাশপুকুর, বহরমপুর এবং ব্যাংক কলোনি এলাকায় আনোয়ারের নেতৃত্বে কেউ বাড়ি নির্মাণ করতে গেলেই চাঁদা দেওয়া লাগে। চাঁদা না দিলে নির্যাতন করা হয়। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পান না। এই চাঁদাবাজ গ্রুপটির বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা এবং সেবনেরও অভিযোগ রয়েছে। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মহানগরীর বিভিন্ন থানায় হাফ ডজন করে মামলা রয়েছে।
সম্প্রতি মহানগরীর পোস্টাল একাডেমি এলাকায় চার পান ব্যবসায়ীর ৩২ লাখ টাকা ছিনতাই হয়। এ মামলার আসামি আনোয়ারসহ তার সহযোগীরা। এ মামলায় গ্রেফতার হলেও জামিনে বেরিয়ে এসে আনোয়ারসহ তার সহযোগীরা আবারো চাঁদাবাজি শুরু করেছে।
রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আইনজীবী জাহিদ বলেন, আমি অনেক কষ্টে উপার্জিত অর্থ দিয়ে বাড়িটি নির্মাণ করছি। আমি কেন চাঁদাবাজদের টাকা দেব। চাঁদা না দেওয়ায় তারা আমার প্রায় এক লাখ টাকা মূল্যের রড চুরি করে নিয়ে গেছে। আমি প্রতিবাদ করায় আমার ওপর হামলা চালিয়েছে।
এ ব্যাপারে রাজপাড়া থানার ওসি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় আইনজীবী জাহিদ মামলা করেছেন। এর মধ্যে একজন আটক আছে। বাকিদের আটকের জন্য পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। আশা করছি খুব দ্রুততার সঙ্গে তাদের আটক করা হবে। রা/অ