মঙ্গবার, ২৪ েপ্টেম্বর ২০২৪, সময় : ০১:১৮ am

সংবাদ শিরোনাম ::
তানোরে রাস্তার পাশে সরকারি জলাশয় ভরাটের অভিযোগ তানোরে নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী পরিষদের নতুন কমিটি গঠন হাসিনা আমলের চেয়েও দুর্নীতি বেশি হচ্ছে : মোমিন মেহেদী বাগমারায় ইউপি চেয়ারম্যান মকবুল গ্রেফতার টিটিসির অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশ দেশের সব নদ-নদী সুরক্ষার দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা’র সাথে মার্কিন দূতাবাসের প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের কমিটি গঠন সভাপতি আলতাফ, সম্পাদক খায়ের মোহনপুরে কলেজের জমি দুই ছেলের নামে লিখে দিয়েছেন অধ্যক্ষ মোহনপুরে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন দেশের তিন জেলায় বজ্রপাতে ৯ জনের মৃত্যু ভারতীয় সঞ্চালন লাইনে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনছে সরকার ট্রাইব্যুনাল গঠন ও ৮ দফা দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন নাচোলে গুজব প্রতিরোধে মানববন্ধন অনুষ্ঠতি অনলাইনে সরব, মাঠে নীরব আ.লীগ তানোর প্রেসক্লাব নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা, প্রতিক বরাদ্দ ঢালাও মামলার কালচার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে : আসিফ নজরুল মোহনপুরে আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের সমাবেশ অনুষ্ঠিত মসজিদের বিশেষ আদব ও শিষ্টাচার : হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী মোহনপুরে আ.লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সালাম গ্রেপ্তার, মিষ্টি বিতরণ
তানোরে ভিডব্লিউবি কার্ডে অনিয়ম, তালিকায় বিত্তবানেরা

তানোরে ভিডব্লিউবি কার্ডে অনিয়ম, তালিকায় বিত্তবানেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, তানোর :
পাঁকা দোতলা বাড়িতে থাকেন আকলিমা বিবি। তাঁর ছেলে সরকারি চাকুরে। আছে আবাদি জমিও। রাজশাহীর তানোর উপজেলার কলমা ইউনিয়নের চোরখৈর গ্রামের এই নারীর নাম উঠেছে দুস্থ নারীদের নিয়ে করা ভিডব্লিউবির (ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট) তালিকায়।

আগের ভিজিএফ (ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং) কার্ডের নাম এখন করা হয়েছে ভিডব্লিউবি। প্রতিটি ইউনিয়নের দুস্থ নারীরা এই তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করেন। তালিকাভুক্ত হলে তাঁরা প্রতি মাসে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৩০ কেজি করে চাল পান।

উপজেলার কলমা ইউনিয়নে ৯টি ওয়ার্ডে ৯ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা ১ হাজার ৬১৯ জনের ভেতর থেকে দুস্থদের তালিকা করেছেন। এসএম ফজলুর রহমান তিনি উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নিয়ম অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে এই তালিকা উপজেলা কমিটিতে জমা দেন। কলমা ইউনিয়নের তালিকা নিয়ে ‘বিতর্ক আছে’ বলে তা যাচাই-বাছাইয়ের নামে নতুন তালিকা করেছে উপজেলা কমিটি।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নতুন তালিকায় ঠাঁই পাওয়া অনেকের অবস্থা আকলিমা বিবির মতো। যদিও বাদ পড়েছেন ইউপি চেয়ারম্যানের জমা দেওয়া তালিকায় থাকা ববিতা খাতুনের মতো অনেকেই, যাঁদের নিজের জমি নেই। থাকেন ভাঙা বাড়িতে।

এবিষয়ে তালিকা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সদস্যসচিব উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার দুই রকম বক্তব্য পাওয়া গেছে। ইউএনও পংকজ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, চেয়ারম্যানের তালিকা থেকে কাউকে বাদ দিয়ে নতুন কাউকে ঢোকানো হয়নি। বরাদ্দ অনুযায়ী তালিকাটি ছোট করা হয়েছে। এ জন্য কেউ বাদ পড়তে পারেন।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা এসএম ফজলুর রহমান বলেন, ওই চেয়ারম্যানের তালিকা নিয়ে ছয়জন ইউপি সদস্য মৌখিক অভিযোগ করেছেন। কমিটির সভাপতি হিসেবে ইউএনওর তালিকা যাচাই–বাছাই করার ক্ষমতা আছে। ৯টি ওয়ার্ডে ৯ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা ১ হাজার ৬১৯ জনের ভেতর থেকে দুস্থদের তালিকা করেছেন।

তালিকায় বিত্তবানদের নাম আসার ব্যাপারে তিনি বলেন, কিছু ত্রুটি থাকতেই পারে। সে জন্য ১০ শতাংশ নাম অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হয়েছে। চেয়ারম্যান আপত্তি করলেই তা সংশোধন করা হবে।

ইউপি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কলমা ইউনিয়নে এবার ভিডব্লিউবি সুবিধাভোগীদের নির্ধারিত সংখ্যা ৫৬২। অনলাইনে আবেদন জমা পড়েছিল ১ হাজার ৬১৯ জনের। নিয়ম অনুযায়ী ইউপি চেয়ারম্যান খাদেমুন নবী চৌধুরী বাবু যাচাই–বাছাই করে ৫৬২ জনের তালিকা উপজেলা কমিটিতে পাঠান। পরে ইউএনও কার্যালয় থেকে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের দিয়ে আলাদা বাছাই কমিটি করে দেওয়া হয়। এই কমিটি নতুন একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে। গত ২৭ ডিসেম্বর সেই তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।

তানোর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে শুধু কলমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের তালিকা তৈরিতে উপজেলা কমিটি হস্তক্ষেপ করেছে। স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, খাদেমুন নবী চৌধুরী বাবু আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হিসেবে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছেন। সে জন্য বিভিন্নভাবে তাঁকে হেনস্থা করা হচ্ছে।

উপজেলা কমিটির তালিকা নিয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, অনেক বিত্তবান সেখানে ঠাঁই পেয়েছেন। চোরখৈর গ্রামে রিনা বেগমের বাড়ি খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর একতলা ছাদের বাড়ি। বাড়ির সঙ্গে দোকানঘর। সেটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তার স্বামী ফায়সাল চৌধুরী বাড়িতেই ছিলেন। তিনি স্বীকার করলেন, তার স্ত্রীর নাম ভিডব্লিউবি তালিকায় রয়েছে। তিনি অবশ্য দাবি করেন, এই বাড়ি ছাড়া তাঁর আর কিছু নেই।

একই গ্রামে আকলিমা বেগমের বাড়ি। বাড়িতে ছিলেন তাঁর ছেলে স্বাস্থ্য সহকারী পদের সরকারি চাকুরে। তিনি দাবি করলেন, পুতুল নামের এক দরিদ্র নারীকে সাহায্য করার জন্য তারা মায়ের নামে এই কার্ড করেছেন। একই গ্রামের তালিকাভুক্ত আঙ্গুরা বেগমের মাটির বাড়ি ছিল। ভেতরে পাকা বাড়ি করা হচ্ছে। আঙ্গুরার দাবি, তাঁর স্বামী নীলচাঁদ গরিব কৃষক। একই গ্রামে আনোয়ারা বেগম স্বীকার করলেন, একতলা ছাদের পাকা বাড়িটি তাঁর নিজের। তিনি জানেন ভিডব্লিউবি তালিকায় তাঁর নাম উঠেছে।

ইউনিয়নের পিঁপড়া কালনা গ্রামের মিনারা বেগমের একতলা ছাদের পাকা বাড়ি। তিনি বাড়িতেই ছিলেন। তালিকায় নাম ওঠার কথা তিনিও জানেন। তিনি স্বীকার করলেন, তাঁদের কিছু আবাদি জমিও রয়েছে। একই গ্রামের রূপালীর বাড়িতে গিয়েও দেখা যায়, ইটের একতলা ছাদের বাড়ি। অবশ্য তিনি বলেন, ‘বাড়ি দেখেই শুধু বড়লোক মনে করবেন না। আমরা আসলে গরিব মানুষ।’

চেয়ারম্যানের তালিকায় নাম ছিল চন্দনকোঠা গ্রামের ববিতা খাতুনের। তাঁর মাটির জরাজীর্ণ বাড়ি। যাচাই বাছাইয়ের সময় তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। বাউরি গ্রামের নিঃস্ব অবিজান বেগমের স্বামী মারা গেছেন। তাঁরও নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

ওই ইউপি চেয়ারম্যান খাদেমুন নবী চৌধুরী বলেন, সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে শুধু তাঁর তালিকাই উপজেলা কমিটি দিয়ে ফের যাচাইবাছাই করা হচ্ছে। এতে দুস্থের জায়গায় অনেক বিত্তবানের নাম এসেছে।

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.