রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১২:৩৮ am
ডেস্ক রির্পোট :
একটি দেশের বিমানবন্দরকে বলা হয় সে দেশের আয়না। এর ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ তুলে ধরে দেশের সার্বিক চিত্র। বাংলাদেশের প্রধান বিমানবন্দর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের জন্য টার্মিনালের ভেতরে বিভিন্ন স্থানে রয়েছে গণশৌচাগার (টয়লেট)। আধুনিক ফিটিংস, টিস্যু, সাবান আর নিয়মিত পরিষ্কার করায় টয়লেটগুলো থাকে ঝা-তকতকে।
তবে উল্টো চিত্র বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের বাইরের টয়লেটের চিত্র। টাকার বিনিময়ে এসব টয়লেট ব্যবহার করলেও নোংরা-দুর্গন্ধময় পরিবেশে দম বন্ধ হয়ে আসে। নেই সাবান ও টয়লেট পেপার। এ ছাড়া টার্মিনালের বাইরে পর্যাপ্ত টয়লেট না থাকায় যত্রযত্র মূত্র ত্যাগ করায় বিমানবন্দরের প্রবেশপথ দিয়ে হাঁটা দায়।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় ৩০টি এয়ারলাইন ফ্লাইট পরিচালনা করে। প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার যাত্রী এই বন্দর দিয়ে যাতায়াত করেন। তাদের মধ্যে বহির্দেশে গমনকারী যাত্রীদের সঙ্গে কয়েক হাজার আত্মীয়স্বজন আসেন বিমানবন্দরে। আবার অনেক আত্মীয়স্বজন আসেন দেশে ফেরা যাত্রীদের গ্রহণ করতে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষ বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের সামনে ও আশপাশে অবস্থান করে। অথচ তাদের জন্য মাত্র দুটি স্থানে রয়েছে টয়েলেটের ব্যবস্থা।
এর মধ্যে একটি রয়েছে উত্তর পাশে বহুতল কার পার্কিং ভবনের নিচে এবং অন্যটি টার্মিনালের দক্ষিণ পাশে জেনারেটর স্টেশনের পেছনে। এ দুটি টয়লেট ইজারা দিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। জনসমাগমের তুলনায় টয়লেটের সংখ্যা কম থাকায় মানুষের চাপ থাকে সব সময়। আবার নতুন আসা কাউকে এসব টয়লেট খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়। বাইরে থেকে কোনও সাইন না থাকায় টয়লেট খুঁজে না পেয়ে অনেকে যত্রতত্র মূত্র ত্যাগ করেন। বিমানবন্দরে কার পার্কিং ভবনের ছাদে কোনও টয়লেট না থাকায় সেখানে খোলা জায়গায় মূত্র ত্যাগ করে অনেকে।
সরেজমিনে দুই জায়গার টয়লেটগুলোয় দেখা গেছে, দুটি টয়লেটের পরিবেশই অপরিচ্ছন্ন। টয়লেটের ফিটিংগুলো নোংরা, কয়েকটি ভাঙা। অনেকগুলোর বেসিনের কলে পানি নেই। ফ্লোরের মেজে কাদা, ময়লা আর স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে আছে। এমন নোংরা টয়লেট ব্যবহার করতে ৫ টাকা ফি নির্ধারিত থাকলেও ইজারাদাররা জনপ্রতি নিচ্ছে ১০ টাকা করে।
সবচেয়ে বেশি করুণ পরিস্থিতি বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের দক্ষিণ পাশের জেনারেটর স্টেশনের পেছনের টয়লেটগুলো। এক পাশে কোনায় অন্ধকার পথে দিয়ে যেতে হয় এ জায়গার টয়লেটে। প্রবেশপথের দুই পাশে পরিত্যক্ত ড্রাম ও ময়লা-আবর্জনা রাখা। নারীদের টয়লেটের ভেতরেও রাখা আছে নানা রকম পরিত্যক্ত জিনিসপত্র। ঘুটঘুটে অন্ধকারাচ্ছন্ন হওয়ায় এখানে নারীরা ভয়ে আসতে চান না।
এসব পাবলিক টয়লেট পরিষ্কার করার কোনও তৎপরতা দেখা মেলেনি। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষেরও কোনও ধরনের মনিটরিং না থাকায় ইজারাদারের কোনও দায়বদ্ধতা নেই। তাই নির্ধারিত ফির চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে নোংরা টয়লেট ব্যবহার করতে হচ্ছে বিপদে পড়া মানুষকে।
টার্মিনালের বাইরের টয়লেট নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান যাত্রীর সঙ্গে আসা স্বজনরা। দিনাজপুর থেকে রুহুল আমীন তার ভাইকে নিতে এসেছেন বিমানবন্দরে। তিনি বলেন, ‘আমি এসেছি প্রায় ১ ঘণ্টা। প্রথমে বুঝতে পারছিলাম না টয়লেট কোথায়, পরে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করে খুঁজে পেয়েছি। টয়লেটের পরিবেশ এত নোংরা যে আমি বমি করে ফেলেছি। টয়লেট থেকে বের হয়ে হতভম্ব হয়ে গেছি। এই নোংরা টয়লেট ব্যবহার করতে আবর ১০ টাকা করে নিচ্ছে। টাকা নিলে তো পরিষ্কার থাকার কথা আরও বেশি। তাহলে এই টাকা কার পকেটে যায়?’
প্রায় একই রকম অভিজ্ঞতার কথা জানান জানে আলম। তিনি তার বাবাকে গ্রহণ করতে বিমানবন্দরে এসেছেন। জানে আলম বলেন, ‘টয়লেটে দুর্গন্ধে থাকা যায় না। দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টয়লেট এত নোংরা, কল্পনাও করতে পারছি না। ভাগ্য ভালো বিদেশিরা এসব টয়লেট দেখে না।’
বহুতল কার পার্কিং ভবনের ছাদে চারপাশজুড়ে মূত্র। সেখানে গাড়ি পার্কিং করেছিলেন আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘এত ভয়ানক নোংরা, ভাবা যায় না। এখানে টয়লেট নেই, তাই অনেকে খোলা জায়গায় মূত্র ত্যাগ করছেন।’
বহুতল কার পার্কিংয়ের ছাদে খোলা জায়গায় মূত্রত্যাগ করা একজন বলেন, ‘এখানে প্রস্রাব করতে আমার নিজেরও লজ্জা লাগছে। কিন্তু আমি কী করবো, টয়েলেট নিচে। দুই ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে এসেছি, একবার নিচে গিয়েছিলাম টয়েলেট ব্যবহার করতে। টয়লেট ব্যবহার শেষে যখন ওপরে আসবো, আর্মড পুলিশের সদস্যরা আমাকে আসতেই দেবে না। আধা ঘণ্টা ধরে তাদের বোঝাতে হয়েছে আমাদের গাড়ি পার্কিং করা ওপরে, আমাদের সবাই ওপরে আছে।’
হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক কামরুল ইসলাম বলেন, ‘বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের টয়লেটগুলো বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিষ্কার করা হয়। তবে টার্মিনালের বাইরে দুই জায়গায় যে টয়লেট আছে, সেগুলো ইজারা দেওয়া হয়েছে। ইজারাদারদের দায়িত্ব সেগুলো পরিচ্ছন্ন রাখা। তারা যদি ব্যত্যয় করে আমরা ব্যবস্থা নেবো। আর বিমানবন্দরে যাত্রীর চাপের কথা বিবেচনা করে টয়লেটের সংখ্যা বাড়ানো হবে।’ সূত্র : বাংলাট্রিবিউন