মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:৪৪ am
ইমরান হোসাইন :
রাজশাহীর তানোরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা এখনো সব বই পায়নি। ২০২৩ সালের প্রথম দিনে নতুন বই পাবার আশায় স্কুলে যায় শিক্ষার্থীরা। কিন্তু প্রতিটি শ্রেণিতে অর্ধেকেরও কম বই দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের। এতে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে আসে অনেক শিক্ষার্থী। ফলে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
চলতি বছরে শিক্ষাবর্ষ শুরুর পর জানুয়ারী মাসের অর্ধেক গেলেও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থী সব বই হাতে পায়নি। বিভিন্ন শ্রেণিতে একজন শিক্ষার্থী যতগুলো বই পাওয়ার কথা, তার চেয়ে কম বই পেয়েছে। মাধ্যমিকে ১২টি বইয়ের স্থলে শুধু মাত্র ৩টি করে বই দেয়া হয়েছে।
নতুন বই দেওয়ায় পিছিয়ে আছে প্রাক্-প্রাথমিক স্তরও। তবে, প্রথম থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির পুরো বই পাওয়া গেছে। কিন্তু তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য মাত্র ৩টি করে বই হাতে পেয়েছে শিক্ষার্থীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পুরো উপজেলাজুড়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ২৬৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এরমধ্যে ১৭৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৬১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আর মাদ্রাসা রয়েছে ২৮টি। এসব প্রতিষ্ঠানে ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার ৯৩০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এরমধ্যে দুই লক্ষ ৭৮ হাজার ৯৩০ শিক্ষার্থী নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের। আর ৯৭ হাজার ৮০০ রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষার্থী। তবে, প্রাথমিক পর্যায়ের ৯৭ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬১ হাজার ৭৫০ শিক্ষার্থীকে নতুন বই দেয়া হয়েছে। বাঁকি ৩৬ হাজার ৫০ শিক্ষার্থীকে নতুন বই বরাদ্দ পেলেই পাইয়ে দেয়া হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসার। তবে, মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রী জানায়, ৬২২ নম্বর পেয়ে তৃতীয় শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণিতে উঠেছি। ক্লাসে দ্বিতীয় হয়েছি। জানুযায়ী মাসের ১ তারিখ রোববার বই নিতে স্কুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু তাকে ৬টি বইয়ের পরিবর্তে ৩টি বই দেয়া হয়। আর বই কবে নাগাদ দেবে সেটা শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানাননি। তবে, এঅবস্থায় ওই তিন বিষয়ে তাদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
এবিষয়ে তানোর পৌর এলাকার ভদ্রখন্ড মহল্লার দুলালের পুত্র আকচা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ুয়া সাগর নামের এক ছাত্র জানান, সে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশুনা অবস্থায় করোনায় স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। পরে কাজের সন্ধানে ঢাকায় যায় সে। ঢাকা থেকে দুই বছর পরে এসে আবারও নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে পড়াশুনা শুরু করবো। কিন্তু তাকে কোন বই দেয়া হয়নি বলে অভিযোগে জানান সাগর।
এবিষয়ে তানোর পৌর এলাকার জিওল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বই পুরোটায় পাওয়া গেছে। কিন্ত তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ৬টি বইয়ের মধ্যে তিনটি করে বই পাওয়া গেছে। আর যেসব বিষয়ে বই এখনো পাওয়া যায়নি, এজন্য সাময়িক পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে এটা অস্বিকার করার কিছু নেই বলে জানান এই প্রধান শিক্ষক।
তানোর পৌরসভা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম মন্টু বলেন, এখন যেসব বই সংকট আছে সেগুলো পরবর্তীতে সরকার দেবে বলে এড়িয়ে গিয়ে তিনি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে খোঁজ নিতে বলে মোবাইল সংযোগ বিছিন্ন করেন। একই কথা জানিয়ে আকচা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসলাম উদ্দিন বলেন- সাগর দুই বছর ধরে স্কুলে নিয়মিত নয়, এরপরও বই সংকটে আছি। পাওয়া গেলে বিবেচনায় নেয়া হবে বলে জানান প্রধান শিক্ষক।
এবিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সানাউল্লাহ বলেন, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঠিকাদার ও প্রেস বা ছাপাখানায় সমস্যা আছে। এজন্য তারা সব বই সরবরাহ করতে পারেননি। একারণে এবছর শিক্ষার্থীদের সব দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে, কিছু কিছু উপজেলা বই পেতে শুরু করেছে। আমরাও চলতি মাসেই পেয়ে যাব বলে জানান এই শিক্ষা অফিসার।
পরে তানোর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিকুর রহমানের মোবাইলে খোঁজ নেয়া হলে তিনি বলেন, বইয়ের সমস্যা আছে কম পাইছি! তবে, এসে গেছে ট্রেনিংয়ে আছি এধনের বিব্রতকর কথা বলে মোবাইল সংযোগ বিছিন্ন করেন এই অফিসার। তা/অ