রবিবর, ২২ েপ্টেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:২১ pm

সংবাদ শিরোনাম ::
দেশের তিন জেলায় বজ্রপাতে ৯ জনের মৃত্যু ভারতীয় সঞ্চালন লাইনে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনছে সরকার ট্রাইব্যুনাল গঠন ও ৮ দফা দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন নাচোলে গুজব প্রতিরোধে মানববন্ধন অনুষ্ঠতি অনলাইনে সরব, মাঠে নীরব আ.লীগ তানোর প্রেসক্লাব নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা, প্রতিক বরাদ্দ ঢালাও মামলার কালচার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে : আসিফ নজরুল মোহনপুরে আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের সমাবেশ অনুষ্ঠিত মসজিদের বিশেষ আদব ও শিষ্টাচার : হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী মোহনপুরে আ.লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সালাম গ্রেপ্তার, মিষ্টি বিতরণ দুদকের তালিকায় ১০০ ব্যক্তির সম্পদের পাহাড় গড়েছেন যারা আ.লীগ ১৪ দলীয় জোটের নেতা ও মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে ৭৫০ মামলা ঢাবিতে সব ধরনের রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিখোঁজের সাতবছর পর ছেলেকে ফিরে পেলেন উচ্ছ্বসিত মা তানোরে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত রাসিকের সাবেক কাউন্সিলর মনসুরের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন সেই রুবেল আরও ৭ দিনের রিমান্ডে সিলেবাস সংক্ষিতের দাবিতে রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শেষে সমাবেশ পবায় উপজেলা প্রশাসনে ও কাটাখালি পৌরসভায় ভোগান্তি চিত্র নায়িকা পরীমণি পালন করলেন ‘বিবাহ বিচ্ছেদ’ দিন
শীতল লড়াইয়ের পর মামলায় অটুট জাপার ঐক্য

শীতল লড়াইয়ের পর মামলায় অটুট জাপার ঐক্য

ডেস্ক রির্পোট :
দীর্ঘ শীতল লড়াইয়ের পর জাতীয় পার্টির কর্তৃত্ব নিয়ে চলা বিরোধ সমঝোতায় রূপ নিয়েছে। এক টেবিলের পর এক মঞ্চে বসেছেন দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। সমঝোতার এ পর্যায়কে ‘মামলার সম্পর্ক’ হিসেবে দেখছেন দলটির অধিকাংশ নেতা-কর্মীই।
সম্প্রতি রওশন এরশাদ ও জি এম কাদের ‘দল ঐক্যবদ্ধ’ বলে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। দলের নেতারা বলছেন, জি এম কাদেরের দলীয় কর্মকাণ্ডে ‘নিষেধাজ্ঞা’ নিয়ে আদালতে চলা মামলার রায়ের আগে এই বিবৃতি মূলত রাজনৈতিক।

তারা মনে করেন, দলে জি এম কাদেরর ক্ষমতা ব্যবহার বন্ধের পেছনে সরকারি দলের হাত রয়েছে। সরকারি দল চায় জাতীয় পার্টি ‘একক’ থাকুক এবং তা সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকুক। কিন্তু জি এম কাদের এই সরকারের বিরোধী বলে মনে করা হয়। অন্যদিকে সরকার রওশন এরশাদপন্থিদের নিজেদের পক্ষের বিরোধী দল বলে মনে করে। জাতীয় পার্টির কোনো পক্ষই যেন সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মিলতে না পারে সে জন্য সরকার নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জি এম কাদেরপন্থি একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে আটকে রাখার জন্য সরকার নানা কৌশল করত আগে। জি এম কাদেরকে আটকানোর কোনো পথ না পেয়ে এই সূত্রে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত আটকে রাখতে চায় সরকার। আগামী তারিখে আদেশ হবে বলে মনে হয় না। এটি আরও দীর্ঘসূত্রতা হবে বলে আশঙ্কা করছি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রওশন ঘনিষ্ঠ এক নেতা দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আইন-আদালতে চলমান মামলার বিষয়ে মন্তব্য করা বেআইনি। আগামী ১৯ জানুয়ারি মামলার আদেশ হওয়ার কথা রয়েছে। আদেশ ঘিরে শঙ্কা-আশঙ্কা তো থাকেই। কী আদেশ হবে সেটা তো আদালতই ভালো জানে।’

গত বুধবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদেরের বিরুদ্ধে দলের সাবেক মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা ও বহিষ্কৃত নেতা জিয়াউল হক মৃধার করা পৃথক দুই মামলা খারিজের আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হয়। ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ মাসুদুল হকের আদালতে মামলা দুটি খারিজের আবেদনের ওপর বাদী ও বিবাদী পক্ষের শুনানি শেষে আগামী ১৯ জানুয়ারি আদেশের জন্য দিন ঠিক করেন আদালত।
মামলার বাদী ও জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘গঠনতন্ত্রের অগণতান্ত্রিক ধারা ও আমাকে বহিষ্কারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আমি নাগরিক অধিকার থেকে মামলা করেছি। কোনো প্রকার বিদ্বেষপ্রসূত হয়ে মামলা করিনি। ম্যাডাম (রওশন এরশাদ) আমাকে বলেছেন, ভালোর জন্যই আমরা সমঝোতার দিকে এগোচ্ছি।’

জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঞা দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। গত কয়দিন আগে আমাদের দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চেয়ারম্যান যৌথভাবে বিবৃতি দিয়েছেন এ বিষয়ে। জাতীয় পার্টি জি এম কাদেরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।

জি এম কাদেরের চেয়ারম্যান পদ নিয়ে আদালতে চলা মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মামলার আদেশটি নিয়ে যে প্রশ্ন সেটি বিভ্রান্তিকর। জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০-এর ‘ক’ ধারার ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে। আদেশটি ভালো করে পড়লে বোঝা যাবে, জি এম কাদেরের আমাদের সঙ্গে ঘরোয়াভাবে বসতে তো কোনো বাধা নেই।

গত ৯ জানুয়ারি গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতি জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, কিছুদিন ধরে গণমাধ্যমে জাতীয় পার্টির বিভক্তি সম্পর্কিত বিভ্রান্তিকর কিছু খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমি জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ ও আমি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই যে পার্টিতে কোনো বিভক্তির প্রশ্নই ওঠে না। বরং আমরা দুজনেই ঐক্যবদ্ধভাবে প্রয়াত নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে বদ্ধপরিকর।’

বিবৃতিতে রওশন এরশাদ ও জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা দুজনই পার্টিকে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করবে এবং ৩০০ আসনেই প্রার্থী প্রদান করার জন্য পার্টিকে সুসংগঠিত করার প্রত্যয় ঘোষণা করছি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জি এম কাদের কর্তৃক অব্যাহতি পাওয়া রওশনপন্থি এক নেতা দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘মামলার চাপে পড়েই জি এম কাদের এখন ঐক্যের কথা বলছেন। যদি তিনি প্রকৃতপক্ষে ঐক্য চাইতেন তাহলে তার কার্যক্রমে বোঝা যেত।’

এর আগে বিএনপির ছেড়ে দেয়া আসনগুলোতে উপনির্বাচনে প্রার্থী পরিবর্তন করে জাতীয় পার্টি। গত ৩ জানুয়ারি দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে উপনির্বাচনে দলের অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঞার পরিবর্তে আবদুল হামিদ ভাসানীকে মনোনয়ন দেয়া হয়।

গত বছরের ৪ অক্টোবর জি এম কাদেরকে জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে অবৈধ ঘোষণার ডিক্রি চেয়ে প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা করেন জিয়াউল হক মৃধা। একই মামলায় দল থেকে জিয়াউল হকের বহিষ্কারাদেশকে বেআইনি ঘোষণা এবং দলীয় গঠনতন্ত্রের ২০-এর উপধারা ১ (১) অবৈধ ঘোষণা চাওয়া হয়। এর আগে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর জিয়াউল হককে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

একই আদালতে আরেক মামলায় চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরকে বেআইনি ঘোষণার ডিক্রি চেয়েছেন দল থেকে অব্যাহতি পাওয়া আরেক নেতা মসিউর রহমান। জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সব পদ-পদবি থেকে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর অব্যাহতি পাওয়া মসিউর রহমান ওই বছরের ২৩ অক্টোবর মামলাটি করেন।

জিয়াউল হকের মামলায় গত বছরের ৩০ অক্টোবর ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরের দলীয় কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছিলেন। ওই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে ঢাকার জেলা জজ আদালতে বিবিধ আপিল আবেদন করেন জি এম কাদের। গত ৯ জানুয়ারি ওই আবেদনের শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী ১৫ জানুয়ারি আদেশের দিন ঠিক করেছেন আদালত।

২০১৯ সালের ১৪ জুলাই জাপার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মারা যান। এর ৬ মাস আগে ওই বছরের ১ জানুয়ারি জি এম কাদের তার বড় ভাই এরশাদকে ভুল বুঝিয়ে ‘জাতীয় পার্টির জন্য ভবিষ্যৎ নির্দেশনা’ শিরোনামে একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করান। এরপর জি এম কাদের প্রথমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও পরে চেয়ারম্যান হন, যা ছিল গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী। এ নিয়ে দলের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে এরশাদ ২০১৯ সালের ২২ মার্চ জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দেন।

এরপর ৪ মে পুনরায় তাকে জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেন এরশাদ। তখন এরশাদ গুরুতর অসুস্থ থাকায় তিনি স্বাভাবিক বিবেচনা প্রয়োগে সক্ষম ছিলেন না বলে মামলায় দাবি করা হয়েছে। এরশাদের মৃত্যুর পর ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন জি এম কাদের। দলের গঠনতন্ত্রে এভাবে চেয়ারম্যান ঘোষণার কোনো বিধান নেই।

মামলায় মসিউর রহমান দাবি করেন, ‘জি এম কাদের নিজেকে জাপার চেয়ারম্যান দাবি করে ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সম্মেলন ডাকেন। এর আগে এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে ১৯ ডিসেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়।’

রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে জি এম কাদেরকে চেয়ারম্যান ঘোষণা কেন বেআইনি হবে না, জানতে চেয়ে রুল দেন হাইকোর্ট। এটি বিচারাধীন অবস্থায় দলের কাউন্সিল করেন জি এম কাদের। ওই সম্মেলনে জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ উপস্থিত ছিলেন না। সূত্র : দৈনিক বাংলা

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.