রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৯:২২ am

সংবাদ শিরোনাম ::
কম্পিউটার কী বোর্ডের মাধ্যমে রাজশাহীতে পাহাড়িয়াদের মাতৃভাষার লিখন পঠন কার্যক্রম উদ্বোধন গোদাগাড়ীতে প্লাজমা ফাউন্ডেশনের ৯ম তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন আমবাগান থেকে বাঘায় দিনমুজুরের গলাকাটা লাশ উদ্ধার নগরীতে জেলা কৃষকলীগ সভাপতি তাজবুল ইসলামসহ ১৫ জন গ্রেপ্তার নাচোলে মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের ১৪৮তম শাখা উদ্বোধন গণতন্ত্রের মোড়কে বাকশাল কায়েম চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা : সাকি তানোরে আলু বীজে মহাসিন্ডিকেট, দ্বিগুন দামে দিশেহারা চাষীরা! দুর্গাপুর ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক রফিক সরকারের দাফন সম্পন্ন দুর্গাপুরে বিএনপি’র আয়োজনে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উদযাপিত মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্য কোথাও বসাতে না পেরে বিক্রি করলেন ভাঙারির দোকানে রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা নেই : আনন্দবাজারকে জামায়াতের আমির আগামী তিন মৌসুমের জন্য আইপিএলে যে ১৩ ক্রিকেটারের নাম দিল বিসিবি স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েও কাজ থামিয়ে রাখেননি অভিনেত্রী হিনা খান নগরীতে সন্ত্রাসি কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধে ১১ জন গ্রেপ্তার তানোরে সার বিতরণে অনিয়ম ও পাঁচার রোধে হট্টগোল মারপিট দুর্গাপুরে হোজা নদী পুন:খনন ও দখলমুক্ত দাবিতে ইউএনও’কে স্মারকলিপি রাজশাহীতে সমন্বয়ক পেটানোর ব্যাখ্যা দিল মহানগর ছাত্রদল আঘাতের দাগে সম্পর্কের রূপান্তর ! রাজু আহমেদ তানোরে শিক্ষক সমিতিকে নিজ পকেটে রাখতে মরিয়া বিএনপি নেতা মিজান অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার পক্ষে লড়তে চান জেড আই খান পান্না
নগরীতে ১ টাকায় রোগী দেখেন ডা. সুমাইয়া!

নগরীতে ১ টাকায় রোগী দেখেন ডা. সুমাইয়া!

নিজস্ব প্রতিবেদক :
একটা সময় ছিলো, যখন এক টাকার চকলেট এর জন্য শিশুরা তাদের বাবা-মায়ের কাছে বায়না করতো। কিন্তু বর্তমানে উর্ধ্বগতির এই বাজারে এক টাকার যেন কোনো মূল্য নেই।

বর্তমানে নিত্যপণ্যের দামের উর্ধ্বগতির এই বাজারে একশত টাকা কিংবা এক হাজার টাকা দিয়েও যখন কিছুই জোটে না সেই সময়ে এক টাকায় মিলছে চিকিৎসা সেবা। রোগী দেখছেন এমবিবিএস পাস করা চিকিৎসক।

বিষয়টি কল্পনীয় ও আশ্চর্যজনক হলেও এটি বর্তমানে বাস্তবে পরিণত করেছেন রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করা ডা. সুমাইয়া বিনতে মোজাম্মেল।

বাবার ইচ্ছা পূরণে ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ নিয়েছেন রাজশাহীর মেয়ে সুমাইয়া বিনতে মোজাম্মেল। নগরীর সাহেব বাজারে একটি ওষুধের দোকানে প্রাথমিকভাবে এই কার্যক্রম শুরু করেছেন তিনি। সেখানেই তিনি প্রতি শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত রোগী দেখছেন।

২০১৫ সালে রাজশাহীর নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন সুমাইয়া। বড় চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে প্রস্তুতি নিতে থাকেন মেডিকেল ভর্তির। ভাগ্যের নির্মমতায় সরকারি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ না পেলেও বুনতে থাকেন স্বপ্নের জাল। এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হন রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজে। সম্প্রতি এমবিবিএস পাস করে ইন্টার্ন শেষ করেছেন তিনি। প্রাইভেট একটি ক্লিনিকে চাকরির পাশাপাশি বিসিএস প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর এর পাশাপাশি করছেন জনসেবা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. সুমাইয়া বিনতে মোজাম্মেল বলেন, মূলত আমার বাবার ইচ্ছে ছিল যে আমি যেন জনসেবামূলক কিছু একটা করি। ফ্রিতে মানুষের ট্রিটমেন্ট দেওয়া বা এরকম কিছু করাতে চেয়েছিলেন তিনি। তারই ধারাবাহিকতায় এই জনসেবামূলক কাজটি আমি শুরু করেছি। ইচ্ছে আছে, যতদিন আল্লাহর রহমতে বেঁচে থাকি ততদিন এই কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার।

কার্যক্রম নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবে মাত্র পাঁচ দিন হচ্ছে রোগী দেখা শুরু করেছি। লিফলেট বানানো হয়েছে, কিন্তু এখনও বিলি করাই হয় নি। বিষয়টি এখনো সেভাবে কেউ জানেই না। এক প্রকার এক্সাইটমেন্ট থেকে গত ৭ জানুয়ারি ফেসবুকে লিফলেটসহ একটা পোস্ট করেছিলাম। এতেই অনেকের নজর পড়েছে বলেও জানান এই চিকিৎসক।
ডা. সুমাইয়া বলেন, ফেসবুকে পোস্ট করার পর থেকে অনেকেরই কল পেয়েছি, অনেকে মেসেজও করেছে। অনেকে সাধুবাদ জানাচ্ছে, এগিয়ে যাওয়ার জন্য বলছে। এমনকি একজন শিক্ষক ফোন করে আমার বিস্তারিত শুনে জানতে চাইলেন আমার লক্ষ্য কি। বিসিএস প্রস্তুতির কথা বলতেই জানালেন, ‘তোমার যদি ইংলিশে প্রিপারেশন নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে, তুমি নির্দিধায় আমাকে বলতে পারো।’ এসব শুনেও ভালো লাগছে বলেও জানান তরুণ এই চিকিৎসক।

ভবিষৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আল্লাহ দিলে যদি চান্স হয় আর দূরে কোথাও পোস্টিং হয় তাহলে সপ্তাহে অন্তত একদিন করে হলেও এখানে রোগী দেখবো। আর পোস্টিং যদি আশেপাশে কোথাও হয় তাহলে অন্তত সন্ধ্যার পর রেগুলার রোগী দেখা যাবে। তবে এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কোনো প্রতিবন্ধকতা আসবে কি না সেটা নিয়ে এখনও ভাবা হয়নি। তবে কোনো প্রতিবন্ধকতা আসলে তখন ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে কি করা যায়।

চিকিৎসা নিতে আসা নাজমুল হক নামে এক রোগী জানান, জনসেবার উদ্দেশ্যে এমন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কতজন এমবিবিএস পাস করে ব্যবসার মতো টাকা ইনকামে নেমে যায়, সে হিসেবে ওনার উদ্যোগটা খুবই ভাল। আমি নিজেও ফেসবুকে জানতে পেরে দেখা করলাম। কিছু সমস্যা ছিল আমার, উনি শুনে প্রেসক্রিপশন দিলেন। মাত্র এক টাকার ভিজিটেই ডাক্তারি পরামর্শ পেলাম। আশা করছি এলাকার হত দরিদ্ররা তার কাছে সেবা পেয়ে উপকৃত হবেন।

রোগীর ভিজিট এক টাকা নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে এই নারী চিকিৎসক বলেন, দি ফাইভ ফাউন্ডেশন’ নামে আমার একটা ছোট্ট অর্গানাইজেশন আছে। করোনার সময় থেকেই সংগঠনটির কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। আমরা মূলত সেখানে মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদা (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা) নিয়ে কাজ করে থাকি। এছাড়াও শীতে শীতার্তদের শীতবস্ত্র প্রদান, কোরবানির ঈদে গরু কোরবানি করে গোশত বিলি করা, অসহায়দের অর্থ সহায়তা দিয়ে ছোটখাটো ব্যবসা বা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, কিছু দুস্থ পরিবারে নিয়মিত খাবার সহায়তা দেওয়া, একটি এতিম বাচ্চার ভরণপোষণ দেওয়ার মতো অনেক কাজই ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে করা হয়। সেজন্য ওই সংগঠনের আয় হিসেবে এই এক টাকা নেওয়া হচ্ছে।

নিজের পরিবার সম্পর্কে ডা. সুমাইয়া বলেন, আমার বিয়ের বয়স প্রায় আট বছর হয়ে আসছে। পাঁচ বছর ও দুই বছর বয়সী দুটো বাচ্চাও আছে। আমার হাজবেন্ডও পেশায় চিকিৎসক। আমার এই উদ্যোগে তিনিও খুশি, সব রকমের সাপোর্ট দিচ্ছেন। আমি আমার আব্বু-আম্মুর স্বপ্ন পূরণ করার চেষ্টা করছি।

সুমাইয়ার বাবা রাজশাহীর শহীদ কামারুজ্জামান সরকারি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক মীর মোজাম্মেল আলী। স্বপ্ন পূরণে মেয়ের এমন মহত উদ্যোগের বিষয়ে ডা. সুমাইয়ার বাবা মীর মোজাম্মেল আলী বলেন, ইচ্ছে ছিল আমার চার ছেলে-মেয়েই ডাক্তার হবে। তিন মেয়ে ডাক্তার হয়েছে, আরেকজন ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ছিল, তারা মানুষের সেবা করবে। আমরা ডাক্তার হতে পারিনি, সেই একটা দুঃখ ছিল আমাদের সময়। যেহেতু আমরা হতে পারিনি, তাই ছেলে-মেয়েদের মধ্য দিয়েই স্বপ্নটা পূরণ করার চেষ্টা করছি।

তিনি আরও বলেন, ডাক্তারদের বদনাম আছে, তারা কসাই, মানুষের টাকা খসায়। অন্তত সেটা ঘোঁচানোর জন্য এক টাকা ভিজিটের রোগী দেখার উদ্যোগটা ভাল। আমার মেয়েরা যেন জনসেবা অব্যাহত রাখতে পারে এবং সেবার মাধ্যমে রাজশাহীর লোক উপকৃত হতে পারে সেজন্য সকলের দোয়াও চান তিনি।

এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সানাউল হক মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এটা একটা মহৎ উদ্যোগ। চমৎকার কাজ শুরু করেছে সুমাইয়া। তরুণ প্রজন্মের কাছে এটাই তো আশা করি। খুবই প্রশংসা করার মতো একটা ভালো কাজ এটি। আমি ব্যক্তিগতভাবে তার সঙ্গে দেখা করবো, উৎসাহ যোগাবো। সে যে মহৎ উদ্যোগ নিয়েছে সবারই উচিত হবে উৎসাহ দেওয়া। এতে সে অনুপ্রাণিত হবে। সূত্র : ঢাকা মেইল

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.