মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৩:৫০ am
ডেস্ক রির্পোট :
দেশের শিক্ষা খাতে অস্বাভাবিক হারে ব্যয় বেড়েছে। তাতে বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি, মেডিকেল, প্রকৌশল, বিবিএ, এমবিএসহ প্রতিটি বিষয়ভিত্তিক বইয়ের মূল্য ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে। পুস্তক ব্যবসায়ীদের মতে, কাগজের দাম বেড়ে যাওয়াই শিক্ষা খরচ বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ। আর শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের তদারকি না থাকায় সহসাই দাম কমার কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। বর্তমানে সব ধরনের বইয়ের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এবার উচ্চমাধ্যমিকস্তরে ৭০ ভাগ শিক্ষার্থীই নতুন বই কিনতে পারবে না। আগে ইন্টারমিডিয়েট পর্যায়ে ২৫০০-৩০০০ টাকায় বই পাওয়া গেলেও এখন তা ৬ হাজার টাকায় কিনতে হবে। এমন অবস্থায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীই এক সেট বই কিনতে এসে অর্ধেক কিনে ফিরছে। শিক্ষা উপকরণ বিক্রেতা এবং ভুক্তভোগীদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ৩ মাসের ব্যবধানে মেডিকেলের বইয়ের দাম হয়েছে দ্বিগুণ। মেডিকেলের এক সেট বইয়ের দাম ছিল- ৮০০০- ৮৫০০ টাকা। এখন পুরো সেট বই ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকায় মিলছে। দেশে কোনো প্রকাশনী না থাকায় ওসব বই সবই পাইরেসি করা। নিম্নমানের সাদা কাল কাগজে ওসব বইয়ের মানও যাচ্ছেতাই। বিবিএ মার্কেটিং ম্যানেজমেন্ট বইয়ের দাম ১২০ টাকা ছিল, এখন ৩০০ টাকা। অ্যাকাউন্টিংয়ের ১২০ টাকার বই এখন ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ওই ধরনের এক সেট বই কিনতে আগে যেখানে হাজার ১২০০ লাগতো এখন তা ২৫০০-৩০০০ টাকায় কিনতে হবে। উচ্চমাধ্যমিকস্তরের বইয়ের দামও বেড়েছে অন্তত ৩০ শতাংশ। বর্তমানে বাজারে ৪০ ভাগ দাম বেড়েছে বাংলাদেশী বইয়ের আর পাইরেসি করা বইগুলোর দাম ৫০ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
সূত্র জানায়, যেখানে কাগজের রিম ১৬০ টাকা, এখন তা ৪০০ টাকা। ফলে ফটোকপির মূল্য বেড়েছে। আগে ফটোকপি ও বাঁধাই করে বই বিক্রি চললেও কাগজের দামের কারণে তা বন্ধ হয়ে গেছে। আগে প্রতি কাগজ ফটোকপি ৭০ পয়সায় ছিল। এখন তা ঠেকেছে ১ টাকা ৮০ পয়সায়। অফসেট পেপারে ফটোকপি প্রতি পিস নেয়া হচ্ছে আড়াই টাকা। এ৪ কাগজের প্যাকেটের দাম ছিল ২২০, এখন তা ৪০০ টাকা। কাগজের দাম, আঠা ও বাইন্ডিং খরচও বেড়েছে। বই ছাড়াও সব ধরনের শিক্ষা উপকরণ- কাগজ, কলম, জ্যামিতি বক্স, ক্যালকুলেটরসহ সব সামগ্রীর দাম ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। কাগজ, খাতা, পেন্সিল, ব্যবহারিক খাতা, মার্কার, স্কুল ফাইল, অফিস ফাইল, বাচ্চাদের লেখার স্লেট, ক্যালকুলেটর, সাদা বোর্ড, জ্যামিতি বক্স, টালি খাতা, কলম বক্স, স্কেল, পরীক্ষায় ব্যবহৃত ক্লিপবোর্ড, কালিসহ সব পণ্যের দাম বেড়েছে। ৩০০ পেজের খাতার দাম তিনগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২০ টাকা। ৪০ টাকার ব্যবহারিক খাতা এখন ৬০ টাকা। কলমের দাম ডজনপ্রতি বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। মার্কার পেন প্রতি পিসের দাম ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সাধারণ ক্যালকুলেটর ৮০ টাকারটা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়, সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ৯৯১ এক্স ১৫০০ টাকা থেকে ১৭০০ টাকা, ৯৯১ এক্স প্লাস ১৩৫০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা হয়েছে। জিপার ফাইল ২৫ টাকা থেকে ৩৫ টাকা। রেজিস্টার খাতা ৩০০ পেজ ১২০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা, রাবার ডজনপ্রতি ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা বেড়েছে।
সূত্র আরো জানায়, নতুন বছর মানেই নতুন শিক্ষাবর্ষ। ওই উপলক্ষে বেড়েছে স্কুল ড্রেস, ব্যাগ ও জুতার দাম। অনেক স্কুলের নিয়মের ফাঁদে অভিভাবকদের থেকে বাড়তি টাকা নেয়ার অভিযোগও রয়েছে ভূরি ভূরি। কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্কুল ড্রেস বানানোর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট টেনলার্স ঠিক করে দিয়েছে। তাতে অভিভাবকদের বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। বাইরে থেকে এক জোড়া ড্রেস দেড় হাজার টাকার মধ্যে বানানো সম্ভব হলেও স্কুল নির্ধারিত টেইলার্সে তা লাগছে প্রায় তিন হাজার টাকা। তাছাড়া স্কুল থেকে বিদ্যালয়ের মনোগ্রাম না দিয়ে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করার অভিযোগও রয়েছে। তাছাড়া গত বছর যে ব্যাগের দাম ছিল ৫০০ টাকা তা এখন ঠেকেছে ৮৫০ টাকায়। ভালো মানের হাজার টাকার ব্যাগের দাম দাঁড়িয়েছে ১৭০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। আর রাজধানীর বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের স্কুলের জুতা সাদা রঙের কেডস। তাছাড়া কিছু প্রতিষ্ঠানে কালো রঙের সু পড়ার চল আছে। কিন্তু নতুন বছর উপলক্ষে দুই ধরনের জুতারই দাম বেড়েছে। মানভেদে সাদা রঙের এক জোড়া কেডস বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। কালো রঙের সু ৭০০ থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবার এক জোড়া জুতা ১০০-১৫০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে সরকারি স্কুলে বেতন কম হলেও বেসরকারি স্কুলে শিক্ষার্থীদের বেতন লাগামহীন। ঢাকার মধ্যম সারির স্কুলে গড়ে প্রতি শিক্ষার্থীকে মাসে ৮০০ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে রাজধানীর একাধিক শিক্ষাপ্রতিষষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকার নির্ধারিত ভর্তি ফির চেয়ে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এবার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫ হাজার, বেসরকারিতে ৮ হাজার ও ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে ১০ হাজার টাকার ফি নেয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু অতিরিক্ত ফি নেয়া ঠেকাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চারজন উপণ্ডসচিবের নেতৃত্বে পৃথক চারটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়।
অন্যদিকে স্কুলের ক্লাসের পাশাপাশি অধিকাংশ শিক্ষার্থী এখন কোচিংমুখী। ঢাকায় কোচিংয়ের রমরমা বাণিজ্য, যা দেশের জেলা-উপজেলা এমনকি গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে। অধিকাংশ অভিভাবকের অভিযোগ, ব্যাচে সন্তানকে পড়াতে আগে প্রতি মাসে শিক্ষককে যেখানে দিতে হতো এক হাজার টাকা। এখন অধিকাংশ শিক্ষক দেড় হাজার টাকা নিচ্ছে। সেজন্য সব জিনিসের মূল্য বৃদ্ধিকে অজুহাত দেখানো হচ্ছে। তাছাড়া কোচিংয়ে পড়াতে আগে ২ হাজার খরচ হলে এখন লাগছে ৩ হাজার টাকা। ক্ষেত্র বিশেষে শিক্ষার্থীদের থেকে বেশিও নেয়া হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মোটামুটি মানের একটি কোচিংয়ে পড়তে প্রতি মাসে দিতে হয় ১৫০০-৩,০০০ টাকা। মাধ্যমিক পর্যায়ে ওই টাকা ক্লাস অনুযায়ী বৃদ্ধি পায়। ষষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের গুনতে হয় তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা। অনেক কোচিং মান অনুযায়ী আরো বেশি টাকা নিয়ে থাকে। সূত্র : এফএনএস