মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৩:৫৩ am
ডেস্ক রির্পোট :
নতুন বছরের পাঠ্যবইয়ে বেশকিছু ভুল এবং তথ্যের অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। এসব ভুল ও অসঙ্গতি চিহ্নিত করতে চলতি মাসেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটির সদস্যরা পাঠ্যবই নতুন করে মূল্যায়নের মাধ্যমে ভুল চিহ্নিত করে সেগুলো সংশোধন করবেন। সেই সংশোধনী ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো হবে। পাঠ্যবইয়ে যেসব ভুল তথ্য আছে তা পড়ানোর সময় শিক্ষকরা সংশোধনী দেখে পড়াবেন। অচিরেই এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিভিন্ন পাঠ্যবই পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যবই ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’-এর ১৬ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ ক্যাম্প, পিলখানা ইপিআর ক্যাম্প ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আক্রমণ চালায় ও নৃশংসভাবে গণহত্যা ঘটায়’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে দুটি তথ্যগত ভুল আছে। যেমন- রাজারবাগ পুলিশ ক্যাম্প ও পিলখানা ইপিআর ক্যাম্প। প্রকৃতপক্ষে রাজারবাগে ছিল পুলিশ লাইনস, আর পিলখানায় ছিল ইপিআর সদর দপ্তর। গত বছরের বইয়েও একই ভুল ছিল।
একই শ্রেণির ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা’ বইয়ের ২০০ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, ‘১২ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের নিকট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।’ এই তথ্যটিও সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শপথ পড়িয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। পরদিন অর্থাৎ ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি ঢাকার সব দৈনিক সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় গুরুত্বের সঙ্গে। সেদিন জাতীয় দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার প্রধান শিরোনাম ছিল, ‘বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রে উত্তরণ: বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী’। প্রধানমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠানের ছবিসহ প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গতকাল বুধবার (১২ জানুয়ারি) অপরাহ্ণে বঙ্গভবনে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সাথে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নতুন মন্ত্রিসভার অপর ১১ জন সদস্যও শপথ গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।’ ছবিতেও বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে শপথবাক্য পাঠ করাতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, পাঠ্যবইয়ে ভুলের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা এরইমধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছি। ভুলগুলো যথাযথভাবে চিহ্নিত করে তা সংশোধন করে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও অবহিত করা হবে।
পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা’ বইয়ের ১৮১ পৃষ্ঠায় ‘অবরুদ্ধ বাংলাদেশ ও গণহত্যা’ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, ‘২৬শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ জুড়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী নির্যাতন, গণহত্যা আর ধ্বংসলীলায় মেতে ওঠে।’ প্রকৃত তথ্য হলো পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর নির্যাতন, গণহত্যা ও ধ্বংসলীলা শুরু হয় ২৫ মার্চ কালরাতে। একই বইয়ের ২০৩ পৃষ্ঠায় ‘সংবিধানের বৈশিষ্ট্য’ অনুচ্ছেদে এক জায়গায় আছে ‘পঞ্চমভাগে জাতীয় সংসদ’। এটি হবে ‘পঞ্চমভাগে আইনসভা’।
একই বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ের (পৃষ্ঠা-২৫) শুরুর দিকেই একাধিক জায়গায় ‘সময়কাল’ শব্দ উল্লেখ আছে। সময় ও কাল দুটি শব্দ, তবে একই অর্থ। তাই যেকোনো একটি ব্যবহৃত হবে। একই পৃষ্ঠায় এক জায়গায় আছে ‘নদ-নদীগুলো’। ‘নদনদী’ শব্দটিই বহুবচন। আরেক জায়গায় ‘কোনো দেশের’ বদলে ‘কোন দেশের’ ছাপা হয়েছে। এ ছাড়া যতিচিহ্ন কোলনের ব্যবহার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক হয়নি। কোনো কোনো বইয়ে ‘পরিপ্রেক্ষিত’ শব্দের বদলে একই অর্থে ‘প্রেক্ষিত’ ছাপা হয়েছে।
নবম-দশম শ্রেণির ‘পৌরনীতি ও নাগরিকতা’ বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে (পৃষ্ঠা-১) ‘অংশগ্রহণের’ বদলে ‘অংশগ্রহনের’ ছাপা হয়েছে। ‘ছিল না’র বদলে ছাপা হয়েছে ‘ছিলনা’। এই বইয়েও কোলনের ব্যবহার বেশিরভাগই ভুল। বেশিরভাগ পাঠ্যবইয়েই হাইফেন, ড্যাশ ও কোলনের ব্যবহার যথাযথ হয়নি। এছাড়াও অন্যান্য বইয়ে নানা ধরনের ভুল তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, যা গত বছরের বইতেও দেখা গেছে।
জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (কারিকুলাম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান বুধবার (৪ জানুয়ারি) জাগো নিউজকে বলেন, পাঠ্যবইয়ের ভুলগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে। ২০১৭, ২০২০ ও ২০২১ সালে নানা ধরনের সংশোধন করা হয়েছে। এরপরও কীভাবে ভুল রয়ে গেছে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাঠ্যবইয়ের ভুল সংশোধনে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও বিদ্যালয় শিক্ষকদের সমন্বয়ে কমিটি করে পাঠ্যবইয়ের ভুল সংশোধন করা হয়। তাদের মাধ্যমে পুরো বই মূল্যায়ন করে যেসব ভুল চিহ্নিত হয় তা সংশোধন আনা হয়। এর পরও কীভাবে এসব বইয়ে ভুল রয়ে গেলো তা দেখা হবে।
তিনি বলেন, প্রতি বছর আমাদের চেষ্টা থাকে নির্ভুল পাঠ্যবই তৈরি করা। যেসব ভুল ধরা পড়ছে তা সঙ্গে সঙ্গে ঠিক করা হচ্ছে। বইয়ের মধ্যে আরও কোন কোন ধরনের ভুল রয়েছে তা জানুয়ারি মাসের মধ্যে বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে যাচাই করা হবে। যেসব ভুল চিহ্নিত হয়েছে ও আরও যেসব পাওয়া যাবে- সব ভুল সংশোধন করে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে একটি সংশোধনী করা হবে। ওই সংশোধনী দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো হবে। ক্লাসে সেসব (যেগুলো ভুল আছে) অধ্যায় পড়ানোর সময় সঠিকটি সংশোধনী দেখে পড়াতে শিক্ষকদের নির্দেশনা দেওয়া হবে। সূত্র : জাগোনিউজ