মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:১৩ am
ইমরান হোসাইন :
রাজশাহীর তানোর উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের হাতিশাইল গ্রামের কছির উদ্দিনের স্ত্রী তোহমিনা বেগম (৫৫)। তাঁর বৃৃদ্ধ স্বামী নানা রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসা খরচ জোগার করায় কষ্ট সাধ্য। হাতিশাইল মৌজায় মাত্র ২৫ শতক তিন ফসলী জমি তার শেষ সম্বল। অভাব অনটনের সংসারে ২৫ শতক জমিতে যেটুকু ধান পান সেটি দিয়েই চলতে হয় সারা বছর। অন্য বছরের ন্যায় চলতি মৌসুমে বোরো চাষ করার জন্য তিনি বীজতলা করেছেন ১৫ দিন আগে। কিন্তু বীজতলা করলেও তোহমিনা বেগম তার ২৫ শতক জমিতে আর বোরো চাষ করতে পারছেন না।
কারণ তার বীজতলার জমির উপর দিয়ে হাতিশাইল গ্রামের আব্দুল মান্নান ও তার ছেলে মিদুল ছাড়াও বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী প্রায় ৪০ বিঘা ফসলী নষ্ট করে কখনো দিনে অথবা রাতের আধারে চারটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে কৃষকের নিজস্ব জমি জোর করে পুকুর খনন শুরু করেছেন।
বীজতলা করেও বোরো চাষ না করতে পারার ক্ষোভ শুধু তোহমিনা বেগমের একাই নয়। ওই হাতিশাইল, কামারগাঁ ছাড়াও সুমাসপুর গ্রামের প্রায় ৩০ জন কৃষকের বীজতলা নষ্ট করে ফসলী জমি জোর করে পুকুর খনন শুরু করেছেন প্রভাবশালীরা। এসব প্রভাবশালীদের সাথে না পেরে তাদের ফসলী জমিতে পুকুর খনন বন্ধ এবং তা রক্ষায় এলাকার প্রায় ৪৬ জন কৃষক স্বাক্ষর করে গত ১৯ ডিসেম্বর তানোর থানা, উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
কৃষকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২৬ ডিসেম্বর সোমবার বিকেলে সজেমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কামারগাঁ ইউপির হাতিশাইল মৌজায় যেখানে পুকুর খনন হচ্ছে। তার মাঝখানে কমপক্ষে পাঁচজন কৃষকের বোরো বীজতলায় চারা রয়েছে। আর যেখানে পুকুরের মাটি দিয়ে পাহাড় করা হচ্ছে তার আশপাশে কমপক্ষে অর্ধশত কৃষক বীজতলা করে বোরো চাষের প্রস্ততি নিচ্ছেন। এঅবস্থায় সেখানে পুকুর খনন করা হলে শুধু অর্ধশত কৃষকের জমিই যে ক্ষতি হচ্ছে তাও নয়, ওই পুকুরের পাড়ের জন্য এ মৌজার প্রায় ৫০০ বিঘা ফসল পানির নিজে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হতে পারে বলে আশঙ্কা এলাকাবাসীর।
এঅবস্থায় সেখানে সংবাদকর্মী এসেছে শুনে জড়ো হতে থাকেন আশপাশের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন কৃষক। তারা সবাই তাদের ফসলী জমি রক্ষায় আকুতি জানান এ প্রতিবেদকের কাছে। এসময় জড়ো হওয়া কৃষকের মধ্যে হাতিশাইল গ্রামের জামাল, গিয়াস ও রেজাউল এবং সমাসপুর গ্রামের শ্রী অনিল চন্দ্র বিশ্বাসসহ কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা হয়।
তারা বলেন, প্রভাবশালী আব্দুল মান্নান ও তার ছেলে মিদুল জোর করে ড্রেজার মেশিন দিয়ে পুকুর খনন শুরু করেছেন তাদের নিজস্ব জমিতে। বাধা দিতে গেলে তারা বলেন, পুকুর খনন হচ্ছে ফসলের বদলে আপনাদের লিজ হিসাবে টাকা দেয়া হবে। কৃষকরা তা মানতে রাজি হয়নি। তবুও তারা জোরপূর্বক বলপ্রয়োগ করে পুকুর খনন অব্যহত রেখেছে বলে জানান তারা।
স্থানীয় কৃষকরা আরও জানান, অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় কৃষক ও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পুকুর খনন না করতে নোটিশ প্রদান করেছেন। আগামী ৫ জানুয়ারী সবাইকে শুনালীতে উপস্থিত থাকার জন্য কথাও বলেছেন। কিন্ত অভিযুক্তরা শুনালীর আগে পুকুর খনন করতে গভীর রাতে একাধিক ড্রেজার মেশিন এনে পুকুর খনন চালিয়ে যাচ্ছেন।
এবিষয়ে অভিযুক্ত কয়েকজন ব্যক্তির মধ্যে যে প্রকাশে পুকুর খনন করছেন তিনি আব্দুল মান্নানের ছেলে মিদুল তার সাথে মঙ্গলবার মোবাইলে কথা হয়। তিনি বলেন, তার নিজের নামে সেখানে ৫ বিঘা জমি আছে। আর সেখানে আরো ২০ বিঘা জমি কৃষকের কাছ থেকে লিজ নিয়ে পুকুর খনন করছেন বলে এড়িড়ে গেছেন তিনি।
এব্যাপারে তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামরুজ্জামান মিয়া বলেন, ফসলী জমিতে পুকুর খনন হচ্ছে কৃষকদের এমন অভিযোগের প্র্রেক্ষিতে সেখানে এক সপ্তাহ আগে অভিযান চালানো হয়। পরে পুলিশ সেখান থেকে গতকাল অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের করে। এছাড়া পুলিশ ঘটনাস্থল হতে ড্রেজার মেশিনের দুইটি ব্যাটারী উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নেয়।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পঙ্কজ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ফসলী জমিতে পুকুর খনন করতে পারবে না কেউ। কৃষকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযুক্তদের নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নিয়মিত মামলায় দু’জনকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। এছাড়াও আগামী ৫ জানুয়ারী শোনানীর দিন ধার্য্য রয়েছে বলে জানান ইউএনও। রা/অ