রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৭:৩৮ am
আর কে রতন, বিশেষ প্রতিবেদক :
রাজশাহী জেলাজুড়ে মাছ চাষে বিপ্লব ঘটে চলেছে। মুনাফা বেশি পাওয়ায় প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছেন নতুন নতুন শিক্ষিত বেকার যুবকরা। এতে তারা সফলতাও পাচ্ছেন। ফলে সময়ের পরিক্রমায় মাছ চাষের মাধ্যমে সুস্বাদু পান চাষ বিখ্যাত রাজশাহী জেলা এখন মাছের রাজ্যে পরিনত হয়েছে। ফলে বলা যেতেই পারে মাছ চাষিরা অর্থনীতিতে একটি অবদান রাখছে।
মাত্র ৫ থেকে ৬ বছরের ব্যবধানে রাজশাহী জেলায় ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে মাছ চাষিদের সংখ্যা। চাষির সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে মাছের উৎপাদন কয়েকগুণ। বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা। যার মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে জেলার অনেক শিক্ষিত বেকারদের। রাজশাহী জেলাজুড়ে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে মাছ চাষ বড় অবদান রাখছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য বিভাগ।
মৎস্য অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায, পূর্বে রাজশাহী জেলার সব উপজেলায় বাণিজ্যিক ভাবে মাছ না হলেও বর্তমানে মৎস্য বিভাগের পরামর্শ ও অধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে বর্তমানে ৯ উপজেলায় বাণিজ্যিভাবে মাছ চাষ শুরু করেছেন নতুন নতুন উদ্যেক্তারা। ফলে মৎস্য বিভাগের হিসেব মতে পুরো জেলায় ১৮ হাজার ২৭ জন চাষি রয়েছেন। এসব চাষিদের মাধ্যমে ৮৪ হাজার ৮০৩ মেট্রিকটন মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে, জেলায় চাহিদা ৫২ হাজার ৬৩ মেট্রিকটন। উৎবৃত্ত ৩২ হাজার ৭৪০ মেট্রিকটন। বিশেষ করে এ জেলার পবা, তানোর, গোদাগাড়ী, বাগমারা, দুর্গাপুর, পুঠিয়া ও মোহনপুর উপজেলায় মৎস্য খামার স্থাপন এবং এতে প্রচুর পরিমাণে মাছ উৎপাদন হচ্ছে।
জেলার মোহনপুর উপজেলার সইপাড়া গ্রামের বড় মৎস্য খামারী বাচ্চু মন্ডল জানান, অন্যান্য ফসলের তুলনায় মাছ চাষ অনেক লাভজনক। শুরুতে আমি দু’একটি পুকুরে চাষ আরম্ভ করলেও বর্তমানে প্রায় দুইশত বিঘা পুকুরে মাছ চাষ করছি। তার মতে স্থানীয় বাজারসহ, রাজধানী ও আশেপাশে জেলা শহরগুলোতে মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পাশাপাশি মাছের দাম ভাল হওয়ায় মাছ চাষে যুক্ত হচ্ছেন অনেক বেকার শিক্ষিত যুবকরা। তিনি আরো জানান, অন্যান্য মাছের পাশাপাশি রুই, কাতল, ব্রিগেড, মৃগেল, পাঙ্গাস, তেলাপিয়া মাছের বিশেষ চাহিদা রয়েছে বাজারে। এছাড়াও এইসব মাছের দাম অন্যান্য মাছের তুলনায় কম হওয়ায় সব শ্রেণির মানুষ কিনতে পারে তাই এইসব মাছ চাষে বিশেষ আগ্রহ হচ্ছে অত্র এলাকার চাষিরা।
তানোর উপজেলার কলমা ইউনিয়নের বনগাঁ গ্রামের মাছ চাষি মশিউর ইমরান বলেন, প্রথমে অল্প পরিসরে মাছচাষ শুরু করি। বর্তমানে প্রায় শতাধিক বিঘা পুকুরে রুই, কাতল, ব্রিগেড, মৃগেল, শিং মাছের চাষ করছি। ভাল হওয়ায় দিন দিন খামার প্রসারিত হচ্ছে।
দূর্গাপুর উপজেলার মাছ চাষি সোহেল রানা জানান, অন্যান্য ফসলের তুলনায় মাছ চাষ লাভজনক হওয়ায় তিনি মাছ চাষে ঝুঁকেছেন। মাছ চাষ বাবদ সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বিঘায় ভাল মুনাফা থাকে।
বাগমারা উপজেলার মাছ চাষি শাফিকুল ইসলাম বলেন, ফসলের তুলনায় মাছ চাষ অনেক লাভজনক। কেন না যে জমিতে একবার ফসল চাষ করলে আর কোন ফসল উৎপাদন করা যেত না। সেসব জমিতে এখন মাছ চাষ করে কয়েকগুণ বেশি মুনাফা আয় করা সম্ভব হচ্ছে। যার মাধ্যমে তিনি স্বাবলম্বী হয়েছেন। উপজেলা মৎস্য কার্যালয় থেকেও বিভিন্ন রকম সহযোগিতা পাচ্ছেন।
মোহনপুর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, মাছ চাষ একটি লাভজনক পেশা। দেশীয় পদ্ধতিতে মাছ চাষের পাশাপাশি বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমেও মাছ চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। মাছ চাষের মাধ্যমে অনেক বেকার যুবকরা নিজেদের স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলছে।
এছাড়াও মাছ চাষের ফলে গ্রামীণ অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মাছ চাষের জন্য চাষিদের নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা। তা/অ