মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:৩৫ am
নিজস্ব প্রতিবেদক, তানোর :
চলতি মাসের ২৯ ডিসেম্বর অবসরে যাবেন রাজশাহীর তানোর পৌর এলাকার তালন্দ ললিত মোহন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বিষ্ণুপদ সরকার। ফলে ৫টি পদের বিপরীতে কোটি টাকার উপরে নিয়োগ বাণিজ্য আবারও শুরু হয়েছে। কলেজের গভর্নিং বডির সংশ্লিষ্টরা হাইকোর্টের চলমান রিট উপেক্ষা করে ল্যাবসহকারী ৩ জন ও অফিস সহায়ক পদে ২ জন কর্মচারীর নিয়োগ পরীক্ষা নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এমন প্রহসনের নিয়োগ পরিক্ষা বন্ধের বিষয়ে সম্প্রতি ২২ ডিসেম্বর তানোর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর পিয়ারুল হক বাদী হয়ে আবারও জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এরআগেও ৮ সেপ্টেম্বর অভিযোগ করা হয়। ওই অভিযোগ ও মামলার ভয়ে নিয়োগ পরিক্ষা স্থগিত করেন অধ্যক্ষ।
অভিযোগ ও মামলার কাগজপত্র ঘেঁটে জানা গেছে, রাজশাহীর তানোর পৌর এলাকায় অবস্থিত তালন্দ ললিত মোহন ডিগ্রি কলেজ অধ্যক্ষ গভর্নিং বডির সভাপতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বেশ কয়েক দফায় ৫টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। ওই বিজ্ঞপ্তিতে ল্যাবসহকারী পদে ৩ জন ও অফিস সহায়ক পদে ২ জন কর্মচারী নিয়োগ দেবার কথা বলা হয়। সর্বশেষ ১৩ জুলাই ও ৫ নভেম্বর ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশ করেন অধ্যক্ষ। কিন্তু এরআগে অনিয়ম করে অতিগোপনে কলেজের গর্ভনিং বডি ইচ্ছেমত গঠন করেন তিনি। এতে ক্ষুব্ধ হন স্থানীয়রা।
পরে স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে তানোর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর পিয়ারুল হক হাইকোর্টে যান। সেখানে অভিজ্ঞ আইনজীবির পরামর্শে কলেজ কমিটির বৈধতা চালেঞ্জ করে গত ৩ আগস্ট অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবদুল গোফরান দুলাল বাদী হয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন। যার নম্বর ৮৪৩২/২০২২। পরে গত ৭ আগস্ট শুনানি শেষে বিজ্ঞ বিচারপতি মো. মজিবর রহমান মিয়া ও কাজী মো. এজারুল আকন্দর দ্বৈত বেঞ্চ ৬০ দিনের মধ্যে কলেজ কমিটিকে জবাব দাখিলের নির্দেশ দেন। কিন্তু এতোদিনও জবাব দাখিল করা হয়নি বলে রিটকারী পিয়ারুল হক জানান। তাঁর বাড়ি হরিদেবপুর মহল্লায়।
তিনি আরও বলেন, আগামী ২৯ ডিসেম্বর অবসরে যাবেন অধ্যক্ষ। তাই তিনি গভর্নিং বডির সভাপতি প্রদীপ কুমার মজুমদার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনাকে অমান্য করে অতিগোপনে আবারও নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ পাইয়ে দেবার নামে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।
এসব প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন- ল্যাবসহকারী পদে সভাপতির আপন ভাতিজা দেবরাজ মজুমদার ও অফিস সহায়ক পদে কলেজটির বিদ্যুৎসায়ী সদস্য শিক্ষক আসলাম উদ্দিনের ভাতিজা জনি আহমেদ। এছাড়াও অন্যান্য পদেও রয়েছে সভাপতি ও অধ্যক্ষের পছন্দের প্রার্থী। তাদের এসব একেক প্রার্থীর কাছ থেকে ১৫ লক্ষ থেকে ১৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দেন দরবার করা হয়েছে। এভাবে ৫টি নিয়োগের বিপরীতে কোটি টাকার উপরে নিয়োগ বাণিজ্য শুরু করেছেন কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ও সদস্যরা। তাই পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে এতো মরিয়া হয়ে উঠেছেন কলেজ কমিটির সংশ্লিষ্টরা বলে জানিয়েছেন পিয়ারুল হক।
এব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিয়োগ বোর্ডের এক সদস্য বলেন, আদালতে চলমান মামলা নিষ্পত্তি ছাড়া কোনো অবস্থায় নির্বাচনি পরীক্ষায় অংশগ্রহণে প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারেন না অধ্যক্ষ। এটি আদালত অমান্য করার শামিল। এজন্য তিনি নিয়োগ বোর্ডে যাবেন না বলে সংশ্লিষ্টদের অবগত করেছেন।
এব্যাপারে অধ্যক্ষ বিষ্ণুপদ সরকার বলেন, হাইকোর্টে রিট ও বিভিন্ন পত্রিকার খবরে সেই সময়ে নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করা হয়। বর্তমানে তিনি অবসরে যাবার আগে গভর্নিং বডির সদস্যরা নিয়োগ বোর্ড গঠনের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। দেখা যাক কি হয় বলে এড়িয়ে গেছেন অধ্যক্ষ। রা/অ