বৃহস্পতিবর, ২১ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৬:৫৩ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক : পাবনার সুজানগর উপজেলায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের কৃষি প্রণোদনা বিনামূল্যে বিতরণের জন্য উন্নতমানের সার ও বীজ হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।
নিজেদের ও আত্মীয়-স্বজনদের নাম ব্যবহার করে এই প্রণোদনা নিজেদের পকেটস্ত করেছেন উপজেলার ১০ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা।
প্রণোদনা বাস্তবায়নের নীতিমালা তোয়াক্কা না করায় এদিকে যেমন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনি রবি মৌসুমে ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকারের নেয়া পরিকল্পনাও হুমকির মুখে পড়ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সুজানগর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের কৃষকদের জন্য পেঁয়াজ, গম, ধান, ভুট্টা, সরিষা, মুগ ও খেসারি ফসলের উন্নতমানের বীজ ও সার বিনামূল্যে বিতরণের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে উত্তরবঙ্গের পেঁয়াজের রাজধানী খ্যাত সুজানগর উপজেলার জন্য বরাদ্দ শীতকালীন পেঁয়াজের বীজ। উচ্চমূল্যের এই বীজ আড়াই শতাধিক প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করার কথা ছিল।
কিন্ত তালিকার অধিকাংশই চেয়ারম্যান ও তাদের আত্মীয়-স্বজন এবং মেম্বারদের নাম ও মোবাইল নাম্বার। এই তালিকায় দু’একজন কৃষকদের নাম থাকলেও তারা জানেনই না এই বীজ ও সার বিতরণের খবর।
কৃষি অফিসের দেওয়া পেঁয়াজের বীজের তালিকায় দেখা গেছে, উপজেলার হাটখালি ইউনিয়নে খোদ চেয়ারম্যানেরই দুটি মোবাইল নাম্বার, রয়েছেন চেয়ারম্যানের দুই ভাইসহ ৫-৭ জন আত্মীয়, বাকিসব ইউপি সদস্য। ভায়
না ইউনিয়নের তালিকায় সবাই ইউপি সদস্য। মানিকহাট ইউনিয়নের ২৫টি প্রণোদনার মধ্যে ৪টি চেয়ারম্যান, ১টি ইউপি সচিব ও বাকিগুলো সদস্যরা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন।
এভাবে উপজেলার সব ইউনিয়নের প্রণোদনাই ভাগবাটোয়ারা করে নেওয়া হয়েছে। দুই-একজন কৃষকদের নাম থাকলেও তারা এবিষয়ে কিছুই জানেন না।
এই সব বীজের পরিমাণ ১ কেজি থেকে শুরু করে ২০ কেজি পর্যন্ত, আর সার দেয়া হয়েছে ২০ থেকে ৩০ কেজি পর্যন্ত। এইসব বীজ ও সারের মধ্যে পেঁয়াজের প্রায় ৮ লাখ, গম ১৭ লাখ টাকা, সরিষা ১১ লাখ টাকাসহ প্রায় কোটি টাকার প্রণোদনা রয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটির মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করা হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এই কমিটির সভাপতি, উপজেলা কৃষি অফিসার সদস্য সচিব এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এই কমিটির উপদেষ্টা।
তালিকা প্রণয়ন করেন, ইউপি চেয়ারম্যান ও দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার নেতৃত্বাধীন কমিটি। তালিকার বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ সংশ্লিষ্ট সবাই।
এবিষয়ে হাটখালি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ খান বলেন, ‘তালিকা আমরাই করেছি। তালিকার সদস্যরা হয়তো বীজ তুলে নিয়ে এসে আরেকজনকে দিয়েছেন। কিন্তু কোনও অনিয়ম করা হয়নি। তাড়াহুড়ো করে তালিকাটা করে দেয়া হয় এজন্য যাচাই-বাছাই করা হয় না।
এখানে আমার নাম্বারটা কীভাবে গেল আমি জানি না। আর আমার ভাইয়েরা যদি কৃষক হোন, তাহলে তো দোষের কিছু না। তারা কৃষক হিসেবে পেয়েছেন।’
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে নারাজ অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন চেয়ারম্যান দাবি করেছেন, ‘ইউপি সদস্যসহ অনেকের থেকে প্রভাবিত হয়ে তারা এইভাবে তালিকা করেছেন।
এসব প্রণোদনা উপজেলা পরিষদ থেকে দেওয়া হয়, সেখান থেকেও একাধিক জনের নাম অন্তর্ভূক্ত করতে বাধ্য করা হয় এবং প্রণোদনা দেওয়ার সময় সেখান থেকেই রেখে দেওয়া হয়।’
এবিষয়ে সুজানগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাফিউল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে ইউনিয়ন থেকে তালিকাটা তৈরি করা হয়। এরপর উপজেলা কমিটি এটির চূড়ান্ত অনুমোদনের পর সার ও বীজ বিতরণ করা হয়।
অনিয়মের অভিযোগ এখনও আমরা পাইনি। যদি কোনও অভিযোগ আসে আমরা তদন্ত করে দেখবো এবং প্রমাণিত হলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
তদন্ত করে দেখার কথা বলেন সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘যদি সুনির্দিষ্টভাবে কেউ অভিযোগ করে থাকে অথবা তথ্য থাকে তাহলে অবশ্যেই আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’ সূত্র : পদ্মাটাইমস