শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৯:৪৩ am
ডেস্ক রির্পোট : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের গাড়াদহ দক্ষিণপাড়া গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের সাতটি ঘর বিক্রি করে দিয়েছেন উপকারভোগীরা। স্ট্যাম্পের মাধ্যমে প্রতিটি ঘর ৮০ হাজার থেকে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন তারা।
উপকারভোগী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাড়াদহ দক্ষিণপাড়া গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১৪টি ঘর নির্মাণ করেছিল উপজেলা প্রশাসন। সম্প্রতি ঘরগুলো উপকারভোগীদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কয়েকদিন আগে ১৪টি ঘরের সাতটি অন্যদের কাছে বিক্রি করে দেন উপকারভোগীরা। ওসব ঘরে এখন বসবাস করছেন কিনে নেওয়া ব্যক্তিরা।
উপজেলা ভূমি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি ঘর নির্মাণে সরকারি বরাদ্দ ছিল এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। পাশাপাশি ঘরের জন্য দুই শতক জমি বরাদ্দ ছিল। পুরো উপজেলায় প্রকল্পের আওতায় ২৫১টি ঘর নির্মাণ করে উপকারভোগীদের দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণপাড়া গ্রামে ১৪ জনকে ১৪টি ঘর দেওয়া হয়।
প্রকল্পের ঘর পাওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দক্ষিণপাড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৮ নম্বর ঘরটি পেয়েছেন আব্দুর রশিদ ও তার স্ত্রী। স্ট্যাম্পের মাধ্যমে তাদের ঘরটি এক লাখ ১০ হাজার টাকায় কিনে বসবাস করছেন জাহের আলী ও তার পরিবার। ৯ নম্বর ঘরটি পেয়েছেন ঠান্ডু মিয়া ও তার স্ত্রী। তাদের ঘরটি এক লাখ ৩০ হাজার টাকায় কিনে সেখানে বসবাস করছেন পিঞ্জিরা খাতুন ও তার সন্তানরা। ১০ নম্বর ঘরটি পেয়েছেন বেল্লাল হোসেন ও তার স্ত্রী ছারা খাতুন। তাদের ঘরটি ৮০ হাজার টাকায় কিনে বসবাস করছেন একই গ্রামের মো. আনু ও তার স্ত্রী সাবিনা বেগম।
একই প্রকল্পের ১৩ নম্বর ঘরটি বরাদ্দ পেয়েছেন রফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ফুলমালা। তাদের কাছ থেকে এক লাখ টাকায় কিনে সেখানে বসবাস করছেন নাজমুল হোসেন ও তার পরিবার। ১৪ নম্বর ঘরটি পেয়েছেন আব্দুস সালাম ও তার স্ত্রী সেলিনা বেগম। তাদের ঘরটি এক লাখ টাকায় কিনে বসবাস করছেন সিরিনা বেগম ও তার পরিবার।
একইভাবে ১৬ নম্বর ঘরটি বরাদ্দ পেয়েছেন বিধবা রেশমা খাতুন। তার ঘরটি এক লাখ টাকায় কিনে বসবাস করছেন হাফিজুল ইসলাম ও নাছিমা খাতুন দম্পতি। ১৭ নম্বর ঘরটি বরাদ্দ পেয়েছেন জহুরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী আফরোজা বেগম। তাদের ঘরটি এক লাখ ১১ হাজার টাকায় কিনে বসবাস করছেন হালিমা বেগম ও তার পরিবার।
স্থানীয়রা বলছেন, ১০ নম্বর ঘরের সুবিধাভোগী বেল্লাল হোসেন ও তার স্ত্রী ছারা খাতুনের গাড়াদহ ফুটবল মাঠের পাশে বড় বাড়ি আছে। সচ্ছল হয়েও ঘর পেয়েছেন তারা। এজন্য পরে ঘরটি বিক্রি করে দিয়েছেন।
উপহারের ঘর কিনে বসবাসের কথা স্বীকার করেছেন মো. আনু ও তার স্ত্রী সাবিনা বেগম। মো. আনু বলেন, ‘আমার ঘরবাড়ি নাই। বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করেও উপহারের ঘর পাই নাই। এখন ঋণ কইরা স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ৮০ হাজার টাকা দিয়া ঘর কিনা বসবাস করছি।’
১৪ নম্বর ঘর পাওয়া আব্দুস সালামের স্ত্রী সেলিনা বেগম বলেন, ‘ঘর বিক্রির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। ঘর বিক্রি হয়েছে সত্য, তবে আমি এক টাকাও পাইনি। সবকিছু জানেন ডিজিটাল ভিশন বিদ্যানিকেতনের পরিচালক জুয়েল আহম্মেদ। তিনি ঘর বিক্রি করে দিয়েছেন।’
এ ব্যাপারে ডিজিটাল ভিশন বিদ্যানিকেতনের পরিচালক জুয়েল আহম্মেদ বলেন, ‘একটি ঘর কেনাবেচার সময় আমি মধ্যস্থতাকারী ছিলাম। তবে কোনও টাকা আমি নিইনি। যাদের ঘর তারাই টাকা নিয়েছেন।’
তবে ঘর কিনে বসবাসের কথা স্বীকার করেছেন সিরিনা বেগম, জাহের আলী, পিঞ্জিরা খাতুন, নাজমুল হোসেন ও হালিমা বেগম। তারা বলছেন, স্ট্যাম্পের মাধ্যমে টাকা দিয়ে ঘর কিনে বসবাস করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহজাদপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ভূমি বরাদ্দ দিয়েছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)। পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তালিকা তৈরি করেছেন। আমি শুধু তালিকা অনুয়ায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছি। কাজেই এ বিষয়ে তারাই ভালো বলতে পারবেন।’
তবে ঘর বরাদ্দে কোনও অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি বলে দাবি করেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমান। তিনি বলেন, ‘যাচাই-বাছাই করে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ঘর বিক্রির বিষয়টি আমরা জেনেছি। প্রকল্পের ঘর বিক্রির সত্যতা পাওয়া গেছে। যারা ঘর বিক্রি করেছেন তাদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিক্রি করা আইনত অপরাধ জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যাদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে কেবল তারাই ঘরগুলোতে বসবাস করতে পারবেন। প্রকল্পের ঘর কোনোভাবেই বিক্রি বা হস্তান্তরের সুযোগ নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছি আমরা। তদন্তে ঘর বিক্রির সত্যতা পাওয়া গেছে। যারা ঘরগুলো পেয়ে বিক্রি করেছেন তাদের বরাদ্দ বাতিল করা হবে। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা ঘরগুলো কিনেছেন তারা যদি প্রকৃত ভূমিহীন হয়ে থাকেন তাদের নামে ঘরগুলো বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।’ সূত্র : বাংলাট্রিবিউন