মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৭:৫৬ am
ডেস্ক রির্পোট : গ্রামীণফোনের কাছে বাংলাদেশ রেলওয়ের বিপুল পরিমাণ টাকা পাওনা থাকলেও তা আদায় করতে পারছে না। আর ওই বিপুল পরিমাণ বকেয়া অনাদায়ী থাকার পেছনে রেলওয়ের কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলা ও অদক্ষতাও দায়ী। বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন স্টেশনসংলগ্ন এলাকায় প্রায় ৪ লাখ বর্গফুট খোলা জায়গা টেলিকম অপারেটর গ্রামীণফোন লিমিটেড ইজারা নিয়ে ব্যবহার করছে। কিন্তু বিগত ২০০২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ওসব জমির লাইসেন্স ফি বাবদ ১৬৬ কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে। মামলাজনিত জটিলতায় রেলওয়ে গ্রামীণফোনের কাছ থেকে বকেয়া আদায় করতে পারছে না। বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মোবাইল ফোন কোম্পানি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা নীতিমালায় (২০২০) নির্দিষ্ট হারে লাইসেন্স ফি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। বিভাগীয় শহর এলাকায় প্রতি বর্গফুট জমির ইজারা নিতে মোবাইল ফোন কোম্পানি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে বার্ষিক ৩৩৫ টাকা লাইসেন্স ফি দিতে হয়। আর জেলা শহরের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুট জায়গার জন্য ফির পরিমাণ ২২৩ টাকা। ওই লাইসেন্স প্রতি বছর নবায়ন করতে হয়। তার ব্যত্যয় হলে লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণের ৩ মাসের মধ্যে ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে লাইসেন্স হালনাগাদ করা যায়। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান টানা ৩ বছর লাইসেন্স ফি না দেয় তাহলে প্রথম বছরের জন্য ১০ শতাংশ, দ্বিতীয় বছরের জন্য ২০ শতাংশ ও তৃতীয় বছরের জন্য ৩০ শতাংশ হারে জরিমানা আদায় করা হয়।
সূত্র জানায়, গ্রামীণফোন লিমিটেড ২০০২ সালে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের ৭৫টি স্টেশনের ২ লাখ ১৭ হাজার ৯২০ বর্গফুট জমি ইজারা নেয়। ওই পরিমাণ জমির বিপরীতে ২০১৬ সাল পর্যন্ত লাইসেন্স ফি বাবদ ৭৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বকেয়া পড়েছে। সময়মতো বকেয়া পরিশোধ না হওয়ায় জরিমানার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আর ভ্যাট ও উৎসে আয়কর ধরা হয়েছে ৮ কোটি টাকা। সবমিলে পূর্বাঞ্চল রেলওয়েতে গ্রামীণফোনের বকেয়ার পরিমাণ ৯৬ কোটি ২৬ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। তাছাড়া ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের ইজারা বাবদ গ্রামীণফোনের কাছে আদায়যোগ্য বকেয়ার হিসাবই করেনি রেলওয়ে। যদিও রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০০৬-এ বলা আছে, নির্ধারিত লাইসেন্স ফি ২০০২ সাল থেকে কার্যকর হবে।
কিন্তু এ ইস্যু নিয়ে গ্রামীণফোনের আপত্তি। তাছাড়া ২০০৬ সালের নীতিমালায় লাইসেন্স ফির পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু গ্রামীণফোন ২০০২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বর্ধিত ফি দিতে রাজি হচ্ছে না। এ নিয়ে আদালতে মামলা চলমান থাকায় ২০০২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি থেকে বকেয়া আদায় করা সম্ভব হয়নি। রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০২০ সালে হালনাগাদ করা হয়েছে। তাতে লাইসেন্স ফির পরিমাণ আরো বেড়েছে। ২০২১ সাল থেকে গ্রামীণফোনের কাছ থেকে লাইসেন্স ফি আদায় শুরু হয়েছে। তবে ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বকেয়া লাইসেন্স ফি আদায় করা সম্ভব হয়নি। মূলত চলমান মামলার জন্যই টাকা অনাদায়ী রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলেরও লাইসেন্স ফি বাবদ গ্রামীণফোনের বিপুল পরিমাণ বকেয়া অনাদায়ী রয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলে গ্রামীণফোন সবমিলে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৪১৪ বর্গফুট জমি ইজারা নিয়েছে। তার মধ্যে বিভাগীয় শহরে ৯ হাজার ৯৬০ বর্গফুট জমি। অবশিষ্ট ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৫৩ বর্গফুট জমি জেলা শহরে ইজারা নিয়েছে গ্রামীণফোন। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে ২০০২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত লাইসেন্স ফি বাবদ গ্রামীণফোনের বকেয়া রয়েছে ৩৭ কোটি ৭৯ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। আর ২০১৪ থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বকেয়ার পরিমাণ ৩২ কোটি ১০ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।
এদিকে বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের কার্যালয় রেলওয়ের দুই অঞ্চল মিলে গ্রামীণফোনের কাছ থেকে ১৬৬ কোটি টাকা লাইসেন্স ফি বকেয়া থাকার জন্য রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বে অবহেলা ও অদক্ষতাকে দায়ী করেছে। পাশাপাশি দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণেরও সুপারিশ করেছে। সূত্র : এফএনএস