রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৭:০১ am
মো. শাকিল হোসেন (নিয়ামতপুর) :
মাঠে মাঠে মৌ মৌ গন্ধ, ভ্রমর ছুটছে মধু আহরণে। সরিষা ক্ষেত গুলো যেন প্রকৃতির হলুদ কন্যায় সেজেছে। দিগন্ত মাঠজুড়ে হলুদের সমাহার। বাতাসে দোল খাচ্ছে সরিষার ফুলগুলো। এ দৃশ্য সকলেকেই আকৃষ্ট করছে। উত্তরের জনপদ নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলায় বেড়েছে সরিষার আবাদ। বাজারে তেলের দাম বেশি হওয়ায় এবার সরিষা চাষে ঝুকেছে কৃষক।
কৃষিতে খরচ বেড়েছে তাই অল্প জমিতে বেশি ফসল ফলন করার আশায় রোপা আমণ কাটাঁর পরেই জমি ফেলে না রেখে সরিষা চাষে প্রস্তুত করে কৃষকরা। স্বল্প খরচ আর কম সময়ে সরিষা চাষে বেশি লাভ। প্রতিবিঘা জমিতে সরিষার গড়ে ৬ থেকে ৭ মণ হয়। যা ৬ থেকে ৭ জনের একটি পরিবারের সারা বছরের তেলের চাহিদা পূরণ করতে পারে। এর মেডিসিনাল ভেল্যুও আছে।
বিষেজ্ঞদের মতে, সরিষার শিকড়ে নডিউল থাকে। যা জমিতে নাইট্রোজেন যোগ করে। জৈব সার হিসেবে ও সরিষা গাছ অনেক গুরুত্ববহন করে। সরিষার খৈল পুকুরে এবং জমিতে ও গবাদিপশুর খাবার হিসেবে খুব গুরুত্বপূর্ণ। সরিষার চাষের পাশাপাশি কৃষকরা সেই জমি থেকে বাড়তি আয় হচ্ছে মধু সংগ্রহ করে। মধু সংগ্রহ করলে সরিষার ফলন আরো বৃদ্ধি পায়। তাই কৃষকরা সরিষার ফলন বৃদ্ধি করা সেইসাথে আরো বাড়তি আয় করার জন্য উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের মালঞ্চি গ্রামের কৃষকরা এই মধু সংগ্রহ করছেন।
উন্নত জাতের সরিষা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর বেড়েছে সরিষা চাষ। প্রচলিত দেশি সরিষার চেয়ে ফলন বেশি হওয়ায় বারি-১৪, বারি-১৫, বারি-১৭, বারি ১৮ ও বিনা-৪ জাতের সরিষা চাষে আগ্রহী বেশি চাষিরা। অনেকেই আমন ধান সংগ্রহের পর জমি ফেলে না রেখে সরিষা চাষ শুরু করেছেন। এরপর আবার বোরো ধান রোপণ করবেন তারা। ফলে একই জমিতে বছরে তিনবার ফসল উৎপাদন হচ্ছে। সরেজমিনে বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সরিষা গাছে ফুল এসেছে, অনেক গাছে ফলও এসেছে।
সরিষা চাষিরা জানান, এবার প্রতি বিঘা জমি থেকে ৬ থেকে ৭ মণ সরিষা উৎপাদনের আশা করছেন তারা। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেব মতে চলতি বছরে সরিষার ল্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৫০ হেক্টর জমি। সেখানে চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমি। বাম্পার ফলনের আশা কৃষক ও কৃষি বিভাগের।
বিপুল সংখ্যক কৃষক জানান, প্রতিবিঘা জমিতে সরিষা চাষে খরচ হয় সর্বোচ্চ সাড়ে তিন হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা। প্রতিমণ সরিষা বিক্রি করা যায় ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা দরে। প্রতি বিঘাতে গড়ে ৬ থেকে ৭ মণ সরিষা উৎপাদন হলে বিঘায় প্রতি ১৫-১৬ হাজার টাকা লাভ করা যায়। কম সময়ে কম খরচে বেশি লাভ হয়। আবার সরিষা তোলার পরে ওই জমিতে বোরো আবাদ হয় পুরো দমে।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার কামরুল হাসান বলেন, স্বল্প খরচে আর কম সময়ে লাভজনক ফসল সরিষা চাষ। সরকারের কৃষিতে সুদৃষ্টি রয়েছে। উপজেলায় সরকারি ভাবে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে হাজার হাজার কৃষককে। ভাল বীজের পর্যাপ্ততা এবং প্রণোদনা প্রদান ও আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় সরিষা আবাদ বেড়েছে। প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়। সরিষা আবাদের ফলে তেলের চাহিদা পুরনের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে, গত ৭ ডিসেম্বর বিকেলে উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের মালঞ্চি গ্রামের সরিষার জমি পরিদর্শন করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. শামছুল ওয়াদুদ, নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবু হোসেন ও জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার একেএম মঞ্জুরে মাওলা।
এসময় উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আলহাজ¦ ওবাইদুল হকের সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. শামছুল ওয়াদুদ। এসময় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামরুল হাসানের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবু হোসেন, জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার একেএম মঞ্জুরে মাওলা ও ভাবিচা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উৎপল কান্ত সরকার পিন্টু প্রমুখ।
এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. সামসুজ্জোহা, উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সফিউল হক, উপজেলা প্রেসকাবের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শিমুল, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান ও জামিনুর রহমান প্রমূখ। রা/অ