শনিবর, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:৪৭ pm
আমানুল হক আমান (নিজস্ব প্রতিবেদক) বাঘা : রাজশাহী রাজশাহীর প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্টানের মধ্যে অন্যতম একটি নাম আড়ানী মনোমোহিনী উচ্চ বিদ্যালয়। বৈঠক ঘর থেকে উঠে এসেছে দালান কোঠায়। স্বীকৃতি পেয়েছে সরকারিকরণের।
জানা যায়, ১৮৬৫ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও ১৮৫৭ সালের প্রথম দিকে শ্রী ভগবান দাশের বাড়ির বৈঠক ঘরে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা হয়। দীর্ঘ ৫০ বছর প্রথম শ্রেণি হতে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা মাধ্যম অর্থাৎ ভারনাকুলার বিদ্যালয় হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। প্রায় ৫০ ফুট একটি আট চালা খড়ের ঘরে শ্রেণি পাঠদান কাজ চলতো।
ইংরেজি ১৯১৫ সালে উচ্চবিদ্যালয় হিসাবে অনুমোদন পেয়ে পঞ্চম শ্রেণি হতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত চালু হয়। বিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের ১৯২১ সালে এন্ট্রান্স পরীক্ষা হিসাবে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি মাধ্যমে শুধু বাংলা বিষয় বাদে ১২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। তাদের একজন শ্রী যোতিশ চন্দ্র মৈত্র প্রথম বিভাগে পাশ করেন তিনি। ইংরেজি মাধ্যমে পড়ালোখা হত ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে। ওই সময় রাজশাহীর চারঘাট, বাঘা ও নাটোরের বাগাতিপাড়া লালপুরের মধ্যে একটি মাত্র বিদ্যালয় ছিল যার নাম আড়ানী মনোমহিনী উচ্চ বিদ্যালয়।
১৯২৭ সালে বৃট্রিশ শাসনামলে বিদ্যালয়টি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী অনুমোদন লাভ করে। ১৯৪৮ সাল হতে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত ঢাকা বোর্ডের অধিনে লেখাপড়া হত। ১৯৬২ সাল হতে নতুনভাবে বোর্ডের কার্যক্রম শুরু হওয়ায় বিদ্যালয়টি বর্তমানে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধিনে।
বিদ্যালয়টি মূলত পুঠিয়ার লস্করপুরের রাণী মনোমহিনীর নামে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৫ সালে। যার প্রতিষ্ঠাতা রাজা পরেশ নারায়ণ। তার অর্থানুকুলে ভূ’মি ও অর্থ সহায়তায় খড়ের আট চালা ঘরে স্কুল স্থাপিত হয়। স্কুলের নামকরণ হয় রাজ পরেণ নারায়ণ এডিড ভারনাকুলার স্কুল রাজশাহী জেলার শহর থেকে ৩৯ কিলোমিটার পূর্বদিকে আড়ানী বাজার এলাকার পদ্মার নদীর শাখা বড়াল নদের ধারে মনোরম পরিবেশে আড়ানী মনোমোহিনী উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত।
বাঘা উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তর দিকে আড়ানী পৌর সদর। আড়ানী রেলওয়ে স্টেশন থেকে দুই কিলোমিটার পশ্চিমে আড়ানী বাজার। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১০২ বছর পর ১৯৬৩ সালে দোতালা ভবন নির্মাণ করা হয়। এ ভবনটি ১৯৭১ সালে ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করেন মুক্তিযোদ্ধারা। অতি প্রাচীন এবং অতীব উন্নতমানের শিক্ষক মন্ডলী দ্বারা পরিচালিত বিদ্যালয়টি উন্নতমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে তৎকালীন রাজশাহী জেলায় অত্যন্ত সুপরিচিতি লাভ করে।
বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটির সন্তোষজনক ফলাফলের ভিত্তিতে সরকারিকরণ করা হয়েছে ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। বিদ্যালয়টির নতুন পুরাতন মিলে বর্তমানে ভবন সংখ্যা ৫টি। শ্রেণি কক্ষ ৩০টি। তন্মধ্যে প্রধান শিক্ষক, সহকারি শিক্ষক ,ছাত্রীদের কমন রুম, লাইব্রেরী রুম, কম্পিউটার রুম, বিজ্ঞানাগার, শ্রেণিকক্ষ আছে।
মোট শিক্ষকের সংখ্যা ১৫ জন ও কর্মচারী দুইজন। মোট ছাত্র-ছাত্রী ৫৫৯ জন। চলতি বছরে এসএসসি পরীক্ষা অংশ নেয় ১৮৯ জন, ২৮ নভেম্বর প্রকাশিত ফলাফলে ১৬৪ জন পাশ করেছে। এরমধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৬ জন। বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষর্থীদের কেউ সচিব, কেউ গবেষক, কেউ বিজ্ঞানী হয়েছেন। তাদের একজন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মো. সফিকুল ইসলাম মুকুট ও বিজ্ঞানী মো. ওয়ালিহাদ।
বিদ্যালয়ের প্রাপ্তন প্রধান শিক্ষক আবদুস সাত্তার মিঞা বলেন, স্থানীয় অনেক শিক্ষার্থীরা সরকারি বিদ্যালয়টি ভর্তি হতে পারছেনা। ভর্তির কোটা বৃদ্ধি করে অথবা এলাকায় নতুন একটি বিদ্যালয় স্থাপন করলে পড়ালেখা সুযোগ পাবে স্থানীয় শিক্ষার্থীরা।
তিনি জানান, ১৮৬৫ সাল থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ প্রায় ৪৯ বছর ১ম শ্রেণি থেকে ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত ভগবান দাসের বাড়ির বৈঠক ঘরে পাঠশালার শিক্ষক হিসেবে পড়াশুনা করাতেন।
প্রধান শিক্ষক শ্রী সঞ্জয় কুমার দাস বলেন, পরারাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপির একান্ত প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ করা হয়েছে। সরকারিভাবে নতুন ভবন নির্মিত হয়েছে। জাতীয়করণ ঘোষণা করা হলেও এখনও জাতীয়করণ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে সরকারি সুযোগ সুবিধা পাবেন। সরকারি করণের আগে ছাত্র-ছাত্রী ছিল সাড়ে ৮৫০ জন, বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রী সংখা ৫৫৯ জন। সরকারি করণের আগে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা বেশি থাকলেও সরকারি নীতিমালায় ভর্তি আগের তুলনায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম হচ্ছে। ইতোমধ্যে দুইজন শিক্ষক অবসর গ্রহন করেছেন। তাদের পদ শুন্য থাকায় শিক্ষা ব্যবস্থা কিছুটা ব্যহত হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের দুটি পরিত্যক্ত রয়েছে। ভবনের কক্ষগুলো গুমোট পরিবেশ। দেয়াল থেকে ইট-সুড়কি ও ছাদের পলেস্তা বের হয়ে খসে পড়ছে। ছাদের বিম ও দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি হলে ছাঁদ চুইয়ে পানি পড়ে। সেগুলো অপসারণ কিংবা সংস্কার না করায় জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তবে সেখানে কোন ক্লাস হয় না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও আড়ানী মনোমোহিনী উচ্চবিদ্যালয়ের সভাপতি শারমিন আখতার বলেন, প্রতিষ্ঠানটি সুচারু রুপে পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটিতে যে সকাল সমস্যা রয়েছে, সেগুলো সমাধানে চেষ্টা করা হবে। প্রতিষ্টানে লেখাপড়ার মান অনেক ভাল।