বুধবা, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৮:১৫ am

সংবাদ শিরোনাম ::
ওপারের কলকাতায় তারকাদের ‘মধ্যমণি’ শাকিব জুলুমের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার! লেখক, রাজু আহমেদ ৩০ ডিসেম্বর শুরু হবে বিপিএল প্রাইভেটকার চাপায় চীনে ৩৫ জন পথচারী নিহত নগরীতে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার ৫ বাগমারায় দরিদ্র নারীদের সঞ্চয়ের টাকা উদ্ধার করলেন ইউএনও নগরীতে আরডিএ’র বিরুদ্ধে পুলিশ কর্মকর্তার মামলা মেডিক্যাল কলেজে পরীক্ষা দিতে এসে কারাগারে ছাত্রলীগ কর্মী তিন উপদেষ্টার অপসারণ দাবিতে ব্যানার নিয়ে রাস্তায় মহিলা নেত্রী মৌগাছি কলেজের অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধন সরকার ১০-১২ বছর ক্ষমতায় থাকতে চাইছে? ইউনূসকে বিএনপির টার্গেট বঙ্গভবন থেকে মুজিবের ছবি সরানো ঠিক হয়নি : রিজভী আফগানিস্তানের কাছে বাংলাদেশের সিরিজ হার, ছক্কায় জয় দুর্গাপুরে ওয়ার্ড আ.লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ দুইজন আটক রাজশাহী কলেজে ছাত্রলীগ ‘ভয়ংকর রূপে’ ফেরার বার্তা, তদন্ত কমিটি তানোরে শিক্ষকদের একত্রকরণে কার্যকর কমিটি গঠন ও মতবিনিময় নগরীতে বিস্ফোরক মামলার ১৪ আসামি গ্রেপ্তার তানোরে ব্র্যাক সমন্বিত উন্নয়ন কর্মসূচি-বারিন্দ প্রকল্পের আয়োজনে কর্মশালা রাজশাহীতে কৃষকবান্ধব সেচ নীতিমালা প্রণয়নের দাবিতে মানববন্ধন বাগমারায় আ.লীগ নেতার বিল দখল, জলাবদ্ধতায় জমিতে চাষাবাদ অনিশ্চিত
প্রতিবন্ধী ভাবনা ও আমাদের অঙ্গিকার : প্রকাশ ঘোষ বিধান

প্রতিবন্ধী ভাবনা ও আমাদের অঙ্গিকার : প্রকাশ ঘোষ বিধান

মানুষ সমাজ বদ্ধজীব। প্রত্যেক প্রতিবন্ধীই এই সমাজের অর্ন্তভুক্ত। এদেরকে অবহেলা করে চললে কখনই সমাজের উন্নতি করা যাবে না। এদেরকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের চলতে হবে। তাদের পাশে থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া প্রতিটি মানুষের একান্ত কর্তব্য। তাদের প্রতি সহৃদয় হওয়া আমাদের সামাজিক কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। কারণ প্রতিবন্ধীরাও সমাজের অর্ন্তভুক্ত।
৩ ডিসেম্বর আর্ন্তজাতিক প্রতিবন্ধী দিবস। জাতিসংঘের তত্বাবধানে ১৯৯২ সাল থেকে দিবসটি পালিত হচ্ছে। শারীরিক ভাবে অসম্পূর্ণ মানুষদের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন ও তাদের কর্মকান্ডের প্রতি সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যেই দিবসটি পালিত হয়।
বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসের পিছনে রয়েছে এক ঘটনাবহুল জীবন স্মৃতি। ১৯৫৮ সালের মার্চ মাসে বেলজিয়ামে এক ভয়ানক খনি দূর্ঘটনায় বহু মানুষ মারা যায়। আহত পাঁচ হাজারেরও বেশি ব্যক্তি চিরজীবনের মতো প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে। তাদের জীবন দূর্বিসহ হয়ে ওঠে। তাদের প্রতি সহমর্মিতা ও পরহিতপরায়নতায় বেশ কিছু সামাজিক সংস্থা চিকিৎসা ও পুর্নবাসনের কাজে স্বতঃস্ফুর্তভাবে এগিয়ে আসে। পরের বছর জুরিখে বিশ্বের বহু সংগঠন সম্মিলিত ভাবে আন্তঃদেশীয় স্তরে এক বিশাল সমাবেশ করেন। সেখানে সর্বসম্মতভাবে প্রতিবন্ধী কল্যাণে বেশকিছু প্রস্তাব ও কর্মসূচী গৃহিত হয়। খনি দূর্ঘটনায় আহত বিপন্ন প্রতিবন্ধীদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য প্রতিবন্ধী দিবস পালনের আহবান জানানো হয়। সেই থেকেই কালক্রমে ৩ ডিসেম্বর সারা পৃথিবীর প্রতিবন্ধী মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ানোর দিন হয়ে উঠেছে। ৩ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে ২৮তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস এবং ২১তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস। দিবসটি উদ্যাপনে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়, সমাজসেবা অধিদপ্তর, জাতীয় প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে প্রতিবন্ধী বিষয়ে সচেতনার প্রসার এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মর্যদা সমুন্নতকরণ অধিকার সুরক্ষা এবং উন্নত সাধন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতি বছর দিবসটি পালন করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশে মোট জন সংখ্যার ১০ ভাগ অর্থাৎ ১ কোটি ৭০ লাখ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। এর মধ্যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা ৩৩ লাখ। এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে একটি রাষ্ট্রের উন্নতি ও অগ্রগতি সম্ভব নয়। বর্তমান সরকার ২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ প্রনয়ণ করেন। এর দুই বছর পর ২৪ নভেম্বর ২০১৫ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার ও সুরক্ষা বিধিমালা, ২০১৫ গেজেট আকারে প্রকাশ করেন। যা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও স্বাধীনতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
সামাজের আরো দশজন যে কোজগুলো করতে পারে ইমপেয়ারমেন্টের কারণে সে কাজগুলো প্রত্যহিক জীবনে করতে না পারার অবস্থাটাই হল ডিসএবিলিটি বা প্রতিবন্ধীতা। দেহের কোন অংশ বা তন্ত্র যদি আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে, ক্ষনস্থায়ী বা চিরস্থায়ী ভাবে তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারায় তবে সে অবস্থাটিকেই ইমপেয়ারমেন্ট বোঝায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশিত (আইসিআইডিএইচ) শীর্ষক প্রকাশনায় বিকলঙ্গ ও প্রতিবন্ধী সমস্যাকে ৩ শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। যাথা দূর্বলতা, অক্ষমতা ও প্রতিবন্ধী। বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন, ২০০১ এ বলা হয়েছে প্রতিবন্ধী অর্থ- এমন ব্যক্তি যিনি জন্মগতভাবে বা রোগাক্রান্ত হয়ে বা দূর্ঘটনায় আহত হয়ে বা অপচিকিৎসায় বা অন্য কোন কারণে দৈহিক ভাবে বিকলঙ্গ বা মানসিক ভাবে ভারসাম্যহীন এবং উক্তরুপ বৈকল্য বা ভারসাম্যহীতার ফলে স্থায়ী ভাবে আংশিক বা সম্পূর্ণ কর্মক্ষমতাহীন এবং স্বাভাবিক জীবন যাপনে অক্ষম।
প্রতিবন্ধীতার আবার প্রকারভেদও আছে। বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধীত্ব নিয়ে জন্ম গ্রহণ করলে তাকে প্রাথমিক বা জন্মগত প্রতিবন্ধী বলা হয়। আর জন্মের পরে বিভিন্ন কারনেণ প্রতিবন্ধীত্ব বরণ করলে তাকে পরবর্তী বা অর্জিত প্রতিবন্ধীতা বলা হয়। প্রতিবন্ধীদের দুটি শ্রেণি। এক শারীরিক প্রতিবন্ধী, দুই মানসিক প্রতিবন্ধী। দৃষ্টিহীন, বোবা, বধির, খোড়াদের শারীরিক প্রতিবন্ধী বলা হয় আর মানসিক ভারসাম্যহীন, বোকা, উন্মদ তাদেরকে মানসিক প্রতিবন্ধী বলা হয়। শারীরিক প্রতিবন্ধী, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, বাক প্রতিবন্ধী, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও বহুবিধ প্রতিবন্ধী। তার যে কোন অঙ্গ আক্রান্ত হয়েছে। প্রতিবন্ধীতা যে কোন মানুষের কাছে দুঃখ জনক। শারীরিক ও মানসিক ভাবে যাদের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তাদের আমরা প্রতিবন্ধী বলি।
১৯৮৫ সাল থেকে দেশে সকল ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নের লক্ষে কাজ শুরু হয়। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীদের নিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা প্রদান। সরকারি ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণি চাকুরীতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও অনাথদের ১০ ভাগ কোটা সংরক্ষন করা হয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী কোটা সংরক্ষিত রয়েছে। বিসিএস ক্যাডারে ১ ভাগ কোটা সংরক্ষনের প্রস্তাব রয়েছে। দেশে শিক্ষাকেন্দ্রে প্রায় ১৬ লাখ বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি লেখাপড়া করছেন। তবে বেসরকারি স্কুলগুলোতে শিক্ষা ব্যয়বহুল হওয়ায় নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের নাগালের বাহিরে রয়েছে। তবুও বিভিন্ন প্রতিকুলতাকে উপেক্ষা করে অসংখ্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করছেন। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে অনেক প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা চাকুরী করছেন। দিন দিন তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাঁচ্ছে। যা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবস্থাকে শক্তিশালী করেছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের খেলাধূলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশ গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে। তারা স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতি প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করছে।
প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়, তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন ও সহযোগিতার হাত বাড়ানো প্রতি মানুষের কর্তব্য। প্রতিবন্ধী শব্দটি দ্বারা ত্রুটি বা শারীরিক অসম্পূর্ণ ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে। এটি কোন ব্যক্তির পরিচয় নয়। প্রতিবন্ধী বলে কাউকে আলাদা করে দেখা উচিত নয়। মানুষ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসা।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি ভয় ও কুসংষ্কারাচ্ছন্ন মনোভাবের কারণে পারিবারিক, সামাজিকসহ সে দেশের সামগ্রীক উন্নয়নের অংশগ্রহণ ও অংশীদারীত্বের অধিকার খুবই কম পায়। ফলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবস্থার আশাতিত উন্নয়ন ঘটেনি। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা কোন না কোন ভাবে পরিবারে অবহেলার শিকার। তবে কোন পরিবারে কম, কোন পরিবারে বেশি। তারা অবহেলার দরুণ হতাশা, দূর্দশা, দারিদ্রতার অভিশাপ নিয়ে অতি কষ্টে জীবন অতিবাহিত করে। লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট। সূত্র : এফএনএস

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.