রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৭:৫৩ am
শহিদুল ইসলাম (নিজস্ব প্রতিবেদক) নাচোল :
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলায় আশ্রয়হীনদের জীবন-মান বদলে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ন প্রকল্প। সরজমিনে উপজেলার নাচোল সদর ইউনিয়নের হুলাশপুর আশ্রয়ন প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, সময়ের সঙ্গে এখন বদলেছে ছিন্নমূল মানুষের জীবন-মান। তারা এখন বসবাস করছে রঙিন ঢেউটিন আর পাকা দেয়ালের আধা পাকা বাড়িতে।
ওইসব বাড়ির আশেপাশে তৈরি করা হয়েছে শাকসবজির চাষাবাদ। কেউ পালন করছেন হাঁস, মুরগি, ছাগল ও গরু বাছুর। সন্তানদের পাঠাচ্ছেন স্কুলে। বসতির দুশ্চিন্তা ছেড়ে নিশ্চিন্ত মনে কাজ করে এগিয়ে নিচ্ছে সংসার। সংসারে এসেছে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা। উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রকল্পের বাসিন্দারা গঠন করছেন সমবায় সমিতি। নিয়মিতভাবে দিচ্ছেন প্রশিক্ষণ। অনেকের একাডেমিক শিক্ষা না থাকলেও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা হয়ে উঠছেন স্বশিক্ষিত। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দরা নিয়মিত তদারকি করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দাদের।
এবিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল হোসেন জানান, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে সারা দেশের ন্যায় নাচোল উপজেলাতে হতদরিদ্রদের বসবাসের কোন ঠিকানা ছিল না। পর্যায়ক্রমে তাদের তালিকা করে স্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে মানুষগুলো তাদের ভাগ্যের চাকা নতুন ভাবে ঘোরাতে শুরু করেছেন।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাইমেনা শারমীন বলেন, প্রথম পর্যায় থেকে শুরু করে চতুর্থ পর্যায়ে প্রায় ৯৯৬ জন ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য ভূমি ও গৃহ প্রদান করা হয়েছে। চতুর্থ পর্যায়ের কিছু কাজ চলমান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে যোগ্যদের চিহ্নিত করে সরকারি জায়গায় বিনামূল্যে ঘর তৈরি করে দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন, গৃহহীন, হতদরিদ্র ও উৎপাটিত পরিবারের স্বামী-স্ত্রী যৌথ নামে জমি ও বাড়ির মালিকানা দেয়া হয়েছে। প্রতিটি ইউনিটে দুটি কক্ষ, একটি রান্নাঘর, একটি টয়লেট ও একটি বারান্দা রয়েছে। পূনর্বাসিত পরিবারগুলোর জন্য বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে এবং প্রকল্পের জায়গায় নিরাপদ পানির জন্য মোটরচালিত নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন উৎপাদনশীল এবং আয়বদ্ধ কর্মকান্ডে নিয়োজিত করার জন্য ব্যবহারিক এবং প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। তাদের আত্মসামাজিক উন্নয়নের জন্য ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দারা তাদের জীবনমান উন্নয়নে নিজেরাই এগিয়ে এসেছে। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করছি। এই প্রকল্প একটি রোল মডেল কারণ এভাবে কোন দেশে আশ্রয়হীনদের জন্য সরকারিভাবে নিরাপদ ছাদ তৈরির ব্যবস্থা হয়নি।
এবিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মিথিলা দাস বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়েছে। এই প্রকল্পের বাসিন্দাদের সচ্ছলতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ এবং সরকারি পুকুর পাড়ের বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আশ্রয়ন প্রকল্পবাসীদের সমিতির মাধ্যমে দেওয়ার ব্যবস্থা চলছে।
উপজেলার হুলাসপুর আশ্রয়ন প্রকল্পের ইসমাইল হোসেন, ফিরোজা বেগম, মৌসুমী খাতুন, মোশারফ হোসেন ছাড়াও আরো অনেকে বলেন, আমরা কোনদিন ভাবিনি নিজের ভালো একটা বসবাসের ঠিকানা করতে পারব। এখন সেটি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে হয়েছে। সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারছি। নিজের হাঁস-মুরগি, ছাগল, ভেড়া ও গরু পালনসহ নানা কাজ করার সুযোগ হয়েছে। সত্যিই এটা স্বপ্নের আশ্রয়ন প্রকল্প। আল্লাহপাকের নিকট বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের সকল সদস্যদের জন্য মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করি।
ওই এলাকার মোশারফ হোসেন বলেন, আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান। মেয়েটি এবার মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণীতে বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছে। ছেলেটির বয়স পাঁচ বছর। এক সময় মাথা গোঁজার কোন ঠাঁই ছিল না তাদের। রোদ বৃষ্টির মধ্যে কোন রকমে খড়ের চালা ঘরে অন্যের জায়গায় জীবন-যাপন চলতো।
বর্তমানে আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া স্বপ্নের বাড়িতে জীবনের অন্ধকার কেটে আলোর মুখ দেখতে পেয়েছি। এখন নিশ্চিন্তে মাথা গোঁজার ঠাই হয়েছে। হাঁস মুরগির পাশাপাশি গরু ও ছাগল পালন করতে শুরু করেছি। এতে অভাব দূর হয়েছে। পেয়েছি শান্তির সুবাতাস। রা/অ