বুধবা, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৮:১৩ am

সংবাদ শিরোনাম ::
ওপারের কলকাতায় তারকাদের ‘মধ্যমণি’ শাকিব জুলুমের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার! লেখক, রাজু আহমেদ ৩০ ডিসেম্বর শুরু হবে বিপিএল প্রাইভেটকার চাপায় চীনে ৩৫ জন পথচারী নিহত নগরীতে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার ৫ বাগমারায় দরিদ্র নারীদের সঞ্চয়ের টাকা উদ্ধার করলেন ইউএনও নগরীতে আরডিএ’র বিরুদ্ধে পুলিশ কর্মকর্তার মামলা মেডিক্যাল কলেজে পরীক্ষা দিতে এসে কারাগারে ছাত্রলীগ কর্মী তিন উপদেষ্টার অপসারণ দাবিতে ব্যানার নিয়ে রাস্তায় মহিলা নেত্রী মৌগাছি কলেজের অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধন সরকার ১০-১২ বছর ক্ষমতায় থাকতে চাইছে? ইউনূসকে বিএনপির টার্গেট বঙ্গভবন থেকে মুজিবের ছবি সরানো ঠিক হয়নি : রিজভী আফগানিস্তানের কাছে বাংলাদেশের সিরিজ হার, ছক্কায় জয় দুর্গাপুরে ওয়ার্ড আ.লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ দুইজন আটক রাজশাহী কলেজে ছাত্রলীগ ‘ভয়ংকর রূপে’ ফেরার বার্তা, তদন্ত কমিটি তানোরে শিক্ষকদের একত্রকরণে কার্যকর কমিটি গঠন ও মতবিনিময় নগরীতে বিস্ফোরক মামলার ১৪ আসামি গ্রেপ্তার তানোরে ব্র্যাক সমন্বিত উন্নয়ন কর্মসূচি-বারিন্দ প্রকল্পের আয়োজনে কর্মশালা রাজশাহীতে কৃষকবান্ধব সেচ নীতিমালা প্রণয়নের দাবিতে মানববন্ধন বাগমারায় আ.লীগ নেতার বিল দখল, জলাবদ্ধতায় জমিতে চাষাবাদ অনিশ্চিত
চীনা ঋণের ফাঁদ, বাংলাদেশ নেই তো? লেখক, বিভুরঞ্জন সরকার

চীনা ঋণের ফাঁদ, বাংলাদেশ নেই তো? লেখক, বিভুরঞ্জন সরকার

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি ছিল। দেশের ভেতরে যেমন দেশের বাইরেও তেমন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দেশের বাইরে অকৃত্রিম বন্ধু ছিল ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়নসহ পূর্ব ইউরোপীয় সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো, ভিয়েতনাম, কিউবা। আমেরিকা, চীনসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো প্রায় সবাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে, পাকিস্তানের পক্ষে। স্বাধীনতার পর, বিশেষ করে পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির পালাবদল হয়েছে এবং বিশ্ব পরিস্থিতিও আগের জায়গায় নেই।

সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব আর নেই। এখন একাত্তরের শত্রু দেশগুলোর সঙ্গেও বাংলাদেশের বৈরিতা নেই। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে উষ্ণতার ওঠানামা আছে। আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে উষ্ণতা বাড়ে, অন্য সরকার এলে কিছুটা হেরফের হয়ই। তবে পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আর বৈরী নেই। বরং অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে ভারতের চেয়ে চীন সম্ভবত এগিয়ে আছে। বাংলাদেশের অনেক উন্নয়ন প্রকল্পে চীনের আর্থিক ও কারিগরি সাহায্য চোখে পড়ার মতো।

 চীনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে কোনো দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করেছে, তেমন উদাহরণ না থাকলেও বিপদগ্রস্ত হওয়ার একাধিক দৃষ্টান্ত আছে। তাই ঢালাওভাবে চীনের কাছ থেকে ঋণ সহযোগিতা নেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে বলে উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

ভারতের সঙ্গে আগে থেকে চলে আসা অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে। কিছু সমস্যা এখনো আছে। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি বহু বছর ধরে ঝুলে আছে। এটা বাংলাদেশের জন্য একটি অস্বস্তির কারণ। তিস্তার পানি না পাওয়ায় বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকার চাষাবাদে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে চীনের সহযোগিতায় তিস্তা নদী সমন্বিত ব্যবস্থাপনা প্রকল্প নামে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের করা একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনের আগ্রহ আছে। সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন শেষে জানিয়ছিলেন, চীন ৮ হাজার ২শ কোটি টাকা ঋণ দিতেও প্রস্তুত।

এ প্রকল্প নিয়ে কারও কারও মধ্যে আগ্রহ তৈরি হলেও ৭ নভেম্বর ভোরের কাগজে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ভূরাজনৈতিক চাপের কারণে সমন্বিত তিস্তা প্রকল্প থেকে সরে আসতে হচ্ছে সরকারকে। চীনের সাহায্য নিয়ে তিস্তা প্রকল্পে ভারতের আপত্তি আছে বলেই বিষয়টি ঝুলে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্তত আগামী নির্বাচনের আগে ভারতের জন্য ‘স্পর্শকাতর’ কোনো বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ সরকার হয়তো মনোমালিন্য হওয়ার মতো কিছু করতে চায় না।

তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পটি চীন শ্রমিকনির্ভর প্রকল্প হিসেবে সাজিয়েছে। এই কাজের জন্য শ্রমিক, প্রকৌশলীসহ আড়াই তিন হাজার চীনা নাগরিক নিয়োজিত হবেন। যেখানে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে তার থেকে মাত্র ১১ কিলোমিটার দূরে ভারত সীমান্ত। এই ভূখণ্ডের আকৃতি মুরগির ঘাড়ের মতো হওয়ায় একে বলা হয় ‘চিকেন’স নেক’। এর পূর্ব দিকে নেপাল, পশ্চিমে বাংলাদেশ। মাঝখানে খুব সংকীর্ণ একটি অংশ ভারতের নিয়ন্ত্রণে। এই এলাকাটি ভারতের নিরাপত্তার প্রশ্নে খুবই স্পর্শকাতর।

এছাড়া আরও একটি বিষয় আলোচনায় আছে। সেটা হলো চীনা ঋণ নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বেশ কয়েকটি দেশের যথেষ্ট অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা হয়েছে। বাংলাদেশও যেন কোনোভাবে চীনা ঋণের ফাঁদে না পড়ে সে ব্যাপারে অর্থনীতিবিদদের সতর্ক থাকার তাগিদ সরকারের প্রতি আছে। এক সময় উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশগুলোর সাহায্যের জন্য নির্ভরতা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবাধীন বিশ্বব্যাংক এবং এডিবি, এএফডিবি, সিডিবি ও আইডিবির মতো আঞ্চলিক ব্যাংকগুলোর ওপর। কিন্তু এখন অবস্থা বদলেছে।

এখন বরং চীনা ঋণ অনেক দেশের কাছে বেশি আগ্রহ তৈরি করেছে। যেহেতু চীন আইএমএফের মতো ঋণের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অর্থনীতি সংস্কারে কঠোর শর্ত দেয় না, সেহেতু দেশগুলো আরও বেশি ঋণ নিতে থাকে এবং একপর্যায়ে ঋণের সাগরে ডুবে যায়।

বেশির ভাগ দেশ প্রলুব্ধ হয়ে এমন সব প্রকল্পে এই ঋণের অর্থ বিনিয়োগ করছে, যেগুলোর ‘ইকোনমিক ফিজিবিলিটি’ নড়বড়ে হওয়ায় প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ার পর ওই সব প্রকল্পের আয় থেকে সুদাসলে চৈনিক ঋণ পরিশোধ করা যাচ্ছে না।

ফলে এসব দেশ একের পর এক চৈনিক ঋণের ফাঁদে আষ্টেপৃষ্ঠে আটকা পড়ে ওই প্রকল্পগুলোর দীর্ঘমেয়াদি কর্তৃত্ব চীনকে অর্পণ করতে বাধ্য হচ্ছে, অথবা চীনকে নিজেদের সার্বভৌমত্ববিরোধী নানা সুবিধা দিতে বাধ্য হচ্ছে। তাই উন্নয়ন-অর্থনীতিতে চীনা ‘ঋণের ফাঁদ’ কথাটি এখন বহুল প্রচলিত।

চীন এখন বিশ্বের একমাত্র একক বৃহৎ ঋণদাতা দেশ। প্রকাশ্য ঋণের অঙ্গীকার সত্ত্বেও চীনের অপ্রকাশিত বিপুল ঋণ রয়েছে বিভিন্ন দেশে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এইডড্যাটা বলছে, চীনা ঋণের একটি বড় অংশই প্রকাশ করা হয় না কিংবা পরিসংখ্যানে আসে না। কিছু বৈদেশিক ঋণ প্রায়ই চীনা সরকারি ব্যালান্সশিটে বরাবরই উহ্য থাকে। বিদেশী সরকারের সাথে চীনা সরকারের ঋণ দেওয়া-নেওয়ার পরিবর্তে চীন ঋণগুলো দেয় সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি, ব্যাংক, যৌথ অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে।

এইডড্যাটার তথ্যানুসারে, পৃথিবীতে ৪০টি নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশ রয়েছে যেগুলোকে তাদের জিডিপির ১০ শতাংশ ঋণ দেওয়া হয়েছে ‘হিডেন ডেট’ হিসেবে। জিবুতি, জাম্বিয়া, রিপাবলিক অব কঙ্গো, নাইজার, লাওস, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, মঙ্গোলিয়া, মন্টেনেগ্রো, কিরগিজিস্তানের মতো দেশগুলোকে তাদের জিডিপির ২৫ শতাংশের সমপরিমাণ ঋণ দিয়েছে চীন।

চীনের পাশের ছোট কিন্তু সম্পদশালী দেশ লাওস চীনের ঋণ নিয়ে এখন চরম বিপাকে আছে। লাওসের ‘ন্যাশনাল ইলেকট্রিক পাওয়ার গ্রিড’ কোম্পানি ঋণ শোধ করতে না পেরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ‘চায়না সাদার্ন পাওয়ার গ্রিড’ কোম্পানির কাছে ৬০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছে। চীনা ঋণ চুক্তি সংশোধন করতে চায় উগান্ডা সরকারও।

উগান্ডার একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটিতে উগান্ডা সরকারের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে চীনা ঋণকে ‘পুনর্বিন্যাস’ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মাদাগাস্কারে চীনারা বিনিয়োগ করেছে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে। সেখানেও একই অবস্থা। ঋণ শোধ না করতে পারার একটি প্রবণতা কাজ করছে। ইতোমধ্যে মাদাগাস্কারের নতুন সরকার চীনাদের সাথে কয়েকটি চুক্তি যেমন- মাছ ধরার যে চুক্তি, তা বাতিল করেছে।

ঋণ শোধ করতে না পারায় চীনা সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা সমুদ্রবন্দরের দায়িত্বভার নিয়ে নিয়েছে। হাম্বানটোটায় চীনা বিনিয়োগে বিশাল বন্দর প্রকল্প শুরু হয়েছিল। কিন্তু চীনা ঠিকাদাররা ঋণ নিয়ে প্রকল্পটিকে বিতর্কের মধ্যে ফেলে দেন এবং শ্রীলঙ্কা পড়ে ঋণের ফাঁদে। শেষতক ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে শ্রীলঙ্কা হাম্বানটোটা বন্দরের ৭০ শতাংশ ৯৯ বছরের জন্য চীনাদের হাতে তুলে দিয়েছে বন্ধক হিসেবে।

দেনার কারণে তাজিকিস্তান পামির পর্বতমালার ১ হাজার ১১৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা চীনের কাছে সমর্পণ করেছে এবং চীনা কোম্পানিগুলোকে তার ভূখণ্ডে সোনা, রৌপ্য এবং অন্যান্য খনিজ আকরিকের খনির অধিকার দিয়েছে। একইভাবে পাকিস্তান চার দশক ধরে তার গোয়াদর বন্দর চালানোর জন্য চীনকে একচেটিয়া অধিকার দিয়েছে।

সেই সময়ে, চীন বন্দরের রাজস্বের ৯১ শতাংশ নিজের পকেটে পুরেছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে চীনের ঋণচুক্তির বিশদ বিবরণ এখনো পুরোপুরি প্রকাশ পায়নি। কিন্তু এটা ইতিমধ্যে স্পষ্ট যে চীনের এ ঋণদান সাম্রাজ্যবাদের সুদূরপ্রসারী ঝুঁকি বহন করে। এটি সবার জন্য বিপদের বিষয়। জিবুতি নামক আফ্রিকার ছোট দেশ; তার বন্দরও চীনাদের নিয়ন্ত্রণে। জিবুতির এই বন্দরে আবার যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিও রয়েছে।

এ ব্যাপারে মার্কিন অসন্তোষ ধূমায়িত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের (৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮) মন্তব্যটা এমন ছিল- বেইজিং অস্বচ্ছ চুক্তি, শিকারিদের মতো ঋণ অনুশীলন এবং দুর্নীতির সুযোগসমেত চুক্তি করে ঋণগ্রহীতা দেশগুলোর ঋণের ওপর নির্ভরতাকে উৎসাহিত করে। চীন ঋণভারে জর্জরিত করে ঋণগ্রহীতাদের সার্বভৌমত্বকে বিপদাপন্ন করে তাদের দীর্ঘমেয়াদি টেকসই প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে।

আফ্রিকার অবকাঠামোগত উন্নয়নে চীনা ঋণ কাজ করছে এটা ঠিক কিন্তু চীন যেভাবে সেখানে ঋণ বিতরণ করছে যে, সে দেশগুলো শেষ পর্যন্ত ঋণফাঁদে পড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে। অনেকেই চীনের এই প্রক্রিয়াটিকে, ‘ঋণের ফাঁদ কূটনীতি’ বলছেন। এর মাধ্যমে খুব সস্তায় অবকাঠামো নির্মাণের লোভনীয় প্রস্তাব থাকে কিন্তু শেষ পর্যন্ত গ্রহীতা দেশগুলো সুদসহ মূল ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

নয়াদিল্লিভিত্তিক সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ বিষয়ের অধ্যাপক ব্রহ্ম চেলানি এক সাম্প্রতিক লেখায় উল্লেখ করেছেন: চীন গত এক দশকে বিশ্বের বৃহত্তম একক ঋণদাতা দেশ হয়ে উঠেছে। এ সময়ের মধ্যে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর ঋণ তিনগুণ বেড়ে ২০২০ সালের শেষ নাগাদ ১৭ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। দেশটির প্রদেয় বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ এখন বৈশ্বিক জিডিপির ৬ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে, যা চীনকে বৈশ্বিক ঋণদাতা হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিদ্বন্দ্বীর ভূমিকায় এনে ফেলেছে।

এছাড়া চীন তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) অধীনে বিভিন্ন দেশকে অবকাঠামো গড়তে ৮৩ হাজার ৮০০ ডলার ঋণ দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশটি অবকাঠামো প্রকল্পে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থায়নকারী হিসেবে বিশ্বব্যাংককে ছাড়িয়ে গেছে ।

অনেকে মনে করতে পারে, চীনের ঋণপ্রবাহের এ নিম্নমুখী প্রবণতা ঔপনিবেশিক মডেলের চীনা ঋণের ফাঁদ থেকে দরিদ্র দেশগুলোকে মুক্তি দেবে। কিন্তু বিষয়টি মোটেও তা নয়। যেসব দেশ আগে থেকেই চীনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে সংকটে ছিল এবং এখন মহামারির কারণে নতুন অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে, তাদের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে (বেল আউট) চীন নতুন করে ঋণ দেবে। এর বেশির ভাগই পাবে বিআরআই অংশীদার দেশগুলো, যেগুলো কেনিয়ার মতো ইতিমধ্যে চীনের ঋণের ভারে নুয়ে পড়েছে।

এ বেল আউট ঋণের পরিমাণ বিশাল। চীনের কাছ থেকে বেল আউট হিসেবে ঋণ নেওয়া শীর্ষ তিন দেশ হলো আর্জেন্টিনা, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা। ২০১৭ সাল থেকে এ তিন দেশ বেল আউট হিসেবে চীনের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে ৩ হাজার ২৮০ কোটি ডলার। পাকিস্তান এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ঋণগ্রহীতা। ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত তারা জরুরি ঋণ হিসেবে চীনের কাছ থেকে নিয়েছে ২১৯০ কোটি ডলার।

চীনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে কোনো দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করেছে, তেমন উদাহরণ না থাকলেও বিপদগ্রস্ত হওয়ার একাধিক দৃষ্টান্ত আছে। তাই ঢালাওভাবে চীনের কাছ থেকে ঋণ সহযোগিতা নেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে বলে উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট। সূত্র : জাগোনিউজ

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.