রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:১৮ am
আব্দুস সবুর, তানোর :
রাজশাহীর তানোরে ব্র্যাকের আলুর বীজ নিয়ে মহা প্রতারনা শুরু করেছেন ডিলাররা বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি বাড়তি দামে ও খাওয়ার আলু বীজ বলে চালিয়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আশপাশের জেলা উপজেলা থেকে তানোরে আলু চাষ হয় প্রচুর। কিন্তু রহস্যজনক কারনে এউপজেলায় নামমাত্র একজন ব্র্যাক বীজের ডিলার থাকলেও পার্শ্ববর্তী উপজেলা মোহনপুরে চারটি ডিলার রয়েছে। এরাই বেপরোয়া সিন্ডিকেট করছেন বলেও একাধিক চাষীরা নিশ্চিত করেন।
শুধু ব্র্যাকের বীজ না বিভিন্ন কোম্পানীর মোড়কে চলছে মহা প্রতারনা। প্রতারিত হচ্ছেন প্রান্তিক পা ফাটা কৃষকরা। যারা ব্যবসায়ীদের কথার উপর নির্ভর করেন। তারাই প্রতারিত বেশি হচ্ছেন। আসল নকল বোঝার উপাও নেই তাদের। ফলে যত্রতত্র বীজ বিক্রি না করে নির্দিষ্ট পয়েন্ট বা দোকানে বিক্রির আগে মান নিয়ন্ত্রনে সংশ্লিষ্ট কৃষি দপ্তরকে জোরালো ভুমিকা রাখার আহবান জানান কৃষকরা। নচেৎ প্রতারিত হতেই থাকবে।
জানা গেছে, চলতি মৌসুমে আলু রোপনের জন্য উপজেলায় জমি চাষ ও রোপন শুরু হয়েছে। আলু রোপনকে সামনে রেখে ব্র্যাকের বীজ নিয়ে ডিলাররা নানা মুখী খেলা শুরু করেছেন। বিশেষ করে ব্র্যাকের বীজের প্রচুর চাহিদা। কিন্তু সেই বীজ পেতে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। তাও চাহিদামত পাচ্ছেন না। পেলেও গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা তাও আসল না নকল বোঝা বড় দায়।
অথচ উপজেলায় ব্র্যাক বীজের একজন ডিলার রয়েছেন। তিনি মাত্র ২০০ মে:টন বীজ বরাদ্দ দেয় ব্র্যাক। শাহিন নামের ডিলার তালন্দ বাজারে বীজের ব্যবসা করে আসছেন। তাকে মাত্র ২০০ মে:টন বীজ দেওয়া হয়। কিন্ত এউপজেলার যা চাষ হয় তার অর্ধেকও হয় না মোহনপুর উপজেলায়। কিন্ত মোহনপুরেই ব্র্যাক বীজের ৪ জন ডিলার রয়েছে। তারা হলেন মোর্তুজা সোনার। তিনি কার্টুন বীজ প্রায় ১০০০ টিসহ বস্তার বীজ ১২০০ মে:টন বরাদ্দ পেয়েছেন। মতিউর কার্টুন ১০০ টি বস্তার বীজ ২০০ মে: টন। কেশরহাট বাজারের আকতার ৩০০+ মে:টন, কারী রাসেদুল ৪০০ মে:টন। সব মিলে মোহনপুর উপজেলায় প্রায় ২১০০ মে:টন বীজ বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব ডিলারদের বীজ তানোরেই বেশি বিক্রি হয়। এজন্য তারা বাড়তি দাম ও খাওয়ার আলুও ব্র্যাকের বস্তায় ভরে দেদারসে বিক্রি করছেন।
চাষী আনোয়ার, বেলাল, সুমনসহ অনেকে জানান, তানোরে আলু চাষ হয় প্রচুর। কিন্তু ব্র্যাকের বীজ ডিলার তানোরে মাত্র একজন। তিনি বরাদ্দ পেয়েছেন মাত্র ২০০ মে:টন। যা দিয়ে কিছুই হবে না। এজন্য বাধ্য হয়ে মোহনপুর থেকে বীজ আনা হয়। তারা মহা কারসাজির মাধ্যমে বাড়তি দাম ও নিম্মমানের বীজ দিয়ে থাকেন। কিছু করনীয় থাকে না। কারন তারা অন্য উপজেলার। বিশেষ করে ধুরইল বাজারের মুর্তুজা ব্যাপক অনিয়ম করেন। তিনি যাবতীয় বীজ ডিলার। তার নিকট থেকে তানোর পৌর সদর গোল্লাপাড়া হল মোড়ে হাদি ট্রেডার্সের মালিক মাওলানা আশরাফুল ইসলাম এনে বেপরোয়া বানিজ্য করছেন। শুধু বীজ না তিনি পটাশ সারও বিক্রি করেছেন ১৪০০/১৫০০ টাকা করে। বিভিন্ন কোম্পানীর মোড়কে বীজ যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। কোন নিয়ম নাই
আশরাফুল ইসলাম জানান, আমার নামে প্রচুর অভিযোগ আমি নাকি বাড়তি দামে বীজ বিক্রি করছি। আমি বীজ তৈরী করিনা, ডিলারদের কাছ থেকে কিনে সামান্য লাভে বিক্রি করেছি, আর পটাশ সার বিক্রি করিনি। আপনি চাপড়া গ্রামে বেশকিছু কৃষকের কাছে দ্বিগুণ দামে পটাশ সার বিক্রি করেছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, সামান্য কিছু বিক্রি করা হয়েছে।
ব্র্যাকের বীজ এ গ্রেড ৪৬ টাকা কেজি, বি গ্রেড ৪৩ টাকা কেজি আর কার্টুনে উন্নত মানের ৯০ টাকা কেজি। এগ্রেড বি গ্রেড বীজ থাকলেও প্রান্তিক চাষীরা এসব অত বোঝে না। এ গ্রেড ৪৬ টাকা কেজি হলে ৫০ কেজির বীজের বস্তার দাম ২৩০০ টাকা। যা বাজারে ২৫০০ / ২৬০০ টাকায় ও বি গ্রেড ৪৩ টাকা কেজি হলে ৫০ কেজির বস্তার দাম ২১৫০ টাকা। বিক্রি হচ্ছে ২৩০০/২৪০০/২৫০০ টাকা করে। আর কার্টুন বীজ ৯০ টাকা কেজি হলে ৫০ কেজির দাম ৪৫০০ টাকা। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ৫০০০ /৫২০০/৫৫০০ টাকা করে।
তানোরের ব্র্যাক বীজের ডিলার শাহিন জানান, আমি ২০০ মে:টন বরাদ্দ পেয়েছিলাম,যা শেষ হয়ে গেছে। সুত্রে জানা যায়, উপজেলার আনাচে কানাচে বালাইনাশক ব্যবসায়ীদের প্রায় দোকানে ব্র্যাক বীজের বস্তা দেখা যায়। যে যে ভাবে পারছেন সিন্ডিকেট করে বিক্রি করছেন। যত দোকানে বীজ বিক্রি হচ্ছে সবই মোহনপুরের ডিলারদের। ব্র্যাকসহ বিভিন্ন কোম্পানি বীজ বিক্রি ক্ষেত্রে কোন নিয়ম কানুন মানেন না। তাদের নিয়মেই বীজ বিক্রি হয়।
সরকারী ভিত্তি বীজ এ গ্রেড ৪২ টাকা ৫০ পয়সা বি গ্রেড ৪১ টাকা ৫০ পয়সা বিক্রির মুল্য বেধে দিলেও নানা অজুহাতে বাড়তি দাম। অথচ এজাতীয় ব্র্যাক বীজ ডিলারের ক্রয় মূল্য এ গ্রেড ৪৯টাকা ৪০ পয়সা বি গ্রেড ৪৭ টাকা ৫০ পয়সা, বিক্রয় মূল্য ৫২ টাকা ও ৫৩ টাকা। প্রত্যায়িত বা মান ঘোষিত এ গ্রেড ৩২ টাকা ৫০ পয়সা বি গ্রেড ৩১টাকা ৫০ পয়সা। ডিলাররা ক্রয় করছেন এগ্রেড ২৮ টাকা ৫০ পয়সা বি গ্রেড ২৭ টাকা ৫০ পয়সা হলেও পাইকাড়ি ভাবে সকল বীজ ৪৩ টাকা থেকে ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ জানান, বীজ নিয়ে এরকম কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে কৃষকের সাথে প্রতারনা করলে কোন ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি আরো জানান চলতি মৌসুমে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ১৩৫৫০ হেক্টর জমি ও বীজের প্রয়োজন ২০ হাজার ২৫০ মে:টন। রা/অ