মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:২২ am
ডেস্ক রির্পোট : চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের উত্তর টিউবের পূর্তকাজও শিগগিরই শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু টানেলের দক্ষিণ টিউবের পূর্তকাজের সমাপনী উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ আশা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন প্রযুক্তি আমরা ব্যবহার করেছি। বাংলাদেশ যে পারে, পদ্মা সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে আমরা প্রমাণ করেছি। নির্মাণকাজে সহযোগিতা করেছিল চীন। তাদের আমরা ধন্যবাদ জানাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে একটা টানেল হয়েছে দেখে এখনই উদ্বোধন করছি না। আমার ইচ্ছা ছিল দেখার যে, কেমন হলো। দক্ষিণ এশিয়ায় এটিই প্রথম। মনটা পড়ে আছে চট্টগ্রামে। দ্বিতীয় টিউবের কাজও শেষ; সামান্য কাজ বাকি। বিরাট কাজ বলে মনে করি। টানেল নির্মাণে যারা জড়িত, সবাইকে ধন্যবাদ।’
১৯৭৫ সালের পর ২১ বছর এবং ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত এই ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা কেন বাংলাদেশের উন্নতি করতে পারেনি-এমন প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করতে পারেনি। তারা মানুষের ভাগ্য বদলাতে চায়নি। নিজেরা ভোগ বিলাসে ব্যস্ত ছিল।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ তিনবার ভোট দিয়ে আমাদের ক্ষমতায় এনেছিল বলে আমরা সার্বিক উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছি।
টানেলটি নির্মাণে সহযোগিতা করায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংকেও ধন্যবাদ জানান সরকারপ্রধান।
কর্ণফুলী নদীর দুইপাড়ে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তুলতে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণ’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সরকার।
নদীর দক্ষিণে আনোয়ারায় আছে কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইপিজেড, সিইউএফএল, পারকি সমুদ্র সৈকত। কর্ণফুলী পেরিয়ে আনোয়ারা দিয়েই কক্সবাজার, বাঁশখালী ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরে যেতে হয়।
টানেলের উত্তর প্রান্ত বা শহরের দিক থেকে পাঁচটি সড়ক দিয়ে টানেলে যাওয়া যাবে- আউটার রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কাঠগড় সড়ক, এয়ারপোর্ট সড়ক এবং পতেঙ্গা বিচ সড়ক দিয়ে টানেল সড়কে গিয়ে প্রবেশপথ।
টানেলটি নির্মাণের ফলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজারের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার ও সময় প্রায় এক ঘণ্টা কমে আসবে। দুটি টিউব ও চার লেনের সড়কে নদীর তলদেশ দিয়ে পাঁচ মিনিটে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে যাওয়া যাবে আনোয়ারায়।
পদ্মা সেতুর পর সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর একটি এই বঙ্গবন্ধু টানেল। ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার এ টানেলের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে যানবাহনের জন্য খুলে দেয়া হতে পারে।
সেতু বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেই প্রথম নদীর তলদেশে চলবে যানবাহন।
রাজধানী থেকে কক্সবাজারগামী গাড়িগুলো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ফৌজদারহাট দিয়ে বন্দর টোল রোডের সঙ্গে নির্মিত আউটার রিং রোড-পতেঙ্গা হয়ে কর্ণফুলী টানেল ব্যবহার করলে চট্টগ্রামের দিকে পথ কমবে প্রায় ১৫ কিলোমিটার। এতে করে চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ না করেই সময় বাঁচাতে পারবেন চালকরা।
কর্ণফুলী টানেল দিয়ে আনোয়ারা উপজেলার সিইউএফএল ঘাট-চাতরি চৌমুহনী-বাঁশখালী-পেকুয়ার মগনামা হয়ে সরাসরি কক্সবাজার সদরে যুক্ত হলে সৈকত নগরীর দূরত্ব কমবে প্রায় ৩০ কিলোমিটারের মতো।
এ দুই টিউব তিনটি সংযোগপথের (ক্রস প্যাসেজ) মাধ্যমে যুক্ত থাকবে। বিপদকালে অন্য টিউবে যাওয়ার জন্য ক্রস প্যাসেজগুলো ব্যবহার হবে।
২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং টানেল প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজ উদ্বোধন করেন।
২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় টিউবের বোরিং কাজ উদ্বোধন করেন। সূত্র : দৈনিক বাংলা