মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৩:৩৫ pm
আব্দুস সবুর, তানোর :
রাজশাহীর তানোরে মাদ্রাসা বন্ধ রেখে নির্দলীয় শিক্ষক-কর্মচারীর বার্ষিক সম্মেলন নিয়ে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার সরনজাই দাখিল মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হয় এ সম্মেলন। সকাল থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চলে সভা ও ভুড়িভোজ। শিক্ষক সমিতির উপদেষ্টা স্থানীয় সাংসদকে অবহিত না করায় সহসভাপতি ছাড়াও বেশ কিছু মাদ্রাসা সুপাররা সভা বয়কট করেন। আবার নির্দলীয় বলা হলেও তানোর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সরনজাই ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক খানকে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দিতে দেখা যায়।
মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের এমন কান্ডে চরম বিব্রত শিক্ষক মহল। ফলে সম্মেলনের আয়োজক ও সমিতির দায়িত্বশীদেরর চরম শাস্তির দাবি তুলেছেন। কারণ সমিতির উপদেষ্টা স্থানীয় সাংসদ বা তার কোন প্রতিনিধিই বিষয়টি অবগত নন। অথচ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিকুর রহমান বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন। কিন্তু ব্যানারে প্রধান অতিথি তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পঙ্কজ চন্দ্র দেবনাথের নাম থাকলেও উপস্থিত ছিলেন না তিনি। শুধু তাই নয়, রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী বা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে অবহিত না করায় সভা বয়কট করেন জিওল মাদ্রাসার সুপার আসলাম উদ্দিন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, পুরো উপজেলায় ২৮টি মাদ্রাসা রয়েছে। এসব মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারী সমিতি গঠন করা হয়। এর পৃষ্ঠ পোশক বা উপদেষ্টা স্থানীয় সাংসদ ফারুক চৌধুরী। অথচ তাকে বা তার কোন প্রতিনিধিকে সভায় ডাকা হয়নি। যার কারণে একাধিক মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ সভা বয়কট করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন মাদ্রাসা প্রধানরা।
বেশকিছু শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা সভাপতি ও সম্পাদককে একাধিকবার বলেছিলাম, এমপি মহোদয় অথবা তার কোন প্রতিনিধিকে সভায় প্রধান অতিথি করা হোক। কিন্তু আমাদের কোন কথায় শোনেন নি সভাপতি। তাদের অবস্থা বা কথা শুনলে মনে হবে এমপি নেই। কারো স্বার্থ হাসিলের জন্য সভাপতি ও সম্পাদক মরিয়া। যদি নির্দলীয় সভা হয় তাহলে বিএনপি নেতা মোজাম্মেল চেয়ারম্যান কেন? এর সব দায় দায়িত্ব সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ও সম্পাদক আব্দুল হামিদের। আমাদের মনে হয়, সভাপতি তার কোন উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করছেন।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার দুপুরের আগে মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, সামনে শতাধিক মটরসাইকেল রাখা হয়েছে। চলছে রান্নাবাড়ার কাজ। সেইসাথে যোহর নামাজের বিরতি। এরপর আসেন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার। বিরতির পর শুরু হয় আলচনা সভা। সরনজাই দাখিল মাদ্রাসার সুপার ও সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও গোকুল দাখিল মাদ্রাসার সুপার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন, উপজেলার সরনজাই ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপির সাবেক সভাপতি মোজাম্মেল হক, চিনাশো সিনিয়র মাদ্রাসার প্রিন্সিপ্যাল হারুনুর রশিদ ও শিক্ষা অফিসার সিদ্দিকুর রহমান। এসময় মোজাম্মেল চেয়ারম্যান মাদ্রাসা শিক্ষাকে প্রধান্য দিয়ে বলেন, মাদ্রাসায় পড়লেই বর্তমান সরকার জঙ্গির তকমা লাগিয়ে দিচ্ছে।
সভা শেষে চিনাশো সিনিয়র মাদ্রাসার প্রিন্সিপ্যাল হারুনুর রশিদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, এই সমিতির উপদেষ্টা এমপি মহোদয়। তিনি বা তার কোন প্রতিনিধি নেই কেন? তিনি জানান, সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক নির্দলীয় সভা করবেন, এজন্য কাউকে জানানো হয়নি। তাহলে বিএনপি নেতা চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বক্তব্য দিলেন এটা কেন? এব্যাপারে তিনি বিব্রতকর মন্তব্য করে এড়িয়ে গেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার সরনজাই মাদ্রাসার এক শিক্ষক জানান, এমপি মহোদয় স্কুল শিক্ষক সমিতি করে দিয়েছিল সেটা ভেঙ্গে গেছে। আমরা তার কথা মত সমিতি করলে আমাদের টাও ভেঙ্গে যেত। তার এমন কথার প্রেক্ষিতে স্কুল শিক্ষক সমিতির সভাপতি জিল্লুর রহমানকে বিষয়টি অবহিত করা হলে তিনি এমন কথার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, অন্তত ৮টি মাদ্রাসার সুপার ফোন করে বলেছে এমপি মহোদয়কে অবহিত না করায় সভা বয়কট করা হয়েছে। এজন্য তাদের সাদুবাদ জানানো হয়।
মাদ্রাসা সমিতির সভাপতি সরনজাই দাখিল মাদ্রাসার সুপার সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমরা কাকে প্রধান অতিথি করবো সেটা আমাদের বিষয় বলে তিনিও এড়িয়ে গেছেন। নির্দলীয় সম্মেলন তাহলে মোজাম্মেল চেয়ারম্যান কেন প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, তার জায়গাতে সভা করা হচ্ছে। তাকে না ডেকে উপায় নেই বলে দম্ভোক্তি করেন এই চেয়ারম্যান। তবে, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিকুর রহমান এসব বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। রা/অ