শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০১:১২ pm
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আর্জেন্টিনাকে স্তব্ধ করে মাটিতে নামিয়ে আনলো সৌদি আরব। আর্জেন্টিনা ১ – ২ সৌদি আরব। আর্জেন্টিনারা সমর্থকেরা চাইলে চোখ কচলে আরেকবার দেখতে পারেন। তবে তাতে স্কোরলাইন বদলাবে না। লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে ‘আইকনিক’ ঘটনাই ঘটে গেল। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই পুঁচকে সৌদি আরবের কাছে হেরে গেল ‘হট ফেবারিট’ আর্জেন্টিনা। যার শেষ বিশ্বকাপ নিয়ে এত উন্মাদনা, সে লিওনেল মেসি দশম মিনিটে পেনাল্টি থেকে বল জড়ানো বাদে পুরো ম্যাচে নিজের ছায়া হয়ে রইলেন। তাতে ৩৬ ম্যাচেই থেমে গেল আর্জেন্টিনার অপরাজেয়-যাত্রা। আর চরম হতাশার হারের পর শুরুতেই বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়া নিয়ে শঙ্কায় পড়ে গেল আলবিসেলেস্তেরা।
অথচ ম্যাচের শুরুর গল্পটা ছিল অন্যরকম। শুরু থেকেই সৌদি আরবকে বেশ ভালোভাবে চেপে ধরেছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু সেসব প্রচেষ্টা গোলে অনূদিত হলো কই! উল্টো একের পর এক অফসাইডের খাঁড়ায় পড়ে ব্যর্থ হলো মেসি-লওতারোদের সকল প্রচেষ্টা। তবুও প্রথমার্ধ শেষে আর্জেন্টিনার চালকের আসনেই ছিল, কারণ মেসির সেই পেনাল্টিতে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে গিয়েছিল তারা।
ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই সৌদির বিপক্ষে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু মেসির বাঁ পায়ের বাঁকানো শটটা আটকে দেন সৌদি গোলকিপার মোহাম্মদ আল ওয়াইস। ছয় মিনিটে কর্নার ঠেকাতে গিয়ে সৌদির রাইটব্যাক সৌদ আবদুলহামিদ বক্সের মধ্যে ফেলে দেন লিয়ান্দ্রো পারেদেসকে। ভিডিও রেফারির সাহায্যে পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। পেনাল্টিটা একটু বেশিই ‘সফট’ হয়ে গেল কি না, সৌদি আরব অঘটনটা না ঘটিয়ে দিলে সে নিয়ে আলোচনা চলত নিশ্চিত। সে যা-ই হোক, পেনাল্টি থেকে মেসিকে গোলহীন রাখতে পারেননি আল ওয়াইস। প্রথম আর্জেন্টাইন এবং ইতিহাসের পঞ্চম ফুটবলার হিসেবে চার বিশ্বকাপে গোল পেলেন মেসি।
এরপরই শুরু অফসাইড-বৃষ্টি! ২২ মিনিটে পাপু গোমেজের পাস থেকে বল জালে জড়িয়ে অফসাইডের খড়্গে পড়েন মেসি। ২৭ মিনিটে আবারও পাপু গোমেজের দুর্দান্ত পাস থেকে লওতারো মার্তিনেস পেলেন গোল, অফসাইডের কারণে সেটাও বাতিল। ৩৫ মিনিটেও একই গল্প, এবার লওতারো আগেই বুঝেছিলেন তিনি অফসাইড ছিলেন!
দ্বিতীয়ার্ধে কীভাবে অফসাইডে না থাকা যায়, সে পরিকল্পনা এঁটে আর্জেন্টিনা মাঠে নামবে, এমনটাই হয়তো আশা ছিল আর্জেন্টিনা সমর্থকদের। দ্বিতীয়ার্ধে আর অফসাইড নিয়ে তটস্থ থাকতে হয়ওনি মেসি-দি মারিয়াদের। তটস্থ তো তারা তখন অঘটনের শিকার হওয়ার শঙ্কায়!
প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার গোলে একটি শটও নিতে না পারা সৌদি আরবের রুদ্রমূর্তি ধারণ করল দ্বিতীয়ার্ধে! ৪৮ মিনিটে ফিরাস আল-বুরাইকানের পাস ধরে দলকে সমতায় নিয়ে আসেন সালেহ আল শেহরি। আর্জেন্টিনার জন্য অবিশ্বাস্য ব্যাপার, যাকে আর্জেন্টিনা রক্ষণে বড় ভরসা মানে, সেই ক্রিস্তিয়ান রোমেরোকেই ঘোল খাইয়ে বাঁ পায়ের শটে বল জালে জড়িয়েছেন আল শেহরি। গোল খেয়ে আর্জেন্টিনা হতভম্ব, সৌদি আরবকে তখন যেন চেনাই দায়! তাদের ভয়ডরহীন উদ্দাম ফুটবলে আর্জেন্টিনা তখন দিশেহারা।
প্রথম গোলের মিনিট পাঁচেক পর সৌদি আরবের ‘নাম্বার টেন’ সালেম আলদাউসারি যে গোলটি করলেন, তেমন জাদুকরি গোল লিওনেল মেসির পায়ে দেখে অভ্যস্ত ফুটবলপ্রেমীরা। বক্সের বাঁ প্রান্তে বলের দখল পেয়ে দারুণ এক টার্নে দুই আর্জেন্টাইন ফুটবলারকে ঘোল খাওয়ালেন দাউসারি, এরপর ডান পায়ে নেয়া তার অবিশ্বাস্য বাঁকানো শট জালে! হাত ছুঁইয়েও বল রুখতে পারেননি আর্জেন্টিনার গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেস। ১৯৭৪ সালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই দুই গোল হজম করল আর্জেন্টিনা।
দ্বিতীয়ার্ধের বাকি সময়ে মেসি, দি মারিয়া, বদলি হুলিয়ান আলভারেসদের সব প্রচেষ্টা রুখে দিয়েছে সৌদি রক্ষণভাগ। এগিয়ে যাওয়ায় সৌদিরাও সবাই মিলে রক্ষণে ঝাঁপিয়েছে, তাতে আর্জেন্টিনার জন্য গোলের রাস্তা বের করাই আরও কঠিন হয়ে গেছে। গোলকিপার মোহাম্মদ ওয়াইস তো রীতিমতো দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে গেছেন। আর্জেন্টিনার আক্রমণের সব ঢেউ তাতে আছড়ে পড়ল, তবে অতিক্রম করতে পারল না। অঘটনের শিকার হয়েই বিশ্বকাপ শুরু আর্জেন্টিনার। সঙ্গী হলো শঙ্কা, কাগজে-কলমে গ্রুপের সবচেয়ে সহজ দলের কাছেই হেরে যাওয়া আর্জেন্টিনার পরের দুই ম্যাচ যে মেক্সিকো আর পোল্যান্ডের সঙ্গে। গ্রুপ পর্বেই না শেষ হয়ে যায় মেসির শেষ বিশ্বকাপ! সূত্র : দৈনিক বাংলা