রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:৫৫ am
আব্দুস সবুর, তানোর :
রাজশাহীর তানোরে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির একশ্রেণীর কর্মকর্তা ও কথিত লাইনম্যানের (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ান) বিরুদ্ধে বেপরোয়া ঘুষবাণিজর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা জানান, এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকার বিনিময়ে অবৈধ মটরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছে। এতে পুরো উপজেলাজুড়ে অবৈধ সংযোগের ছড়াছড়ি।
এদিকে, এসব অবৈধ মটরে সেচ বাণিজ্য করায় ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার সংকট দেখা দিয়েছে। এতে বিএমডিএ’র গভীর নলকুপ সেচ প্রকল্প হুমকির মুখে পড়েছে। আবার মটর মালিকগণ কৃষকদের জিম্মি করে সেচ চার্জ আদায়ের চাঁদাবাজি করছেন।
জানা গেছে, বিগত ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর গভীর নলকুপ অপারেটর বিজেন কর্মকার বাদি হয়ে অবৈধ মটরের সংযোগ বিচ্ছিন্নের জন্য বিএমডিএ তানোর জোনের সহকারী প্রকৌশলীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে বলা হয়, কৃষি মন্ত্রণালয় ও সেচ নীতিমালা লঙ্ঘন করে জেল নম্বর ৮৫ ও ৮৮ নম্বর দাগে অবস্থিত গভীর নলকুপ স্কীমের ভিতরে (কমান্ড এরিয়ায়) ৫ হর্স পাওয়ারের অবৈধ মটর স্থাপন ও বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে সেচ বাণিজ্যে করছে তানোর শিবতলা গ্রামের বাসিন্দা লুৎফর রহমানের পুত্র গোলাম রাব্বানী ওরফে লেলিন। তিনি পল্লী বিদ্যুতের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লাইনম্যান ও দালাল হিসেবে পরিচিত।
তবে, অনিয়মের অভিযোগে তার মটরের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও রাতারাতি ফের সংযোগ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও তালন্দ ইউপির কালনা গ্রামের আনোয়ার হোসেন কালনা মাঠে অবৈধ মটরে সেচ বাণিজ্য করছে। অন্যদিকে, দুবইল মাঠে জালাল উদ্দিন দুটি,শফিকুল ইসলাম দুটি, ডাম্ফু দুটি ও আশরাফুল ইসলাম একটি অবৈধ মটরে সেচ বাণিজ্য করছে। তালন্দ ইউনিয়নের (ইউপি) নারায়নপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত আবের গাইনয়ের পুত্র সাবের আলী গ্রামের বটপুকুর মাঠে সেচ নীতিমালা লঙ্ঘন করে বিএমডিএ’র গভীর নুলকুপের কমান্ড এরিয়ায় ৫ হর্স পাওয়ারের অবৈধ সেচ মটর স্থাপন করেছেন।
আবার পল্লী বিদ্যুতের কতিপয় কর্মকর্তা কথিত লাইনম্যানের (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ান) মাধ্যমে বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা নিয়ে অবৈধ মটরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে। তানোর পৌর এলাকার বেল পুকুরিয়াগ্রামের ন্যাশনাল ব্যাংক নওগাঁ শাখায় কর্মরত শফিকুল ইসলাম।তিনি আম বাগানের নামে বানিজ্যিক ভাবে ৫ হর্সের মটর স্থাপন করেন কালনা শুকানদিঘি সেও কৃষি জমিতে দাপটের সঙ্গে সেচ দিচ্ছেন।
অনিয়মের অভিযোগে তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও রাতারাতি ফের সংযোগ দেয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মটর মালিক বলেন, প্রতি মাসে পল্লী বিদ্যুতকে জরিমানার নামে রশিদ ছাড়াই দেড় হাজার টাকা করে দিতে হয়। এছাড়াও সংযোগ নিতে দিতে হয়েছে মটর প্রতি লাখ টাকা।
অন্যদিকে, অবৈধ অনেক মটরের বিদ্যুৎ সংযোগ একবার বিচ্ছিন্ন করা হলেও আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে পরের দিনেই গোপণে ফের সংযোগ দেয়া হয়েছে। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা না হলে যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বা খুন-জখমের মতো অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটতে পারে বলে কৃষকরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। আবার শফিকুল ও লেলিনের অবৈধ মটরের সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও পুনঃরায় সংযোগের ঘটনায় ডিজিএম-এজিএম, পরিদর্শক ও লাইনম্যান চতুরমুখী দন্দে জড়িয়ে পড়েছে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।
এনিয়ে তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পঙ্কজ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, মুরগী খামারের মটর থেকে ফসলী জমিতে সেচ দেয়া হয় এমন অভিযোগ তিনি পাননি। তিনি আরও বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।
এবিষয়ে বিএমডিএ তানোর জোনের সহকারী প্রকৌশলী মাহাফুজুর রহমান বলেন, গভীর নলকুপের কমান্ড এরিয়ায় সেচ মটর স্থাপনের কোনো সুযোগ নেই। বিদ্যুৎ সংযোগের তো প্রশ্নই উঠেনা। অবৈধ মটরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে পল্লী বিদ্যুৎকে বলা হয়েছে।
তবে, এব্যাপারে জানতে চাইলে তানোর পল্লীবিদ্যুৎ কর্মকর্তা (এজিএম) কামাল হোসেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এবিষয়ে ডিজিএম স্যার ভাল বলতে পারবেন। এক বার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আবার কেনো সংযোগ দিলেন, এই প্রশ্নের কোনো সদোত্তর না দিয়ে এড়িয়ে গেছেন।
এবিষয়ে পল্লীবিদ্যুৎ তানোরের ডিজিএম জহুরুল ইসলাম বলেন, শফিকুল ও লেলিনের মটরের বিষয়ে তারা কোনো লিখিত অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এব্যাপারে গোলাম রাব্বানী লেলিন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মুরগী খামার করে ব্যবসা হচ্ছে না। তাই অল্প কিছু জমিতে সেচ দিচ্ছি। তবে, মটর স্থাপনে অনুমতি নিয়েছেন কি না সেই প্রশ্নের কোনো সদোত্তর না দিয়ে কৌশলে এড়িয়ে গেছেন তিনি। রা/অ