বুধবা, ১১ িসেম্র ২০২৪, সময় : ০৫:৪৭ am

সংবাদ শিরোনাম ::
হাসিনার তৈরী আইন দিয়েই তার বিচার হবে : নগর জামায়াত সেক্রেটারি ইমাজ নগরীতে ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী সেই ‘ডন’ গ্রেপ্তার আড়ালে পাচার, নারী নিরাপত্তায় মনোযোগ দরকার : উদিসা ইসলাম সীমান্ত-সংলগ্ন মিয়ানমারের ২৭০ কিমি এলাকা দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি সিরিজের দ্বিতীয়টিতে টস হেরেছে বাংলাদেশ, একাদশে এক পরিবর্তন রাজশাহীতে সন্ত্রাসি কর্মকাণ্ড ও বিভিন্ন অপরাধে গ্রেপ্তার ১৩ এবারের বিজয় দিবসের কনসার্টে মূল চমক বেবী নাজনীন মোহনপুরে ভুল সংবাদ প্রচারের প্রতিবাদে প্যানেল চেয়ারম্যানের সংবাদ সম্মেলন ভারতীয় বেডশিট ছুড়ে ফেললেন রিজভী, আগুন দিলেন নেতাকর্মীরা মোহনপুরে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে লীজকৃত পুকুরে মাছ ধরার অভিযোগ নগরীতে ছাত্রলীগের নেতাকে পিটুনি দিয়ে পুলিশে দিল ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সিরাজগঞ্জ কারাগারে আ.লীগ নেতার মৃত্যু ধূসর ক্লিন সিটি রাজশাহী এখন ধূলই ক্ষতিকর বস্তুকণা উদ্বেগজনক নৌযানসহ ৭৯ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে ভারতীয় কোস্টগার্ড নাচোলে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে হাইব্রিড ধানবীজ বিতরণ উদ্বোধন রাবিতে পোষ্য কোটায় ভর্তি, প্রশাসনকে লাল কার্ড দেখালেন শিক্ষার্থীরা বৃদ্ধের সাথে যুবলীগ নেত্রীর বিয়ে, ফুলশয্যার আগেই টাকা নিয়ে উধাও তানোরে দুর্নীতি প্রতিরোধ দিবস উদযাপিত দুর্গাপুরে বেগম রোকেয়া দিবস পালিত নাচোলে আন্তর্জাতিক দূর্ণীতি বিরোধী দিবস উদযাপিত
শূন্য থেকে লাখপতি রাজশাহীর ঐশী

শূন্য থেকে লাখপতি রাজশাহীর ঐশী

নিজস্ব প্রতিবেদক :

ছোট থেকেই শখের বশে আঁকাআকি করা। হঠাৎ করে ইন্টারনেটে দেখলেন ক্রাফটস আর ড্রিমক্যাচার পণ্য তৈরি। গভীরে গিয়ে কাজগুলোর উপলব্ধি করার চেষ্টা। দিনে দিনে শেখার আপ্রাণ প্রচেষ্টা। বাসায় শুরু করলেন অনুশীলন এখন কাজ শিখে হয়ে গেছেন তরুণ এক উদ্যক্ত। এই কাজের প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা ছাড়াই শখের বশে ও নিজের ভালোলাগা থেকে রাজশাহীর এক তরুণীর উদ্যক্তার গল্প। সেই শখটা যখন স্বপ্ন হয়ে দাঁড়ায় সেটাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার গল্পটা শুধুই গল্প হয়ে থাকে না। নিজের ভালোলাগা এবং ভালোবাসাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য শখ, স্বপ্ন এবং সাহস নিয়ে গড়ে ওঠা তার। হাজারো প্রতিকূলতাকে সাথে নিয়ে পথ চলেছে ঐশী মাহাজেবীন। তিনি এখন একজন সফল নারী উদ্যোক্তা।

পেশায় তিনি একজন নারী উদোক্তা। পড়াশোনা শেষ করছেন রাজশাহীর বে-সরকারি বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগ নিয়ে। নগরীর শিরোইল কলোনী এলাকার মহানগর ডেপুটি কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলামের মেয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশনার সময় প্রথম অবস্থায় ২০১৮ সালে শখের বসে মাত্র ৫০০ টাকার পুজি দিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। কয়েক বছরে এখন কয়েক লক্ষ টাকার আয় করে নিজের ব্যবসা বড় করছেন। এখন ঐশীর আন্ডারে কাজ করছে আরো চার জন ছেলে ও মেয়ে। কয়েক মাস আগে ইন্টানেটে ক্রেতারা তার পন্য গুলো দেখে এখন ভালো সারা পেয়েছেন ঐশী। দেশ বিদেশে অনলাইনে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকা ও ভালো দামে বিক্রি করা হচ্ছে তার পণ্য গুলো। ‘ষোলকা’ নামে ফেসবুকে তার নিজস্ব একটি পেজও রয়েছে।

ঘরের সুন্দর্য বৃদ্ধিতে ড্রিমক্যাচার পণ্যর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। দেশে যে ড্রিমক্যাচার বিক্রি হয় ৫৫০ টাকায় সেখানে বিদেশে সে একটি ড্রিমক্যাচার বিক্রি করছে ১৮০০ টাকায়। কিন্তু অনলাইনে তিনি তার পণ্য গুলো বিদেশী ক্রেতাদের দিতে পারে না। ঢাকা ও চিটাগাংয়ের যারা ব্যবসায়ী রয়েছে তারাই কম দামে কিনে বেশি দামে বিদেশে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছে। এতে অন্য তরুণ ক্রেতাদের মত ঐশী সঠিক দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

ঐশীর বড় ভাই ইঞ্জিনিয়ার তানভির ইসলাম এখন তাকে সহযোগিতা করছেন। কাজের প্রসার বৃদ্ধি করতে বাসায় ভাইয়ের সহযোগিতায় অনলাইনে অফিসের যাবতীয় কার্যক্রম চলছে।

তার পণ্য গুলো দেখে কথা হয় তার সাথে জানা যায়, ড্রিমক্যাচার বানানোর জন্য ধাপে ধাপে কাজ করতে হয় তাকে। প্রথমে এর রাউন্ড বেজ সুতা দিয়ে মুড়ে দিতে হয়, তারপর আরেকটা সুতা দিয়ে ভিতরের বুনন রেডি করতে হয়। অনেক সময় বুনন এর মধ্যে ছোট ছোট পুথি দিয়ে ডিজাইন তৈরি করা হয়। সর্বশেষে বিভিন্ন রঙের পুথি এবং পালক দিয়ে সাজানো হয়। প্রতিটি ধাপের শেষে আঠা লাগানো হয় যেন এর প্রতিটি বাধুনি বেশ শক্ত ভাবে টিকে থাকে।

ড্রিমক্যাচার তৈরি করতে সময় দরকার হয় সর্বনি¤œ ১ঘন্টা তবে ডিজাইন এবং সাইজ ভেদে এটি তৈরি করতে অনেক সময় ২-৩দিন ও লেগে যায়। ড্রিমক্যাচার এর মূল্য ছোট চাবির রিং গুলোর জন্য আসে ১২০-১৮০ টাকা, মালা পেন্ডেন্ট এর জন্য ১৫০-২৮০টাকা, ডেকরেশন এর জন্য সাইজ এবং ডিজাইন অনুযায়ী ৩৫০-৩০০০ টাকা পর্যন্ত নির্ধারন করা হয়।

ড্রিমক্যাচার মূলত ল্যাটিন আমেরিকাতে প্রথম আবিষ্কার হয়, তবে এখন এটি এশিয়াতে অনেক বেশি প্রসার ঘর বা যে কোন অনুষ্টানের ডেকরেশান এর জন্য। তার হ্যান্ডপেইন্ট করা বিভিন্ন পেন্ডেন্ট বা জুয়েলারি তৈরি করার জন্য প্রথমে কাঠবেজে ডিজাইন আকা হয়, রঙ শুকিয়ে গেলে কর্ড এবং ম্যাচিং পুথির সাহায্যে পেন্ডেন্ট মালা তৈরি করা হয়। যার মূল্য নির্ধারন করা হয় ১৫০-৪৫০ এর মধ্যে। অনেক সময় ম্যাচিং আকারে শুধু মালা নয়, বরং কানের দুল, হাতের রিং, বালা, টিপ এর সেট হিসেবে তৈরি করে নিতে চান কাস্টমাররা। এক একটি পেন্ডেন্ট বানানোর জন্য ২০মিনিট থেকে ১ঘন্টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত সময় লেগে থাকে।

অরিজিনাল মুক্তার গয়নার মধ্যে তার কাজের মধ্যে ড্রিমক্যাচার এর সাথে আরো একটি পন্য। বিভিন্ন রঙ এবং শেপের অরিজিনাল মুক্তা এনে সেগুলো দিয়ে নিজের ডিজাইনে তৈরি করি মুক্তার মালা, দুল, ব্রেসলেট। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েন পার্ল, পটেটো পার্ল, বোরাক পার্ল, কেশি পার্ল ইত্যাদি। রঙের মধ্যে আসে সাদা, গোলাপি, পিংক, কালো, ল্যাভেন্ডার। রাজশাহী বাসীর কাছে মুক্তার পরিচিতি, সৌন্দর্য এবং এর দীর্ঘ সময় ব্যাবহার উপযোগিতা বুঝানোর জন্য খুব কম লাভে সেল করা হয়। যেগুলো ১০০০ থেকে ৪০০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন মালার দাম রাখা হয়, দুল ২০০-৪০০ টাকা এবং ব্রেসলেট ১৫০-৩৫০টাকা।

তরুণ উদ্যক্তা ঐশী মাহাজেবীন জানান, শখের বসে একদম শুরুতে অল্প অল্প করে গড়ে তুলেছিলাম। কিন্তু এতো অল্প সময়ে ব্যবসার ভালো অবস্থান তৈরি করতে পারবো ভাবতে পারিনি। এখন পরিবারের সবাই সহযোগিতাও করছে। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে আমি মেয়ে হয়ে আরো মেয়ের কাজের জায়গা তৈরি করে দিতে পারছি।

তিনি বলেন, ক্রাফট নিয়ে আমার কাজ বেশ পুরোনো হয়ে থাকলেও নতুন ভাবে শুরু করেছি বিভিন্ন ধরনের শাড়ি, কুর্তি, থ্রি পিস, ব্লাউজ পিস এর কাজ। তবে সবেচেয়ে বেশি সাড়া পেয়েছি ড্রিমক্যাচার তৈরিতে। এই পন্য গুলো এখন দেশের বাইরে ব্যাপক চাহিদা। হাতের তৈরির কারণে সবচেয়ে অর্ডার পাই। কিন্তু ঢাকা থেকে অর্ডার নেয় যে ব্যবসায়ীরা তারা বিদেশে পাঠাচ্ছে যা আমরা করতে পাচ্ছি না। তারা মাঝে খানে বেশি রাভবান হচ্ছে। সরকারি ভাবে যদি এই বিষয়টা দেখা হয় তাহলে আমাদের মতো তরুণরা লাভবান হবে।

তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম জানান, প্রথমে বাসায় মেয়ে পড়াশনার পাশাপাশি এই জিনিস গুলো তৈরি করতো। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে আমার মেয়ে একজন তরুণ উদ্যক্ত হয়ে উঠেছে। এখন চাকরির পড়াশনা করছে পাশাপাশি কিছু ছেলে ও মেয়ে তার অন্ডারে এই কাজের সাথে সম্পক্ত। এটা তো অনেক ভালো বিষয়।

রাজশাহী উইমেন চেম্বারের অব কমার্সের সভাপতি রোজেটি নাজনীন জানান, এখন রাজশাহীর তরুণ উদ্যক্তরা অনেক এগিয়ে রয়েছে। নতুন নতুন পণ্য তৈরি করে তারা বিদেশেও ব্যপক সাড়া পেয়েছে। ঐশীও তাদের একজন। তবে তাদের সকল পণ্য গুলো যদি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সরকারি ভাবে কার্যক্রম নেওয়া যায় তবে আরো উন্নতি হবে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল জানান, তরুণ উদক্তদের জন্য সরকার সবসময় কাজ করছে। যারা তরুণ উদ্যক্ত রয়েছে তারা যদি আমাদের কাছে প্রস্তাব দেয় সরকারি ভাবে যা যা করা দরকার সব করা হবে। তাদের পক্ষ থেকে কোন টিম আসলে আমরা তাদের প্রডাক্টের চাহিদা ও দাম বৃদ্ধি বিষয়ে কাজ করবো।

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.